পরিবারের নারীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে জঙ্গিরা


বাংলাদেশে জঙ্গিরা অভিযানের মুখে চাপে পড়ায় এখন তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে৷ বিশেষ করে বাসা ভাড়া নেয়া ও অভিযানের সময় তাদের সামনে ঠেলে দেয়ার প্রবণতা স্পষ্ট৷
default
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইরে থেকে রিক্রুটমেন্ট সীমিত হয়ে যাওয়ায় এখন পরিবারের নারী সদস্যদের ওপর ভরসা করছেন জঙ্গিরা৷
ঢাকার আশকোনা এলাকায় অভিযানের মুখে আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গির একজন জেবুন্নাহার ওরফে শীলা নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের স্ত্রী৷ আর তৃষামনি ওরফে উম্মে আয়েশা নব্য জেএমবির এখনকার প্রধান আবু মুসার স্ত্রী৷ আত্মঘাতী নারী জঙ্গি সাকিরা পলাতক জঙ্গি সুমনের স্ত্রী৷ এর আগে ঢাকার আজিমপুরে অভিযানের সময়ও নারী জঙ্গি আটক হয়েছে৷
পুলিশ জানায় হলি আর্টিজান হামলার পর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মোট ১০ জন নারী জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে এবং এরা সবাই কোনো না কোনো পুরুষ জঙ্গির স্ত্রী৷
পুলিশ আরো জানায়, হলি আর্টিজানে হামলার পর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এপর্যন্ত ৩৫ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে শতাধিক৷ নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মেজর জিয়া এবং মুসা ছাড়া বড় কোনো জঙ্গি এখন আর বাইরে নেই৷
অডিও শুনুন02:43

‘নব্য জেএমবি সরাসরি তাদের স্ত্রী কন্যাদের জঙ্গি দলে নিচ্ছে’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জেএমবি আগে নানা কৌশলে নারী সদস্য রিক্রুট করেছে৷ যেমন জঙ্গির বোনের সঙ্গে আরেক জঙ্গির বিয়ে দিয়ে অথবা অন্যকোনোভাবে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে৷ আর নব্য জেএমবি সরাসরি তাদের স্ত্রী কন্যাদের জঙ্গি দলে নিচ্ছে৷ কারণ এখন তারা সরাসরি বাসা ভাড়া নিতে পারছেনা৷ তাই স্ত্রী সন্তানদের দেখিয়ে সাধারণ মানুষ হিসেবে বাসা ভাড়া নিচ্ছে এবং স্ত্রী সন্তানদের জঙ্গি হতে বাধ্য করছে৷ এক্ষেত্রে তাদের কোনো নৈতিকতা নেই৷ নিজেদের স্বার্থে স্ত্রী সন্তানদের এক ধরণের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন যেহেতু বাইরে রিক্রুটমেন্টের সুযোগ কমে গেছে তাই তারা পরিবারের সদস্যদেরই জঙ্গি বানাচ্ছে৷ এটা তারা তাদের নিরাপত্তা এবং বিশ্বস্ততার জন্যও করছে৷''
জঙ্গিরা এখন সপরিবারে স্ত্রী-কন্যা এবং সন্তানসহ আস্তানা গাড়ছে৷ শুধু স্ত্রী নয়, কিশোর-কিশোরী সন্তানদেরও জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে৷ পুলিশ জানায়, আশকোনা অভিযানে নিহত আফিফ কাদেরি আজিমপুরে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরির কিশোর ছেলে৷ এই কিশোর ছেলেকেও জঙ্গিবাদে দীক্ষিত করা হয়েছিল৷
অডিও শুনুন02:24

‘আটক নারী জঙ্গিদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে না’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এপর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে নারী জঙ্গিরা হয় কোনো জঙ্গির স্ত্রী, বোন বা কন্যা৷ তারা পারিবারিকভাবে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছে৷ আশকোনায় নারীজঙ্গি সাকিরার আত্মঘাতী হওয়া ছাড়া আরা কোনো প্রকাশ্য তৎপরতা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি৷ তারা সরাসরি আক্রমণে অংশ নেয়নি৷ তবে তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ৷''
তিনি বলেন, ‘‘দুই নারী জঙ্গি রিমান্ডে আছে৷ আমরা জানার চেষ্টা করছি নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে হামলার কোনো পরিকল্পনা ছিল কিনা৷ এছাড়া তাদের মোটিভেশনের নতুন কোনো ধরণ আছে কিনা৷''
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘জঙ্গি পরিবারের বাইরে নারী জঙ্গিদের কোনো খোঁজ আমরা এখনো পাইনি৷ ফলে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিলেও ভীত নই৷ হয়তো এটা জঙ্গিদের টিকে থাকার নতুন কৌশল৷''
নারী জঙ্গিদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় ৬ শিশুও উদ্ধার হয়েছে৷ তারা জঙ্গিদের সন্তান৷ তাদের মধ্যে আশকোনায় আত্মঘাতী জঙ্গি সাকিরার এক শিশু সন্তান গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷ মাসুদুর রহমান জানান, ‘‘শিশুদের পুনর্বাসন এবং ডি-ব়্যাডিকালাইজেশনের কাজ চলছে৷ আর আটক নারী জঙ্গিদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে না৷ এমনকি লাশ নেয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না৷''
mongsai79@gmail.com

Comments