- Get link
- X
- Other Apps
একদিন আগেও উড়তে থাকা শ্বেত পায়রাগুলি হয়ে গেল নির্জীব; ডানা মেলার সামর্থ্য নেই, স্রেফ একটু-আধটু হাওয়ায় দুলুনি! খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষার এই বদলই যেন বাংলাদেশের পারফরমান্সের প্রতিচ্ছবি। প্রথম ইনিংসে স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়া টেস্ট ম্যাচের শেষটা হলো দুঃস্বপ্নের বিভীষিকায়।
চোটের ছোবল বয়ে এনেছে দুর্ভাগ্য। তবে স্বপ্নের কবর খোঁড়া হয়েছে আসলে অন্য ব্যাটসম্যানদের আত্মঘাতী শটে। মুশফিক-ইমরুলের বীরোচিত নিবেদনের ইনিংসটিই হয়ে রইল সতীর্থদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আরেকটি নিদর্শন। উপহারগুলো সানন্দেই গ্রহণ করল কিউইরা। ওই মঞ্চেই হলো জয়োৎসব।
চতুর্থ দিন চা বিরতির পরও ম্যাচ এগিয়ে যাচ্ছিলো নিশ্চিত ড্রয়ের পথে। সেই ম্যাচই নিউ জিল্যান্ড ৭ উইকেটে জিতে নিল শেষ দিন চা বিরতির পর। কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি ছোঁয়ার সতর্কতায় শেষ বেলায় একটু বাড়ল ম্যাচের বয়স। জয়ের সময় তবু বাকি ছিল ১৭ ওভারের বেশি!
শেষটা দেখে কে বলবে, এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসেই রান উৎসব করেছে বাংলাদেশ, লুটোপুটি খেয়েছে রেকর্ড। শেষও হয়েছে রেকর্ড গড়ে। সে রেকর্ড গর্বের নয়, বিস্ময় আর হতাশার। যেটিতে খুঁজতে হয় মুখ লুকানোর আড়াল। ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে এত রান করে টেস্ট ইতিহাসে হারেনি আর কোনো দল। ১২৩ বছর পুরোনো বিব্রতকর রেকর্ড থেকে মুক্তি পেল অস্ট্রেলিয়া।
হারের প্রাথমিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছিল আগের দিনই। দেড়শ ওভার কিপিং করার পর ব্যাটিংয়ে নেমে রান নিতে গিয়ে চোটে মাঠ ছাড়েন ইমরুল কায়েস। বাজে শটে ফেরেন তামিম-মাহমুদউল্লাহ। সেই আয়োজন পূর্ণতা পেয়েছে শেষ দিনে সাকিব-মুমিনুল-সাব্বিরদের হাত ধরে।
প্রথম ইনিংসের নায়ক সাকিব ‘ড. জেকিল’ থেকে হয়ে গেলেন ‘মিস্টার হাইড’। দিনের অষ্টম বলেই ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে বিপদে ফেলে এলেন দলকে। ফাঁদের প্রলোভন এড়ানোর মানসিক দৃঢ়তা ছিল না মুমিনুল হকের। সাব্বির লড়াই করেছেন দারুণ, কিন্তু যুদ্ধ জয়ের নায়ক হতে পারেননি। দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময় ছেড়ে এসেছেন লড়াইয়ের মঞ্চ।
৫৭ ওভারে ২১৭, ওভার প্রতি ৩.৮০ রান তোলা শেষ দিনে সহজ হওয়ার কথা ছিল না। এখানেও ব্যাটসম্যানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদার বাংলাদেশের বোলাররা। ফিল্ডিং আর শরীরী ভাষা তো হতশ্রী। ওভারপ্রতি সাড়ে পাঁচ রান তুলেছে নিউ জিল্যান্ড, দুই শতাধিক রানে যেটি টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় দ্রুততম রান তাড়া।
রান তাড়ায় নাটকীয় কিছুর আশা অবশ্য জেগেছিল ক্ষনিকের জন্য। পরপর দুই ওভারে মিরাজ ফিরিয়েছিলেন দুই কিউই ওপেনারকে। এরপর যখন আরও চেপে ধরার কথা, খাপছাড়া বোলিংয়ে উল্টো আলগা হলো ফাঁস।
প্রথম ইনিংসে অর্ধশতকের পরই আউট হয়ে নিশ্চয়ই নিজের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন উইলিয়ামসন। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রমাণ করলেন কেন তিনি সময়ের সেরাদের একজন। চাপের লেশমাত্র ছিল না ব্যাটিংয়ে। ছিল দারুণ কর্তৃত্ব ও নিশ্চয়তা। যেন জানতেন, দলের জয় নিয়েই ফিরবেন। মুগ্ধতা জাগানিয়া সব শট তো বরাবরের ‘ট্রেডমার্ক’।
ম্যাচ জেতানো জুটিতে অধিনায়কের সঙ্গী রস টেইলর, প্রথম ইনিংসে যিনি ভালো শুরুটা ফেলে এসেছিলেন মাঠে। শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি এদিনও, তবে যখন ফিরেছেন তখন ম্যাচ একরকম শেষই। নিজে করেছেন ৬০, উইলিয়ামসনের সঙ্গে ১৬৩ রানের ম্যাচ জেতানো জুটিতে রান এসেছে ওভারপ্রতি সাড়ে ছয় করে!
টেইলরের বিদায়ের পরপরই মিরাজকে সুইপ করে উইলিয়ামসন ছুঁলেন পঞ্চদশ সেঞ্চুরি। মাত্র ৮৯ বলে, রান তাড়ায় যেটি টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। বেসিন রিজার্ভে তখন করতালির জোয়ার। শেষ দিনে গ্যালারি ছিল উন্মুক্ত, দর্শকও সবচেয়ে বেশি। পরের বলেই জয়, আরও উচ্চকিত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে তালির স্রোত।
বাংলাদেশের কাছে ওই তালি পরাজয়ের ধ্বনি। স্টেডিয়ামের কোল ঘেষে থাকা মাউন্ট ভিক্টোরিয়ার চূড়া থেকে আরও উঁচুতে উঁকি দিচ্ছিল যে স্বপ্ন, শেষ দিনে সেটিই মুখ থুবড়ে পড়েছে বেসিন রিজার্ভের সবুজ মখমলে। ঘাসের স্পর্শও কোমল, তবে যন্ত্রণাটা তীব্র!
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৫৯৫/৮ ইনিংস ঘোষণা
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৫৩৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৬০
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩৯.৪ ওভারে ২১৭/৩ (লক্ষ্য ৫৭ ওভারে ২১৬) (ল্যাথাম ১৩, রাভাল ১৬, উইলিয়ামসন ১০৪*, টেলর ৬০, নিকোলস ৪*; কামরুল ০/৩১, মিরাজ ২/৬৬, তাসকিন ০/৩৮, সাকিব ০/৩০, শুভাশীষ ১/৩২)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭ উইকেট জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: টম ল্যাথাম
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment