কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, ইনজেকশন ও কনডম বিতরণ করেছি। অন্তত দেড়শ নারীর মধ্যে বড়ি ও পঞ্চাশ জনের মতো পুরুষের মধ্যে কনডম বিতরণ করেছি। তিন মাসের বন্ধ্যাকরণ ইনজেকশনও প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে এগুলো গ্রহণের আগ্রহ কম।’
সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সরবরাহ করা হলেও তা তারা ফেলে দিচ্ছেন বলে জানান স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ কর্মীরা।
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা এখনও ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় আছে। সরকারিভাবে নির্ধারিত ক্যাম্পে তাদের একত্রে রাখা হলে এবং নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হলে আমরা পুরোদমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারব। তখন স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিও প্রয়োগ করা যাবে।’
২৬ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এদের বেশিরভাগই শিশু। তবে প্রসূতির সংখ্যাও অনেক।
বিপুল এই জনগোষ্ঠীর চাপের পাশাপাশি অনাগত এই বিপুল সংখ্যক শিশুর ভরণ-পোষণের দায়িত্বও চাপতে যাচ্ছে বাংলাদেশের কাঁধে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে এসব নারী ও শিশু মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পরিবার পরিকল্পনার আওতায় আনতে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এজন্য রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণের কথা জানান জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আব্দুস সালাম।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আগত মধ্যবয়সী নারীরা প্রত্যেকে ১০ থেকে ১২টি সন্তানের মা। এর চেয়ে কমবয়সীদেরও রয়েছে অন্তত চার থেকে পাঁচটি সন্তান। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সরকারের অবহেলা ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তারা অভ্যস্ত নন। তাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের যেসব বড়ি ও কনডম রোহিঙ্গা নারীদের সরবরাহ করা হয়েছে, তা তারা ফেলে দিচ্ছেন। এখনও তাদের বাসস্থান ও খাবারের নিশ্চয়তা না থাকায় তারা এসব নিয়েই বেশি চিন্তিত। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তাদের আগ্রহ নেই। থ্যাংখালী এলাকায় নতুন রোহিঙ্গা বস্তির সড়কে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এই বস্তির একজন বাসিন্দা দিলকাস খাতুন। তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোমবার সকাল থেকে এই ওষুধ আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমারগুলো বস্তাতে রেখেছি। কারা রাস্তায় ফেলেছে তা জানি না।’
বালুখালীতে যারা আগে আশ্রয় নিয়েছে, তারা এখনও গুছিয়ে উঠতে পারেনি। সবাই দিন-রাত ত্রাণের জন্য ছুটছেন। বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তির বাসিন্দা আসিয়া খাতুন। তার স্বামীর নাম শামসুল আলম। তিনি ছয় সন্তানের মা। জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে প্রথমে রাজি হননি। পরবর্তীতে একজনের সহযোগিতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও ঘরই পাইনি। এসব নিয়ে কী হবে।’
তবে সেখানে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একদিনে হবে না। আস্তে আস্তে হবে। কারণ রোহিঙ্গা নারীরা এই পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত নন। আমরা তাদের পরিকল্পিত পরিবার দিতে চাই, তা ধীরে ধীরে তারা বুঝবে। তাদের বুঝানো হচ্ছে।
গত চার দিন ধরে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের কাছে পরিবার পরিকল্পনার সুফল তুলে ধরছেন তারা। একইসঙ্গে বিতরণ করা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও।
কক্সবাজারের পরিবার পরিকল্পনা অফিস সূত্র জানায়, বিবাহিত রোহিঙ্গা নারীদের গড়ে সাত থেকে ১০টি করে সন্তান রয়েছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই অনেকগুলো করে ছোট শিশু রয়েছে।
রোহিঙ্গাদের অধিক সন্তান নেওয়ার প্রবণতা প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment