সিরিজ হারল বাংলাদেশ



ইমরুল কায়েসের হাফসেঞ্চুরি ও সাব্বির রহমানের ব্যাটে ভালো সম্ভাবনাই জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৭৫ রানের জুটিটি ভাঙতেই বিপদে পড়ে সফরকারীরা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৫২ রানের লক্ষ্যে নেমে ৭৯ রানের ব্যবধানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছে তারা। ৪২.৪ ওভারে ১৮৪ রান তুলতেই সব উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সিরিজও হেরে গেল তারা।
ক্রাইস্টচার্চের মতো নেলসনেও ভাগ্য বদল হয়নি বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ম্যাচেও হারের অভিজ্ঞতা হলো সফরকারী দলের। ক্রাইস্টচার্চে ৭৭ রানে হারের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ টানা ওয়ানডে হারল ৬৭ রানে। নেলসনে বৃহস্পতিবার ম্যাচটি জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে নিশ্চিত করল নিউজিল্যান্ড।
নেলসনের মাঠে পরে ব্যাটিং করা দল সব সময়ই বাড়তি সুবিধা পায়। বৃহস্পতিবার এমন সমীকরণকেও বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা!
২৫২ রানের জবাবে খেলতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস ধীরস্থির শুরু এনে দেন। দলীয় ৩০ রানে তামিম ফিরে গেলে ক্রিজে নামেন সাব্বির। খুব ভালোই খেলছিলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান।
কিন্তু ইমরুলের সঙ্গে ভুলবোঝাবুঝিতে রান আউট হলে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের ছন্দপতনটা তখনই ঘটে। ব্যক্তিগত ৩৮ রান করে সাব্বির ফিরে গেলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ছন্নছাড়া ব্যাটিং করে সাজঘরে ফিরে যান।
ততক্ষণে অবশ্য ওপেনার ইমরুল তার ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে টিম সাউদির বলে নাইল ব্রুমের তালুবন্দী হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি। তার আগে অবশ্য সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হয়ে যান। মূলত স্বাগতিক অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বাংলাদেশের মূল অর্ডারে ধস নামান দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে।
অভিষেক ম্যাচে নামা নুরুল হাসান সোহান ও অধিনায়ক মাশরাফি শেষদিকে চেষ্টা চালান।  মাশরাফি ১৯ বলে ১৭ রান করে রান রেট কিছুটা বাড়িয়ে দেন।  কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে নুরুল যখন আউট হন বাংলাদেশ তখন জয় থেকে দূরে ৬৮ রানে। বাংলাদেশ অলআউট হয় ৪২.৪ ওভারে ১৮৪ রানে। সোহান ৩১ বলে ১ চার ও ১ ছয়ে ২৪ রানের ইনিংস খেলেন।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে কেন উইলিয়ামসন সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোরে টসে জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। মাশরাফির সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল সেটা বোঝা গেলো কিছু মুহূর্ত পরেই।
নেলসনে খুব ভালোভাবেই কিউইদের চেপে ধরেছে মাশরাফিরা। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলাররা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে। মাঝে অবশ্য নাইল ব্রুম চতু্র্থ উইকেটে জেমস নিশামের সঙ্গে ৫১ ও ষষ্ঠ উইকেটে লুক রঞ্চির সঙ্গে ৬৪ রানের জুটি না বাঁধলে অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত নাইল ব্রুমের সেঞ্চুরিতেই লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারে কিউইরা।
ইনিংসের প্রথম ওভারে মাশরাফি কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে ফিরিয়ে শুভ সূচনা করেন। শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান টম ল্যাথাম ও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তখনই আঘাত হানেন গতি তারকা তাসকিন আহমেদ। উইলিয়ামসকে ব্যক্তিগত ১৪ রানে সাকিবের তালুবন্দী করে সাজঘরের পথ ধরান। সঙ্গী হারিয়ে সাকিবের বলে ফিরে যান ল্যাথামও। তিনি ২২ রান করে সাকিবের ঘূর্ণিতে লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন।
ততক্ষণে অবশ্য ক্রিজে নেমে পড়েন ব্রুম। বৃহস্পতিবার তার ব্যাট না হাসলে বিপদই ছিল কিউইদের। শেষ পর্যন্ত ব্রুম ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন। চতুর্থ ও ষষ্ঠ উইকেটে ৫০ ছাড়ানো দুটি জুটির পাশাপাশি বেশ কিছু ছোটখাটো জুটি গড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। এটা ব্রুমের ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরি।
কিউই অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লুক রঞ্চি ৩৫, জেমস নিশাম ২৮ ও টম ল্যাথাম ২২ রান করেছেন।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি ৪৯ রান খরচ করে তিনটি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া তাসকিন আহমেদ ও সাকিব আল হাসান প্রত্যেকে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন। অভিষিক্ত পেসার শুভাষিশ ও স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

Comments