বাবা-ভাই খুন, বড় ভাবি ধর্ষিতা, বিপদে ত্রিপুরা পরিবার

বাবা-ভাই খুন, বড় ভাবি ধর্ষিতা, বিপদে ত্রিপুরা পরিবার
খাগড়াছড়ি, ০৮ জুলাই- সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে নিহার কান্তি ত্রিপুরার বাবা চিরঞ্জিত ত্রিপুরা, ভাই বিকাশ ত্রিপুরাকে। শুধু তাই নয় রাতের আঁধারে ধর্ষণ করা হয়েছে তার ভাবিকেও। এ ঘটনায় একাধিক মামলা করেছেন ওই ত্রিপুরা পরিবার। কিন্তু জোড়া খুন ও ধর্ষণের আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বাদীর পরিবারকে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ- আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
ওই পুরো পরিবার এখন আতঙ্কগ্রস্ত। তারা এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে খাগড়াছড়ি বাজারে অবস্থান করছেন। এখানেও পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য বিশেষ প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না।
শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের বিপদের কথা জানিয়েছে ওই ত্রিপুরা পরিবার। তারা পুলিশি অবহেলার প্রতিবাদ ও সকল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য পাঠ করেন নিহত চিররঞ্জিত ত্রিপুরার ছেলে নিহার কান্তি ত্রিপুরা।
নিহার জানান, গত ৭ মে একদল সন্ত্রাসী তার বাবার কাছে খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার এক দোকানের সামনে চাঁদা দাবি করেন। তার বাবা চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। চাদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তার বাবাকে কোপায় ও গুরুতর জখম করে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে থানায় ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন চিররঞ্জিত ত্রিপুরা।
মামলা দায়ের করার রাতে পরিবারের সকলে মিলে ভাত খাচ্ছিলেন। রাত ৮টার দিকে ৬০/৬৫ জন সন্ত্রাসী তাদের বাসায় প্রবেশ করে চিররঞ্জিত ত্রিপুরা ও বড় ছেলে বিকাশ ত্রিপুরাকে কুপিয়ে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা বাড়িতে লুঠপাট চালায় ও তার ভাবিকে ধর্ষণ করে। ওই ঘটনায় থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে।
মামলা দায়ের করার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও মামলায় কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করা ছাড়া দৃশ্যত আর কোনো অগ্রগতি নেই। যারা এই দু’টি মামলার আসামি, যারা তার বাবা ও ভাইয়ের হত্যাকারী, যারা ধর্ষণকারী, লুটেরা, তারা বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছে। কেউ কেউ মামলা থেকে তাদের নাম বাদ না দিলে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেবে, নিশ্চিহ্ন করে দেবে বলে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এই সংক্রান্তে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। তিনি অভিযোগ করে বলেন পুলিশ ক্ষমতাশালীদের গ্রেফতার না করে উল্টো তাদের মদদ দিচ্ছে।
নিহার কান্তি ত্রিপুরা আরো বলেন, ‘আমরা শুধু পরিবারের দুজন সদস্যকে হারাইনি। ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, জায়গা-জমি, ইজ্জত-আভিজাত্য সব হারিয়েছি। অসহায় হয়ে খাগড়াছড়ি শহরে মানবেতর জীবনযাপন করছি। বিচার চাইতে গিয়ে প্রতিপদে লাঞ্চিত হচ্ছি।’
পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। পুলিশের কোনো অবহেলা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন প্রতিদিন পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। কয়েকজন আসামিকে এরইমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিরা পলাতক থাকায় এখনো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আশা করি সকল আসামিকে পুলিশ আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।
mongsai79@gmail.com

Comments