- Get link
- X
- Other Apps
মিয়ানমারের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর নাম রোহিঙ্গা। মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত রোহিঙ্গা সমাজে বাল্যবিয়ের পাশাপাশি অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের কারণে গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।এদের বেশিরভাগই শিশু। তবে প্রসূতির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গত ২৬ দিনে জন্ম হয়েছে ১৭৩ রোহিঙ্গা শিশুর। আশ্রয় নিতে এসেছেন সন্তান সম্ভবা আরও প্রায় ৫০ হাজার নারী।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আগত মধ্য বয়সী নারীরা প্রত্যেকে ১০/১২টি সন্তানের মা। এর চেয়ে কমবয়সীদেরও রয়েছে অন্তত চার থেকে পাঁচটি সন্তান। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকারের অবহেলা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তারা অভ্যস্ত নন। তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের যেসব বড়ি ও কনডম রোহিঙ্গা নারীদের সরবরাহ করা হয়েছে, তা তারা ফেলে দিচ্ছেন। এখনও তাদের বাসস্থান ও খাবারের নিশ্চয়তা না থাকায় তারা এসব নিয়েই বেশি চিন্তিত। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তাদের আগ্রহ নেই। থ্যাংখালী এলাকায় নতুন রোহিঙ্গা বস্তির সড়কে মঙ্গলবার জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি পরে থাকতে দেখা গেছে। এই বস্তির বাসিন্দা দিলকাস খাতুন। তার সঙ্গে এবিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন,‘সোমবার সকাল থেকে এই ওষুধ আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমারগুলো বস্তাতে রেখেছি। কারা রাস্তায় ফেলেছে তা জানি না।’
তবে সেখানে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন,‘জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একদিনে ডেভেলপ হবে না। আস্তে আস্তে হবে। কারণ রোহিঙ্গা নারীরা এই পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত না। আমরা তাদের পরিকল্পিত পরিবার দিতে চাই, তা ধীরে ধীরে তারা বুঝবে। তাদের বুঝানো হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বেসরকারি সংস্থা মুক্তি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এই সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মী সুমা শর্মা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যগত দিক দেখছি। নারীরা অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ায় প্রত্যেকেই রোগা হয়ে পড়েছেন। তাদের এ বিষয়ে আমরা কাউন্সিলিং করছি।’
কক্সবাজারের পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্র মতে, বিবাহিত রোহিঙ্গা নারীদের গড়ে সাত থেকে ১০টি করে সন্তান রয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অনেকগুলো করে ছোট শিশু রয়েছে।
বাংলাদেশে এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যাও কমপক্ষে চার লাখের বেশি। বিপুল সংখ্যক এই শরণার্থীর আশ্রয় ও খাদ্য-চিকিৎসা জনবহুল বাংলাদেশের জন্যে এমনিতেই বিশাল চাপ। তার ওপর রোহিঙ্গাদের অধিক সন্তান নেওয়ার প্রবণতা প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নারীরা গত ২৫ আগস্ট থেকে অন্তত ১৭৩ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। প্রতিদিন গড়ে আটটি করে শিশুর জন্ম হচ্ছে। এছাড়াও আরও প্রায় ৫০ হাজার নারী সন্তান সম্ভবা।
কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমরা উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, ইনজেকশন ও কনডম বিতরণ করেছি। অন্তত দেড়শ নারীর মধ্যে বড়ি ও পঞ্চাশ জনের মতো পুরুষের মধ্যে কনডম বিতরণ করেছি। তিন মাসের বন্ধ্যাকরণ ইনজেকশনও প্রয়োগ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন,‘রোহিঙ্গারা এখনও ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় আছে। সরকারিভাবে নির্ধারিত ক্যাম্পে তাদের একত্রে রাখা হলে এবং নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হলে আমরা পুরোদমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারব। তখন স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও প্রয়োগ করা যাবে।’
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment