‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে’ দোষী হতে পারে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ঘটনায় দেশটি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে। জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকারবিষয়ক তদন্ত কর্মকর্তা এ কথা বলেছেন। সম্প্রতি টাইম সাময়িকীতে প্রকাশিত নিবন্ধে ওই কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়। 
মিয়ানমারে জাতিসংঘের নিয়োগ করা মানবাধিকারবিষয়ক কর্মকর্তা ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমারের ভেতর ও আশপাশের এলাকা থেকে তিনি যেসব তথ্য পেয়েছেন, এতে দেখা গেছে যে দেশটির সরকার যা বলছে, এর সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। তিনি বলেন, প্রচুরসংখ্যক এমন সব ছবি, ভিডিও আর গ্রাফিকচিত্র পাওয়া গেছে, যার মধ্যে বিশৃঙ্খলার স্পষ্ট আলামত রয়েছে। 
পরিস্থিতি দেখে ইয়াংহি লি মন্তব্য করেছেন, ‘এটা যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, এ ব্যাপারে আমরা একমত হতে পারি।’
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে মিয়ানমার। অক্টোবরের শুরুতে তিনটি সীমান্ত চৌকিতে হামলায় ৯ জন পুলিশ নিহত হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেটাকে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলা উল্লেখ করে এই ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। 
লাখো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং রোহিঙ্গা গ্রামে মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও মিয়ানমার তা অস্বীকার করেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা প্রান্তিক অবস্থানে গিয়ে ঠেকেছে। নাগরিকত্ব না পেয়ে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে। ২০১২ সালে আরাকান বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের শিকার হয়ে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গা স্থানচ্যুত হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ওই ঘটনায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকে হয় বৌদ্ধদের পক্ষে অবস্থান অথবা সহিংসতায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার অভিযোগ করেছিল। 
আরাকানে আবার সহিংসতা শুরু হওয়ায় গত কয়েক মাসে প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। 
ইয়াংহি লি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রাখাইনে যাওয়ার সুযোগ দিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নভেম্বরের শুরুতে সরকারি তত্ত্বাবধানে বিদেশি কূটনীতিক ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন লি। তিনি বলেন, ওই পরিদর্শনে কেউ সন্তুষ্ট ছিলেন না। ওটা ছিল একটা নিয়ন্ত্রিত পরিদর্শন। নিরাপত্তা বাহিনীর জোর উপস্থিতি থাকার পরও কিছু লোক প্রতিনিধিদলের কাছে আসার চেষ্টা করে এবং কথা বলার চেষ্টা করে। পরে আমরা শুনতে পেয়েছিলাম, এসব লোক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিল। তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়
৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ ১৪টি বিদেশি কূটনৈতিক মিশন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আরকানে ‘পুরোপুরি ও অবাধ’ প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রতি। এতে উল্লেখ করা হয়, আরাকানে প্রায় দুই মাস ধরে কোনো সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। সেখানে অপুষ্টির শিকার শিশুসহ লাখো মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।

Comments