উভয়সংকটে বিএনপি

উভয়সংকটে বিএনপিঅনুসন্ধান কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচন কমিশনারের নাম প্রস্তাব করা নিয়ে উভয়সংকটে পড়েছে বিএনপি। দলটির নেতাদের মধ্যে রয়েছে এ নিয়ে নানা সংশয়ও। দলের একটি পক্ষ মনে করছে, সার্চ কমিটির কাছে নাম দিলে কোনো কাজ হবে না। সেখান থেকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। আরেক পক্ষের মত, নাম না দিলে সরকারি দল ও নাগরিক প্রতিনিধিরা বিএনপিকে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী করবে, তা আজ রোববার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। নাম দেওয়ার পক্ষে যেমন দলটির নেতাদের মত আছে, তেমনি না দেওয়ার পক্ষেও অনেক নেতার অবস্থান। রাতের বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি মঙ্গলবারের মধ্যে ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য পাঁচটি করে নাম চেয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ নাম চাওয়ার বিষয়টিকে নতুন কিছু বলে মনে করছেন না। তিনি বলেন, গতবারও নাম চাওয়া হয়েছিল। আগের সার্চ কমিটি যেভাবে কাজ করেছিল, এবারের কমিটিও সেই ধারায় কাজ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতারা বলছেন, নাম দেওয়া না–দেওয়া নিয়ে তাঁরা সম্ভাব্য দুটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন। একটি হলো তাঁরা মনে করছেন, নাম দিলেও কোনো লাভ হবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে বিএনপি সার্চ কমিটি গঠনের জন্য একটি কাঠামো প্রস্তাব করেছিল। সেই সঙ্গে ১০ জনের নামও তারা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির কোনো প্রস্তাব আমলে নেওয়া হয়নি। দলটির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, নাম চাওয়ার বিষয়টি লোক দেখানো। এখন নির্বাচন কমিশন করার জন্য বিএনপি কারও নাম প্রস্তাব করলে সেটিও আমলে নেওয়া হবে না। বরং শুরুতেই তাদের বাদ দেওয়া হবে। তাই নাম প্রস্তাব করার চেয়ে বরং চুপ থাকাই ভালো। এর আগেও কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলের কাছ থেকে নাম চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছাতেই বর্তমান কমিশন গঠিত হয়েছিল বলে বিএনপি মনে করে। এবারও আওয়ামী লীগের ইচ্ছাতেই কমিশন গঠিত হবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিএনপির নেতারা এ–ও মনে করছেন, অনুসন্ধান কমিটির আহ্বানে সাড়া না দিলেও সমস্যা। তাতে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিএনপি যদি কারও নাম প্রস্তাব না করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে কমিশন গঠন করা হলে বিএনপি কথা বলার সুযোগ পাবে না। উল্টো সরকার বিএনপিকে দোষারোপ করার সুযোগ পাবে। তাই সরকারকে সে সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। তবে নাম প্রস্তাবের পক্ষের নেতারাও মনে করেন, বিএনপি কারও নাম প্রস্তাব করলে তা মানা হবে না।
নাম দেওয়ার পক্ষে নেতাদের আরেকটি যুক্তি হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাতে সব দল নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে বলে বলা হয়েছিল। এখন বিএনপি নাম প্রস্তাব না করলে নিজেদের প্রস্তাবের স্ববিরোধিতা হয়ে যায়। অবশ্য সে প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন যে প্রক্রিয়ার নাম চাওয়া হয়েছে, তা নিয়েও বিএনপির কোনো কোনো নেতার আপত্তি আছে।
আজ রাতের বৈঠকের আগে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নেতারা নাম উদ্ধৃত হয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাওয়া ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে শেষ পর্যন্ত এক ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফল ঘটতে পারে। তিনি বলেন, অতীতে নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে সংলাপ হয়েছে, তার ফলাফল ছিল শূন্য। অতীতে অনুসন্ধান কমিটি বাটন ছিল প্রধানমন্ত্রীর হাতে।
বিএনপি সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রিজভী বলেন, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার সময়ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সবাই এ ব্যবস্থা রাখার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তা বাতিল করা হয়। এবারও সে রকমই হবে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
mongsai79@gmail.com

Comments