বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে এখনো নিখোঁজ ৪, দেয়ালে ঝোলানো ছবিতেই মাকে খুঁজছে জেসিকা

munni_family
জেসিকা বড়ুয়া। বয়স সবেমাত্র ১০ বছর হবে। বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে সে। বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ঘরের দরজায় চেয়ার পেতে মায়ের অপেক্ষায় বসে আছে দুপুর থেকে। খাওয়া দাওয়া কিছুই করেনি। নিষ্পাপ চাহনিতে বোঝা গেল কাউকে খুঁজে ফিরছে সে। বাসায় কেউ এলেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছে শুধু। আর দেখছে ঘরের দেয়ালে ঝোলানো মায়ের ছবির দিকে।
মায়ের অপেক্ষায় কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো ফুলে গেছে অনেকটা। সন্ধ্যার পর থেকে ঘরে অনেক আত্মীয় পরিজনের আনাগোনা। কিন্তু সেদিকে মোটেও তার খেয়াল নেই।
জেসিকার মা মুন্নি বড়ুয়া অফিসে যাওয়ার পথে পাহাড়ের মাটি চাপা পড়ে নিখোঁজের খবর সে শুনেছে নানীর কাছ থেকে দুপুরের দিকে। সেই থেকেই তার কথা বলা আর খাওয়া দাওয়া বন্ধ। পরিবারের সদস্যরা তাকে যে যার মতো করে আশ্বাস দিচ্ছেন যে তার মা ফিরে আসবে। কিন্তু সে কী জানে প্রিয় মায়ের ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে?
কথা হয় পাহাড় ধসে নিখোঁজ মুন্নির মায়ের সাথে। কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন সকালে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমার মেয়ে রুমার উদ্দেশ্যে রওয়না করে। তখনও আমার নাতনী (জেসিকা) ঘুম থেকে ওঠেনি। মেয়ে শুধু আমাকে বলে যায় তাকে দেখে রাখতে। আমার মেয়ে হয়তো এতক্ষন বেঁচে নেই। আমি ওকে কী জবাব দেবো। এভাবেই বিলাপ করছিলেন মুন্নির মা নিলীমা বড়ুয়া। আদরের সন্তানের এমন খবরে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন তিনি।
এসময় ঘরের একপাশে একটি সোফায় বসে অপলক দৃষ্টিতে কি যেন ভাবছিলেন নিখোঁজ মুন্নীর স্বামী চট্টগ্রামের বাসিন্দা অমর বড়ুয়া। চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপে চাকরি করেন। তিনি জানান, গতরাতে সর্বশেষ প্রিয়তমা স্ত্রী মুন্নির সাথে কথা হয় ফোনে। বৃহস্পতিবার রুমা থেকে অফিস শেষে বান্দরবানের বাসায় ফেরার কথা বলেন মুন্নী। তিনি বলেন, দায়িত্বের প্রতি খুবই আন্তরিক ছিল আমার স্ত্রী। তাই প্রতিকুল অবস্থা জেনেও রুমার কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছিল সে। ভগবান তাকে এভাবে আমাদের কাছ থেকে নিযে যাবে ভাবতেই পারছি না।
এর আগে সকালে বাসে করে রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেয়ার উদ্দ্যেশ্যে ঘর ছাড়েন মুন্নি বড়ুয়া। বান্দরবান সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দুরে দৌলিয়ান পাড়া এলাকা পৌছালে সড়ক ভাঙ্গা থাকায় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে সড়ক অতিক্রম করতে থাকেন। ঠিক তখনই পাশের একটি পাহাড়ের মাটি ধসে তাদের ওপর চাপা পড়ে।
এসময় বেশ কয়েকজন যাত্রী মাটির নিচে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনী, সেনাবাহিনী ও রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা আহত অবস্থায় চার জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। কিছু সময় পরে নিহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিংমেহ্লা নামের এক স্কুল ছাত্রীকে।
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মী মুন্নী বড়ুয়া, রুমা কৃষি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গৌতম নন্দী, পোষ্ট মাষ্টার রবিউল ইসলাম এবং সিংমেচিং মারমাসহ চারজন ।
এদিকে ঘটনার পর বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের প্রতিকুল অবস্থায় দিনভর উদ্ধার অভিযান চললেও সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার কাজ স্থগিত করে প্রশাসন। সোমবার সকালে আবারো নিখোঁজদের খোঁজে অভিযান শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টির জন্যে উদ্ধার কাজে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানায় দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা।
mongsai79@gmail.com

Comments