পাহাড় পুড়ুক; আমরা স্বাধীনতার তেল নাকে দিয়ে ঘুমাই

Image result for attack imageগতরাতে ফেসবুকে ঢুকেই স্ট্যাটাসটা দেখতে পাই। এর ঠিক আগ মুহুর্তেই অজল দেওয়ান-এর ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামের ব্লগপোস্টটি পড়েছি। ব্লগপোস্ট আর ফেসবুক স্ট্যাটাসটা আমাকে ভাবিয়ে তুলে। আমি ভাবি, আমি কিভাবে আমার ঐ বন্ধুর কাছে মুখ দেখাবো?! এর দায় কি আমি এড়াতে পারি? এর দায় কি বাঙলার কেউ এড়াতে পারে? হয়ত পারে। কিন্তু আমাদের ক্রম নিশ্চুপতা রমেল চাকমার মৃত্যুর দায় এড়াতে পারেনা। তবু আমরা আজও চুপ থাকবো। এ আমাদের জন্মগত অভ্যাস, চোখ, কান, মুখ বন্ধ করে রাখা। আরও রমেল চাকমা আসবে, আমাদের ঘাড়ে দায় বাড়তে থাকবে।
হিসেব অনুযায়ী ২০০৪ থেকে ২০১১ পর্যন্ত এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১৫টি। আমি জানিনা হিসাবের বাইরে আরো কতটি এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে! ১৯৯৭ এর আগে হয়েছে অনেক গণহত্যা। এর দায় যেমন আমাদের সেনাবাহিনীর, তেমনি আমাদের সরকারের, তেমনি আমাদের সকলের। আজ আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের এ যেন অভ্যাসে পরিণত যে, যতক্ষণ আমাদের নিজেদের স্বার্থের ওপর আঘাত না লাগছে ততোক্ষণ আমারা চুপ করে থাকি। বলিদানের দা ঘাড় ছোঁয়ার আগে পর্যন্ত বাঙালী হাত-পা নাড়ে না বরং অন্যের বলিদান মজা নিয়ে দেখে। সবচেয়ে হতাশার বিষয় এই যে, এই তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও পড়ে।
কোন এক দালাল সেনাপ্রধান রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এ দায়িত্ব দিয়েছিল সেনাবাহিনীকে। আমাদের মাথা মোটা সেনাবাহিনী সেই দায়িত্ব আজও পালন করে যাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হল সরকার বদল হয়, শান্তি-চুক্তি হয় তবু পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ভাগ্য বদল হয়না। মেজর জিয়া মেজর তানভীর হয়ে ফিরে আসে।
আমি ব্লগপোস্ট লেখছি, আরো অনেকেই লিখছেন। ফেসবুকেও ঝড় উঠেছে। আমি জানি এ ঝড় এখানেই থেমে যাবে। শুধু কয়েকদিন সময় দিলেই হয়। আমরা এমনই। অন্যায় হয়, এতে আমাদের সার্ভার আর কী-বোর্ড ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কী-বোর্ড বা স্মার্টফোনের টাচে চাপ পড়ে অথচ রাস্তাটা অক্ষত থাকে। কয়েকদিন হয়ত মানববন্ধন হয়, মিছিল হয় ‘বিচার চাই’ বলে। আমাদের দায়িত্ব খালাস হয়। আমরা দায়ের কারাগার হতে মুক্তি পাই।
রমেল চাকমার মৃত্যুর দায় আমাদের। আমরা যুগ যুগ ধরে মেনে আসছি মিলিটারির অন্যায়। সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামের রমলা চাকমার সাথে হোক আর হোক কুমিল্লার তনুর সাথে। এই যে পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষজন অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে কখনো কি দেশব্যাপী এই হত্যাকাণ্ডের বিরোদ্ধে আন্দোলন হতে শুনেছেন? আর্মিকে টলানোর মতো আন্দোলন হতে শুনেছেন? না শুনেননি। আপনি মিছিল দিবেন, তারপর থেমে যাবেন। আমরা সত্যি বলতে অতিরিক্ত পর্যায়ের আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছি। যতক্ষণ ঐ যে বলেছিলাম, বলির দা এসে নিজের ঘাড় না ছুঁবে ততোক্ষণ আমরা হাত-পা নাড়বো না। বিবেক আমাদের মাঝে নাই। আমরা আজ স্বার্থপরতার কারাগারে হেসে-খেলে বন্দী। আমি বলতে চাই, আপনার ব্লগপোস্ট, আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস, এমনকি আপনার একদিনের প্রতারণামূলক মিছিলও মিলিটারির চোখে পড়বে না। যা করতে হবে বড় ভাবেই করতে হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আমার কিছু কথা বলার আছে। আমার বোধশক্তি উদয় হওয়ার পর থেকে আমি আপনাদের অজস্র অন্যায় দেখেছি। আপনারা সুযোগ পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা মানুষকেও ছাড়েন না। আমি জানতে চাই কিসের ভিত্তিতে এদেশে একজন মানুষ সেনা অফিসার হয়? আপনারা কি কেবল বিবেকহীন, অশিক্ষিত হওয়ার যোগ্যতায় তাদের নিয়োগ দেন? দুঃখিত কিন্তু অশিক্ষিত বলতেই হল। কারণ এমন কাজ যুগ যুগ ধরে যে সংগঠনটি করে তাদের এ ছাড়া কিছু আমি বলতে পারিনা। সংস্কৃতি বদলান। কিছু বেজন্মাকে দূর করলে আপনার ফোর্সের কোন ক্ষতি হবেনা। মেজর তানভীর নামক পশুদের না রাখলে আমার মনে হয়না আপনাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। ওহ্‌ আরেকটি বিষয়, আপনাদের কনস্টিটিউশনে মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী সেনাবাহিনীতে ঢুকতে পারবে না এমন একটি নীতি করলে মনে হয় ভাল হয়।
বাংলাদেশ আজও ঘুমন্ত। সে পার্বত্য ভাইদের আজও বুঝাতে পারেনি আমরা বাঙালীরা তাঁদের সাথে আছি কারণ তাঁরাও বাঙালী। উপজাতি থাকলে সেটা সেটলাররা, মেজর তানভীররা। আমরা আজও ঘুমিয়ে। আমাদের ঘুম গাঢ় হচ্ছে সাথে গাঢ় হচ্ছে আমার বন্ধুর সাথে আমার অবিশ্বাসের দেয়ালটা। কখনো ঘেঁটে দেখেছেন কি পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়টা ক্যান্টনমেন্ট আছে? রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি মিলিয়ে পাঁচটা (উইকিপিডিয়া থেকে)। জানেন সংখ্যাটা এতো বেশি কেন? কারণ সেখানে মানুষগুলো তাঁদের অধিকার চেয়েছিল। প্রশ্ন করতে পারেন কোন অধিকার? এ অধিকার সেই অধিকার যা জিয়াউর রহমান সেট্‌লারদের মাধ্যমে, মিলিটারির মাধ্যমে তাদের কাছ কেড়ে নিয়েছিল। আপনি ভাবুন, জোর করে আপনার পৈতৃক সম্পত্তি যা কিনা শত বছর ধরে আপনার তা আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে, সাথে চলছে অকথ্য নির্যাতন। আপনি এর বিরোদ্ধে দাঁড়ানোয় আপনাকে ধরে নিয়ে মিলিটারি, কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নয়, মিলিটারি আপনাকে হত্যা করছে। কেমন লাগবে বিষয়টা? আপনি এখানে স্বাধীনতার তেল নাকে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছেন, আর সেদিকে আপনার আমারই ভাই চব্বিশ ঘন্টা কাটাচ্ছে মৃত্যু ভয়ে। অপরাধ কেবল অধিকার আদায়ের দাবী তোলা।
কল্পনা চাকমা, রমেল চাকমার মত আরো অনেকে মরবে। আমাদের প্রগতিশীলরা ক্যামেরার সামনে আসার নতুন সুযোগ পাবেন আর আমরা সাধারণ জনগণ ঘুমিয়ে থাকবো। আমরা সুবিধাবাদী কীট তবু দেমাগ দেখাবো বুক ফুলিয়ে। এটাই আমাদের পরিচয়, আমরা নর্দমার কীট যে কিনা আবর্জনায় পড়ে থাকে তো পড়েই থাকে।
বাঙালী তুমি ঘুমাও! পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরেকটি পাকিস্তান করুক!
mongsai79@gmail.com

Comments