সশস্ত্র রোহিঙ্গা মুসলিম গোষ্ঠী 'আরসা'র নেপথ্যে কারা?

ইউটিউবে অনেক ভিডিও ছেড়েছে এই সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীছবির কপিরাইটYOUTUBE
Image captionইউটিউবে অনেক ভিডিও ছেড়েছে এই সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী
শুক্রবার যে সশস্ত্র হামলার পর মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে তার জন্য মিয়ানমারের সরকার দোষারোপ করছে 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' নামে একটি সংগঠনকে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরেও রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়ির ওপর হামলার ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছিল এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে।
রোহিঙ্গাদের মধ্যে এরকম সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা আগেও শোনা গেছে, কিন্তু এই সংগঠনটির নাম এর আগে কেউ শোনেননি।
মিয়ানমারের সরকারের দিক থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ধারাবাহিকভাবে যে বৈষম্য-অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, এর ফলে তাদের অনেকে কি এখন সশস্ত্র জঙ্গী মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ছে?
পেছনে কারা?
সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গাদের উদ্যোগেই গঠিত হয় রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিছবির কপিরাইটYOUTUBE
Image captionসৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গাদের উদ্যোগেই গঠিত হয় রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আগে ইংরেজীতে 'ফেইথ মুভমেন্ট' নামে তাদের তৎপরতা চালাতো। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ছিল 'হারাকাহ আল ইয়াকিন' নামে।
মিয়ানমারের সরকার ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে।
মিয়ানমার বলছে, এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা জিহাদীরা, যারা বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তবে সংগঠনটি কত বড়, এদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, তার কোন পরিস্কার ধারণা তাদের কাছেও নেই।
মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ধারণা, এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছে 'আতাউল্লাহ' নামে একজন রোহিঙ্গা। তার জন্ম করাচীতে, বেড়ে উঠেছে সৌদি আরবে।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ' তাদের এক রিপোর্টে বলছে, সংগঠনটি মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা।
মক্কায় থাকে এমন বিশ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।
সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ 'আবু আমর জুনুনি' নামেও পরিচিত। আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান। সেখানেই আতাউল্লাহর জন্ম। তিনি বেড়ে উঠেছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। ইউটিউবে তার একটি ভিডিও থেকে ধারণা করা হয়, রাখাইনের রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে সেটি এবং আরবী, এই দুটি ভাষাই তিনি অনর্গল বলতে পারেন। ২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর সম্প্রতি আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তার নাম শোনা যায়।
আরাকানে যারা এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত, তাদের আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে করা হয়। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সংগঠনটির প্রতি সমর্থন এবং সহানুভূতি আছে।
রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সদস্যদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে করা হয়।ছবির কপিরাইটYOUTUBE
Image captionরোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির সদস্যদের গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে করা হয়।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা 'আরসা' গত মার্চে এক বিবৃতিতে একেবারে খোলাখুলিই জানিয়েছে তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে এবং তাদের 'আত্মরক্ষা-মূলক' হামলার মূল টার্গেট হচ্ছে মিয়ানমারের 'নিপীড়নকারী শাসকগোষ্ঠী।'
আরসার প্রধান দাবি হচ্ছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব এবং সমান মর্যাদা দিতে হবে।
'আরসা' তাদের এই বিবৃতিতে আরও বলেছে, তারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সন্ত্রাসবাদী কাজে লিপ্ত নয়। তাদের অধিকার আদায়ের জন্যও তারা সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়। বিশ্বের কোন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গেও তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
এমনকি তারা রাখাইনের বিভিন্ন ধর্মের ও জাতির মানুষকে এবং তাদের ধর্মীয় উপাসনার স্থানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিচ্ছে।
লন্ডন ভিত্তিক একটি রোহিঙ্গা সংগঠন আরাকান ন্যাশনাল রোহিঙ্গা অর্গেনাইজেশনের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত অক্টোবরে প্রথম রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির কথা সবাই জানতে পারে। তারা তখন একটি পুলিশ ফাঁড়ির ওপর হামলা চালিয়েছিল।
তাঁর মতে যারা এই সংগঠনে যুক্ত হয়েছে, তারা মরিয়া হয়ে এরকম একটা পথ বেছে নিয়েছে।
"মাঝে মধ্যে ইন্টারনেটে এদের বক্তব্য-বিবৃতি দেখি। এরা আরাকানে রোহিঙ্গাদের অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য লড়ছে।"
"এরা জঙ্গীও নয়, কোন আন্তর্জাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর সঙ্গেও এদের সম্পর্ক নেই। এরা আরাকানে বেড়ে উঠা একটি গোষ্ঠী যারা রোহিঙ্গাদের জন্য লড়ছে বলে দাবি করে।"
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান পুরো আরাকানের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সরকার যদি রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে নির্বিচার সামরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমে এদের দমন করতে যায়, তাতে বরং সেখানে চক্রাকারে সহিংসতার মাত্রা আরও বাড়বে।
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments