রোমান্টিক ভালোবাসার কল্পকাহিনী আপনার স্বাস্থ্য ধ্বংস করছে!

রোমান্টিক ভালোবাসার কল্পকাহিনী আপনার স্বাস্থ্য ধ্বংস করছে!
রোমান্টিক ভালোবাসার ধারণাটি হলো এমন, যেখানে দুজন নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূর্ণতার জন্য এবং খাঁটি রুপটি অর্জনের জন্য মিলিত হন। এর পরস্পরের সন্ধানে আকুল হয়ে থাকেন।
কিন্তু এই প্রশান্তি খুব কম লোকই পেয়ে থাকেন। কারণ এটি একটি কাল্পনিক ধারণা। সেই গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর সময়কার ধারণা। 
গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী যথাযথ যুগলদেরকে একসঙ্গে যুক্ত করে সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর তাদেরকে কেটে দুই টুকরা করা হয়। এরপর এক অংশ আরেক অংশকে খুঁজে পায় ভালোবাসার আকাঙ্খার মাধ্যমে। 
এই মিথ জনপ্রিয় সংস্কৃতি, প্রেম কাহিনী এবং রোমান্টিক কমেডিগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এটি আমাদের সামাজিক আত্ম-পরিচয়কেও প্রভাবিত করে। এমনকি অনেক সময় আমরা অবচেতনেও আমাদের “হারিয়ে যাওয়া অর্ধেকের” সন্ধান করতে থাকি। কিন্তু বিয়ে বিচ্ছেদের উচ্চ হার থেকে প্রামণিত হয় এমন আদর্শ কোনো জীবন সঙ্গীর ধারণাটি আসলে অবাস্তব। 
আজকাল অনেকেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় তাদের আদর্শ সঙ্গী বা সঙ্গিনীর খোঁজ করেন। এমনকি নিঃসঙ্গতা কাটাতেও অনেকে অনলাইনে ডেটিং, প্রেমালাপ, সেক্সটিং করে সময় কাটান। বাস্তব জীবনে অন্তরঙ্গতার অভাব বা কাউকে হারানোর দুঃখ কাটাতেও অনেকে অনলাইনে ঢু মারেন। 
সাইবার দুনিয়ায় আমরা যেমন খুশি তেমনই এবং যা ইচ্ছা করে তাই হতে পারি। এটি আমারেদ আনন্দ দেয়। কিন্তু এটি আমাদেরকে কল্পনা বিলাসে প্রলোভিত করে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের অবচেতনে থাকা এবং এমনকি আমাদের অজানা আকাঙ্খাগুলোকেও তাৎক্ষণিকভাবে তুষ্ট করি। 
কিন্তু এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার প্রতি কেউ সহজেই আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। কারণ বাস্তব দুনিয়ার ভালোবাসা এর সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না। ফলে অনেকের জন্যই বাস্তবতায় ফিরে যাওয়া কঠিন এমনকি অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইন্টারনেটে আসক্তি এবং অবিশ্বস্ততা বেড়ে চলার ঘটনা অন্তত তেমনটিই প্রমাণিত হয়। 
এর ফলে আবার নানা আবেগগত বিশৃঙ্খলাও দেখা দিতে পারে। যেমন, মানসিক অবসাদ, হতাশা, ক্ষোভ, বেদনা, ঝগড়া-ঝাটি, প্রতিশোধমূলক পর্ন, বিয়ে বিচ্ছেদ, নেশাসক্তি, অতিভোজন বা ভোজনহীনতা। অবসাদ এবং ভগ্ন হৃদয় (প্রেম রোগ) এর সঙ্গে মানসিক (অবসাদ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার, ইনসমনিয়া) এবং শারীরিক (ক্লান্তি) স্বাস্থ্যহানির বিষয়টিও বহুল প্রমাণিত। 
প্রেমের পরিণতি
দীর্ঘমেয়াদি পরিণতিগুলো খুব কমই পরিচিত, কিন্তু আমরা তা অনুমান করতে পারি। আমরা জানি যে, আমাদের সামাজিক সম্পর্ক এবং চারপাশের পরিস্থিতির গুনগত মান আমাদের মস্তিষ্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। 
সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সামাজিক অভিজ্ঞতা, বংশগতির অভিব্যক্তি, স্নায়ুজৈবিক পরিবর্তন এবং আচরণের ভিন্নতার মধ্যে একটি গভীর যোগসাজশ আছে। অসংখ্য সাক্ষ-প্রমাণ থেকে এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যায় কীকরে সমাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি আমাদের মনে প্রবেশ করে এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদেরকেও প্রভাবিত করে। অন্য কথায় আমাদের সামাজিক অভিজ্ঞতার দ্বারা সংঘটিত শারীরিক প্রভাব আমাদের বংশধরদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
এখন প্রশ্ন হলো, যদি আবেগ, সচেতন চিন্তা এবং অবচেতন বিশ্বাসসমূহ আমাদের সামজিক পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয় এবং আমাদের বংশগতিকে প্রভাবিত করে তাহলে রোমান্টিক ভালোবাসার গুজবের সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি পরিণতিটা কী?
এই প্রক্রিয়া যদি মানসিক বিশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এবং প্রেমরোগ (ভগ্ন হৃদয়) থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দুটোকে কী সংযুক্ত মরে করা যায়? বিষয়টি আমরা এখনো পুরোপুরি জানি না। 
তবে আমরা এটা জানি যে, সামাজিকভাবে নির্মিত রোমান্টিক ভালোবাসাও বিয়ের ধারণা আমাদেরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিশুকাল থেকেই এগুলোর যাত্রা শুরু হয় এবং আমাদের বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও তা অব্যাহত থাকে। 
গুগলে “রোমান্টিক লাভ” লিখে সার্চ দিন এবং দেখুন কী আসে। আমরা সচেতনে এবং অবচেতনে আমাদের ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে প্রত্যাশাগুলো গড়ে তুলি। এবং সেগুলো বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই প্রত্যাশাগুলো যখন বাস্তবে অর্জন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন মানসিক চাপে আক্রান্ত হওয়াটা অনিবার্য হয়ে উঠে। আরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, হৃদযন্ত্র এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই চাপের প্রভাব সর্বজনবিদিত।
সুতরাং এখনই সময় কাল্পনিক ভালোবাসার পেছনে ছোটা বন্ধ করার। ভালোবাসার তৎপরতাগুলো যারা সেগুলো বিনিময় করে তাদের মতোই বৈচিত্রপূর্ণ। এগুলো অনেক সময়ই হয়তো দেখতে প্রাণহীন মনে হয় কিন্তু প্রকৃতই যত্নশীল। আমরা যদি রোমান্টিক ভালোবাসার এই মিথ ভাঙ্গতে পারি তাহলে আমরা সম্পর্ক বিষয়ে সত্যিকার অর্থেই বাস্তব প্রত্যাশা লালন করতে সক্ষম হব এবং পরিণতিতে আরো সুখি এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারব। 
সূত্র: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
mongsai79@gmail.com

Comments