১৯৯২ সালে খাগড়াছড়িতে ১২০০’র অধিক সংখ্যালঘুকে হত্যা করা হয়

 


 চট্রগ্রাম:: খাগড়াছড়ির লোগাং গুচ্ছগ্রামে গত ১০ এপ্রিল ’৯২ অন্যায়ভাবে বসতিস্থাপনকারী কিছু বাঙালী, কিছু আনসার ও ভি.ডি.পি. এবং রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর যৌথ অপারেশনে এক ব্যাপক গণহত্যা সংঘটিত হলো পাহাড়ী জনতার উপর। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও সে সময়ে পাহাড়ী জনগণের বাৎসরিক উৎসবে আমন্ত্রিত কিছু বাঙালী বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, রাজনৈতিক নেতাদের সূত্রে জানা গেছে ১২০০ বা আরো অধিক পাহাড়ী জনতাকে হত্যা করা হয়েছে।
সমস্ত গ্রামটিকে ঘিরে পাহাড়ী জনতার উপর সেনাবাহিনী করেছে ব্রাশ ফায়ার, হাজার হাজার ঘরবাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, পাহাড়ী শিশুদের সেই আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী বাঙালী, যাদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে বাঙালী সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনকারী ফ্যাসিস্ট সেনাবাহিনী, তারাও পাহাড়ী জনতার উপর রাম দা, কুড়াল, খন্তা, বর্শা প্রভৃতি ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করে।
এভাবে সংঘটিত গণহত্যা বাঙালী জাতীয় দৈনিকগুলো কেবল চেপেই গেছে তা-ই নয়, ১১ এপ্রিল প্রচার করেছে, শান্তিবাহিনীর আক্রমণে ১০ জন পাহাড়ী ও ১জন বাঙালী নিহত হয়েছে। এই চরম বেহায়াপনা বুর্জোয়া পত্রিকাগুলোর গণবিরোধিতাই প্রমাণ করেছে। পানছড়ি থেকে ফিরে এসে বামমনা বুদ্ধিজীবী বিপ্লব রহমান ও প্রিসিলা রাজ ‘প্রিয় প্রজন্ম’ পত্রিকায় একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়েছেন, বৈশিষ্টমুনি ………. গ্রামে ফিরে দেখতে পান ১৮টি লাশ পোড়ানো হচ্ছে। ৫০০ ঘরের মধ্যে অধিকাংশ ঘরেই অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ……… স্থানীয় সূর্যতরুণ উদয় ক্লাবে আরো ১৪৭টি লাশ সরকারী হেফাজতে রাখা হয়েছে। ‘বৈশিষ্টমুনি তার স্ত্রীর লাশ ফেরৎ চেয়েও পাননি।’ শত শত লাশ ট্রাকে করে আর্মীরা সরিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপেন চাকমা (১৭)-এর ৯ সদস্যের পরিবারে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় এলাকায় যাওয়া বাঙালী ডাঃ জামাল উদ্দিনের ভাষ্যমতে, তিনি ৩০০ শত লাশ গুণতে পেরেছিলেন, তারপর তাকে আর গুণতে দেয়া হয়নি।
এভাবে একের পর এক গণহত্যা চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। মুজিব-জিয়া-এরশাদ আমলের মতই ‘গণতান্ত্রিক’ খালেদা সরকারও এ ধরনের বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়ে আসছে, যার অনেকগুলোই হয়েছে গোপনে, আমরা জানতেও পারিনি। এই ফ্যাসিবাদী হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে পাহাড়ী জনতা তাদের এবারের বাৎসরিক উৎসব (বৈ-সা-বি) বর্জন করেছে। আঃ লীগ, ৫ দল- এরা কেউই এ বর্বরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার নয়, গোলাম আজমের প্রতিবাদী বিচারের আয়োজন করল যারা- তারা এ প্রশ্নে ‘গণআদালত’ ডাকবার কথা বলছে না, বলবে না। কারণ একটাই, এ প্রশ্নে, সরাসরি কাঠগড়ায় উঠতে হয় খুনী লুণ্ঠনকারী দেশের সকল জাতি জনতার প্রধান শত্রু পুরা আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণী, তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ও বাহিনীকে।
তাই এ দেশে যে বুর্জোয়ারা ’৭১-এর চেতনা-মানবতা ইত্যাদির জিগির তোলে এরা সবাই আসলে উপরোক্ত উপাদানেরই দালাল- এরাও পাক-ফ্যাসিস্ট ও গোলাম আযমদের মতই সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদেরই দালাল নব্য রাজাকার, খুনী, নারী ধর্ষণকারী। তাই বাঙালী শ্রমিক-কৃষক-জনতার কর্তব্য তাদেরও শত্রু বাঙালী আমলা-মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণী ও তাদের সরকারের পাহাড়ী জনতার উপর জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সামিল হওয়া। এই বীভৎস হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারী খালেদা সরকার, সেনাবাহিনীসহ পুরা রাষ্ট্রযন্ত্র খুনী, লুণ্ঠনকারী ও সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের দালাল।

Comments