রাউজানে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে গলাটিপে হত্যা

 জাহেদুল আলম রাউজান
রাউজান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের শাহনগর এলাকায় মিনু আকতার (৩০) নামের এক গৃহবধূকে ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবি পূরণ না করায় স্বামী, ভাসুর ও শাশুড়ি মিলে গলাটিপে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার পর থেকেই পালিয়ে গেছে পরিবারের সদস্যরা। তবে নিহতের দুই জা’র দাবি স্বামীর সাথে ঝগড়ার পর মিনু ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে। অবশ্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাসহ এলাকাবাসীর ধারণা, এটি আত্মহত্যা নয়, নির্যাতনে হত্যা হতে পারে। গতকাল (রবিবার) সকালে এ ঘটনাটি ঘটে উপজেলার শাহনগর এলাকার রাজ মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ি প্রকাশ মাঝের বাড়িতে। নিহত মিনু ওই এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে দুবাই ফেরৎ মো. এসকান্দরের স্ত্রী। তার বাপের বাড়ি হাটাহাজারী উপজেলার ছিপাতলী গ্রামের ইব্রাহিম সওদাগরের বাড়িতে। তার বাবার নাম মো. ইব্রাহিম মিয়া।
নিহত গৃহবধূর ছোট ভাই সাইফুদ্দিন বলেন ‘তিনবছর আগে আমার বোনের সাথে বিয়ে হয় রাউজানের শাহনগরের নুরুজ্জামানের ছেলে দুবাই প্রবাসী এসকান্দরের সাথে। বিয়ের পর থেকে এসকান্দর কিছুদিন পর পর যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। বাড়িতে আসলে এ অজুহাতে আমার বোনকে সবসময় মারধর করতো। একমাস আগে এসকান্দর প্রবাস থেকে এসে আমার বোনকে বলে ৫ লাখ টাকা বাপের বাড়ি থেকে এনে দিতে। এ অজুহাতে বেশ কয়েকবার তাকে মারধর করে স্বামী ও তার স্বজনরা। গতকাল (রবিবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একই দাবি নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয় মিনুর। এসময় স্বামী এসকান্দর, শাশুড়ি শাহেদা বেগম ও ভাসুর মোস্তফা মিলে মিনুকে নির্যাতনের পর গলাটিপে হত্যা করে লাশ তার শোবার ঘরে মাত্র ৫/৬ ফুট বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে দেয়। বেলা ১২টার পর আমাদের খবর দেয়া হয় আমার বোন নাকি ফাঁসি খেয়েছে। এরপর আমরা ছুটে আসি’।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার আরেফিন আজিম বলেন ‘বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে মিনু আকতারকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার শাশুড়ি শাহেদা বেগম। তাকে মিনুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানানোর পর কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে জিজ্ঞেস করলে এটি আত্মহত্যা বলে দাবি করেন তিনি। এরপর থানার ওসিকে খবর দেয়ার পরপরই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান নিহতের শাশুড়ি শাহেদা। মিনুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মোজাফফর আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। কারণ মিনু আকতারের মুখে, গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল মিনুর শ্বশুর বাড়িতে গেলে নিহতের দুই জাঁ রুজি আকতার ও পপি আকতার ছাড়া আর কাউকে ঘরে পাওয়া যায়নি। স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুরসহ অন্যরা ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। এই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ওই দুই জা’র কাছ থেকে জানতে চাইলে তারা বলেন ‘সকালে স্বামী এসকান্দরের সাথে কোন এক কারণে ঝগড়া হয় স্ত্রী মিনুর। এরপর স্বামী এসকান্দর বাইরে চলে গেলে মিনু তার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর মিনুকে শাশুড়ি ডাকলে তার কোন সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় রুমে ঢুকে দেখা যায়, মিনু খাটের উপর দাঁড়িয়ে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এরপর স্বামী এসকান্দরকে খবর দিলে সে এসে দেহ নিচে নামানোর পর হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ প্রতিবেশী বৃদ্ধা ছখিনা বেগম বলেন ‘৪/৫ দিন ধরে স্বামী স্ত্রীর সাথে একেরপর এক ঝগড়া হতে শুনেছি।’ তবে প্রতিবেশী নারী পুরুষদের অনেকের দাবি, এটি আত্মহত্যা হতে পাওে না। কেননা লাশের মুখে, গলায় আঘাতের কারণে কালো দাগ হয়ে গেছে।
এদিকে ঘটনাস্থল শোবাররুমে এলাকার লোকজনসহ গেলে দেখা যায়, যে শোবারঘরে মিনু আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করছে দুই জা, তা রহস্যজনক বলে মনে করছে স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দারা বলেন ‘মিনুর শোয়ার খাট (চৌকি) থেকে উপরের নড়বড়ে বাঁশের ছাদের দূরত্ব মাত্র ৫/৬ ফুট। সেখানে দাঁড়িয়ে ওড়না পেঁছিয়ে আত্মহত্যা করাটা অস্বাভাবিক’।
এ ব্যাপারে লাশ সুরতহালকারী থানার অফিসার সাইমুল বলেন গতকাল ‘বিকেল ৪টার দিকে মিনুর লাশ হাসপাতাল থেকে রাউজান থানায় আনা হয়েছে। তবে কিভাবে মারা গেছে তা এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারছি না। কারণ লাশের মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি এখনো।’ এ ব্যাপারে নিহত মিনুর ছোট ভাই সাইফুদ্দিন জানান, ‘এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, নিহত মিনুর আড়াই বছর বয়সী নিশা নামের এক কন্যা সনন্তান রয়েছে।
mongsai79@gmail.com

Comments