লামায় পাহাড়ি যুবকের কান্ডদুই সন্তানের জননীকে কুপ্রস্তাব, রাজি না হওয়ায় কুপিয়ে জখম

বি ডি নিউস হতে প্রাপ্ত ছবি
বিয়ের প্রস্তাব ও যৌন চাহিদা পূরণে অনিহা প্রকাশ করায় গলা চেপে, কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে এবং কামড়িয়ে ২ সন্তানের জননীকে গুরুতর জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এক ক্ষতিগ্রস্থ নারী ও তার পিতা।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসীপাড়া ইউনিয়নের দূর্গম মুরুং ঝিরি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
২ সন্তানের জননীর সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল দাবি করে অভিযুক্ত ছাইচি মং মার্মা (৪০) বলেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওই মুসলিম নারীকে বিবাহ করার সিদ্ধান্তে নিয়েছিল তারা দুইজন। অপরদিকে ভিকটিম ও অভিযুক্তের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে প্রতিবেশীরাও জানিয়েছে।
জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে ভিকটিমের বাড়িতে জোরে চিৎকার শুনে এগিয়ে যায় তার বাবা ও আশপাশের লোকজন। ২ সন্তান রাসেল রানা (৯) ও আখিঁ মণি (৪) নিয়ে আলাদা মাটির তৈরি বাড়িতে বসবাস করে ভিকটিম। সন্তান রাসেল রানা থাকে লামার সরই এলাকার কোয়ান্টাম শিশু পল্লীতে। ছোট মেয়ে আখিঁকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ভিকটিম। মাতাল অবস্থায় টিনের দরজা লাথি মেরে ভেঙ্গে ও হাতে মদের বোতল নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ছাইচি মং মার্মা। এই সময় তাকে জড়িয়ে ধরে যৌন চাহিদা পূরণের চেষ্টা করলে সে বাধা দেয়। বাধা দেয়ায় দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
এক পর্যায়ে গলা চেপে ধরে এবং ছাইচি মং তাকে হাত ও লাঠি দিয়ে মারতে থাকে। নিজেকে বাচাঁতে দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ভিকটিম। সেখানে এসে তাকে আবার মারতে থাকে এবং এক পর্যায়ে উঠানে এক পাশের মোরগের ঘরের উপর থেকে একটি ছোট কোদাল নিয়ে তাকে কুপাতে থাকে। কোদালের কুপে ভিকটিমের কপাল, নাক ও কান কেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার শরীরের রক্তে ভিজে যায় ছাইচি মং। এছাড়া ভিকটিমের নাক, মুখ ও হাতে কামড় দিয়ে জখম করা হয়। মেয়ের বাবা ও আশপাশের লোকজন ছাইচি মং কে ধরে ফেলে এবং ছাগলের রশি দিয়ে বেধে রাখে। রাতে সুযোগ বুঝে রশি খুলে পালিয়ে যায় আসামী ছাইচি মং।
বিষয়টি সাথে সাথে লামা থানা পুলিশ, রুপসীপাড়া ইউচি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা ও স্থানীয় মেম্বারকে ফোন করে অবহিত করে মেয়ের বাবা। দূর্গম এলাকা হওয়ায় তাদের সকালে আসতে পরামর্শ দেয়া হয় ও মেয়েটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে বলা হয়। রবিবার সকাল ৯টায় লামা থানা ও রুপসীপাড়া গ্রাম পুলিশের সহায়তায় ছাইচি মং মার্মাকে আবারো আটক করা হয়।
রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ দিয়ে মেয়ে ও আসামীকে পরিষদে নিয়ে আসে। তারপর দুই জনকে লামা হাসপাতালে ভর্তি করে। রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা আহত ভিকটিমের যাবতীয় চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন। প্রাথমিক চেকআপ শেষে আসামীকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
ভিকটিম জানায়, একই এলাকায় ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি। এক এলাকার লোকজন বলে ভাই বোনের মত ছিলাম আমরা। তিন মাস আগে সে আমাদের বাড়িতে কয়েকদিন শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। সে সময় আমি তার (ছাইচি মং) স্ত্রী এবং তার সাথে আমার বিবাহ হয়েছে বলে এলাকার মানুষের কাছে প্রচার করে। বিষয়টি আমার বাবা জানতে পেরে তাকে কাজে আসতে নিষেধ করে দেয়।
হঠাৎ করে শনিবার গভীর রাতে মাতাল অবস্থায় সে আমার বাড়িতে এসে আমার উপর হামলা চালায়। তার যৌন চাহিদা পূরণে বাধা দিলে সে আমাকে মেরে রক্তাক্ত করে। তখন সে বলে, প্রথমে আমাকে মেরে ফেলবে তার পরে আমার বাবাকে মারবে। তাকে এই কাজে করতে একই এলাকার মুজিবুর মাষ্টারের ছেলে জহির ও অংহ্লা পাড়া সজীব বড়ুয়া নামে দুই জন উৎসাহ দিয়েছে বলে বলতে থাকে। সত্য মিথ্যা আমি জানিনা। তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিলনা।
ভিকটিমের বাবা বলেন, শনিবার রাত ৯টায় আমি লামা বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে আসি। বাড়িতে এসে গ্রামের দোকানে বসে আড্ডা দিতে যাই। আমার মেয়ের বাড়ি আমার বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে। রাত ১২টা ২০মিনিটের সময় মেয়ের চিৎকার শুনে এগিয়ে যাই। স্থানীয় লোকজনসহ মেয়েকে উদ্ধার করি এবং আসামীকে আটক করি। আমার ৫ ছেলে মেয়ের মধ্যে মেয়েটি ৪র্থ। মেয়ের প্রথম স্বামী চট্টগ্রাম চলে গেলে ২য় বিয়ে দেই মেয়েকে। সেই ছেলেটিও এনজিও সমিতির ঋণের টাকা নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে স্বামী পরিত্যাক্ত মেয়েটি নিজেদের কাজকর্ম করে চলে। অভিযুক্ত ছাইচি মং আমার মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। তার মনবাসনা পূর্ণ না হওয়ায় সে নৃশংস ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাইচি মং মার্মা বলে, তার (ভিকটিম) সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাকে ‘বিয়ে করতে চাই’ বিষয়টি আমি মেয়ে এবং তার বাবাকে জানিয়েছি। মেয়েটিকে পাওয়ার আশায় দীর্ঘদিন কম বেতনে আমি তাদের বাড়িতে কাজ করেছি। অনেক দিন সম্পর্ক থাকার পরে সে যখন আমাকে অস্বীকার করে তখন আর নিজেকে সামলিয়ে রাখতে পারিনি।
স্থানীয়রা জানায়, উভয়ের মধ্যে প্রায় সময় কথা বার্তা হত। ছেলেটি প্রায় সময় মেয়েটির বাড়িতে যেত। মাঝখানে মেয়েটি তার বউ এমন খবর ছেলেটি এলাকার মানুষকে বলেছে। সে মেয়েটিকে পাওয়ার জন্য মুসলিম হতেও চেয়েছিল।
গুরুতর আহত অবস্থায় ভিকটিম লামা সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা দায়িত্ব নিয়েছে। ভিকটিমের বাবা ইউছুপ আলী (৭৮) বাদী হয়ে লামা থানায় দন্ডবিধি ৩২৩, ৩২৪, ৩০৭ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধন ২০০৩) ৯ এর (৪) খ ধারায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ০৫, তারিখ: ১৬ জুলাই ২০১৭ইং।
মামলার তদন্তকারী অফিসার লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কামাল উদ্দিন বলেন, আসামী ছাইচি মং মার্মাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। ঘটনার মূল কারণ জানতে সোমবার আমরা মুরুং ঝিরি এলাকা পরিদর্শন করি।
mongsai79@gmail.com

Comments