আলুটিলা ট্র্যাজেডি ।। চিং জানে তাঁর ‘কাটা পা রাখা আছে ফ্রিজে’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
১১ বছরের শিশু চিং এখনো স্বপ্ন দেখে স্কুলে যাওয়ারবন্ধুদের সাথে খেলার করার। এখন পর্যন্ত সে জানে ঠিক আগের মত হাঁটতে পারবে । সে জানে তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত বাম পা কেটে ফ্রিজে রাখা হয়েছে। পায়ের ক্ষত শুকিয়ে গেলে তার পা শরীরে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র চিং ক্য হ্লা মারমা এখনো জানেনা সে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হাঁটুর উপর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে তিগ্রস্ত বাম পা।
আলুটিলা ট্র্যাজেডি সম্পর্কে যারা জানেন তাদের আর নতুন করে চিং’কে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। খাগড়াছড়ির আলুটিলায় বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় হতাহতদের মধ্যে এখন একমাত্র পঙ্গুু সে। ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র চিং ক্য হ্লা মারমাকে হারাতে হয়েছে তার বাম পা। সারাদেশের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় চিংসহ আরো দুইজন এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় মারা যায় ৮ জন। আর আহত হন ৮জন। আহতের মধ্যে ৫জন বাড়ী ফিরে গেলেও সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার ইবনেসিনা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে চিং ক্য হ্লা মারমা। এছাড়া চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রনি মারমা ও দিনমজুর জনি মারমা। রনির ডান পা এবং জনির দুই পা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে চিকিৎসায় তাঁরা পুরোপুরি সুস্থ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
একটি সড়ক দূর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ১২ বছরের শিশু চিং এর সব স্বপ্ন। যে বয়সে তার খেলার মাঠে থাকার কথাপড়াশুনা করার কথা সেই বয়সে তার ঠাঁই হলো হাসপাতালে। তার ভবিষ্যত এখন দোদুল্যমান। জীবনের শুরুতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হাজারো মানুষের প্রিয় চিং। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে তার সময় কাটছে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে।
চিকিৎসা চলছে। তবে প্রয়োজন অনেক অর্থের। বাবা মা কাছে না থাকলেও আত্মীয়রা আছে কাছে। অনেকে নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছে তাকে। ইতিমধ্যে দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আলুটিলায় হতাহতের জন্য গঠিত তহবিলে টাকা পাঠাচ্ছে। সেই টাকায় চিংসহ আহত অন্যদের চিকিৎসা চলছে। তবে তা অপ্রতুল। শুধু চিং’কে পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রয়োজন ২০ লক্ষ টাকা। ঘটনার পরে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল থেকে চিংকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তাকে ঢাকায় চিকিৎসা করানো হচ্ছে। আর পুরো সময়টা তার কাটছে শুয়ে। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু তার বিছানায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবদি অনেক মানুষ তাকে দেখতে আসেখোঁজ খবর নিতে আসে। তবে সে নির্র্বাক। এত বড় ঘটনার পরও চিং এর উত্তর ‘কোন কষ্ট নেই। কষ্ট শুধু শুয়ে থাকতে।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চিং এর সাথে দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়। সে জানায়, ‘আমি বাড়ী যেতে চাই। স্কুলে যেতে চাই। বন্ধুদের সাথে খেলতে চাই। বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হতে চাই’।
অভাবি সংসারে চিং এর মূল আস্থার দুই মানুষ বাবা-মা কাজের সন্ধানে দেশের বাইরে অবস্থান করছে। বর্তমানে সে নানিমামার কাছে থেকে মানুষ হচ্ছে। সে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার চোংড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনীর ছাত্র। তার ভবিষ্যত নির্ভর করছে উন্নত চিকিৎসার উপর। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। তার পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্নটাও এখন অধরা। চিং ক্য হ্লা মারমার চাচা মং ঘটনার পর থেকে চিং’কে নিয়ে হাসপাতালে আছে। তাঁরা জানায়, ‘চিং ক্য হ্লা’র যে ভাবে চিকিৎসা চলছে এভাবে আমাদের পক্ষে চিকিৎসা চালানো কোনভাবেই সম্ভব ছিলনা। এতোদিনে আমরা চিং কে হারাতাম। তহবিল কমিটির লোকজন টাকা তুলে তার চিকিৎসা করাচ্ছেন বলে আমরা চিং এর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছি। আলুটিলায় বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় হতাহতের ঘটনার পর খাগড়াছড়ির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘আলুটিলায় দূর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহ কমিটি’। চিংসহ আলুটিলায় আহতদের চিকিৎসা খরচ এই তহবিল থেকে বহন করা হচ্ছে।
তহবিল সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাই থো অং মারমা বলেন, ‘ নিহত ও আহত সবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব না। এতো বড় ঘটনার পর মানবিক জায়গা থেকে আমরা সবাই একসাথে মিলে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। দেশদেশের বাইরে থেকে সহযোগিতা পাঠানো হচ্ছে। তবে তা অপ্রতুল। তিনি সরকারসহ হৃদয়বানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে যোগাযোগ করুন০১৫৫৬৭৭৩৮২৪০১৫৫০৬০৫১৯৪০১৫৫৬৭৭২৬৬৬ নম্বরগুলোতে। অথবা আর্থিক সহয়তা প্রেরণ করুন বিকাশ-০১৮৩৯৮৪৯৩৬৫০১৮২৮৮৩৪৭৭২(ব্যক্তিগতনম্বরগুলোতে। অথবা ব্যাংক হিসাব নং-৫৪১২২০১০১২১৭৯সোনালী ব্যাংক লিমিটেড,খাগড়াছড়ি শাখার নম্বরে।

Comments