নগদ অর্থ-ত্রাণে ভরে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছোট ছোট ঘরগুলো। উনছিপ্রাং পুটিবুনিয়া ক্যাম্প থেকে ছবি তুলেছেন উজ্জ্বল ধর
যারা এরই মধ্যে ঘর তুলে উখিয়া ও টেকনাফের অস্থায়ী ক্যাম্পে সংসার সাজিয়ে বসেছেন, এখন তাদের আর ভাতের অভাব নেই। কেননা এরই মধ্যে বিশ্ব খাদ্যসংস্থা প্রায় অর্ধেক রোহিঙ্গাকে তাদের চাল বিতরণ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে।
এছাড়া প্রতিদিনই সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্যাম্পগুলোতে ত্রাণ দিচ্ছে শতশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব ত্রাণে এরই মধ্যে ক্যাম্পগুলোতে জমতে শুরু করেছে ত্রাণের মজুদ। ক্যাম্পগুলোর ঘরে ঘরে হাজির হচ্ছে নগদ টাকাওয়ালারাও। নতুন যারা বাংলাদেশে পা রাখছে, তারাও আসার সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন ত্রাণের টোকেন। বাংলাদেশে প্রবেশমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যরা নাম নিবন্ধন করে তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন এই টোকেন।
তবুও ত্রাণ বিতরণে শতভাগ শৃঙ্খলা ও সমন্বয় আসেনি এখনো।
এদিকে আরো বেশি ত্রাণ সংগ্রহের লোভ পেয়ে বসেছে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত’ মিয়ানমারের এসব রোহিঙ্গাকে । তারা এখন এক ক্যাম্প থেকে আর এক ক্যাম্পে ছুটে বেড়াচ্ছে আরো বেশি বেশি ত্রাণ লাভের আশায়। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে একই ব্যক্তি ভিন্নভিন্ন ক্যাম্প থেকে একাধিকবার ত্রাণ সংগ্রহ করছেন।। কখনো কখনো এক মাস আগে আসা রোহিঙ্গারা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নতুন আসাদের তালিকায় পরিবারের অন্য সদস্যর নাম আবারও লেখাচ্ছেন। এতে করে সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা সেনা, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা পড়েছেন মহা ফাঁপড়ে। এজন্য ভীষণ বিরক্ত তারা।
ক্যাম্পগগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পে সংসার পাতা প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের কাছেই এখন তিন থেকে চার বস্তা করে ত্রাণের চাল, ডালসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী জমা হয়েছে। তবুও তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার দেওয়া ত্রাণের লাইনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। প্রতিদিনই বস্তাভর্তি ত্রাণ মাথায় করে ঘরে ফিরছে। আবার এক ক্যাম্প থেকে ত্রাণ নিয়ে ছুটছে অন্য ক্যাম্পে।
এমনকি বালুখালি বা কুতুপালং থেকে ত্রাণ আনতে ছুটতে দেখা যাচ্ছে উনচিপ্রাং, নয়াপাড়া, ল্যাদা বা শামলাপুরে। আবার ওইসব ক্যাম্প থেকেও অন্যখানে ছুটতে দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ত্রাণ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে এরা। এমন রটনার সত্যতা মিলেছে।
সোমবার দুপুরে শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ ফেরার পথে সাবরাংয়ের হাড়িয়াখালির ভাঙ্গা রাস্তার ওপরে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে একদল রোহিঙ্গাকে জটলা পাকাতে দেখা যায়। এদের প্রায় সবাই মহিলা ও শিশু। এদেরই কয়েকজন মহিলাকে সেনাবাহিনী লাইন ছেড়ে ক্যাম্পে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তারা অনুনয় বিনয় করেই যাচ্ছিল।
এখানে দায়িত্বরত সেনা সদস্যরা জানান, এই মহিলারা সকালেই নাম নিবন্ধন করে ত্রাণের স্লিপ নিয়ে গেছেন। এখন আবার নতুন আসা রোহিঙ্গাদের লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন করে ত্রাণের স্লিপ চাচ্ছেন। এদের কয়েকজন আবার মাস খানেক আগে বাংলাদেশে এসেছেন। এরা বালুখালি ক্যাম্পে থাকনে। সেখান থেকে এই ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন নতুন আসা রোহিঙ্গা হিসেবে নাম লেখাতে। যাতে একাধিকবার ত্রাণ তুলতে পারেন।
গত তিনদিন ধরে উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তায় ঘনঘন চেক পোস্ট বাসনো হয়েছে। এইসব চেক পোস্টে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যানবাহন চেক করছেন। তারপরও রোহিঙ্গাদের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। টেকনাফ, উখিয়ার ভাষার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষায় মিল থাকায় এবং সেনা সদস্যরা সে ভাষা বুঝতে না পারায় এমন ঘটনা ঘটছে।
একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বাংলানিউজকে বলেন, ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের আসল চরিত্র বের হয়ে আসছে। একাধিকবার ত্রাণ নিতে গিয়ে ধরা খাওয়ারা বলতে শুরু করেছে, তারা বাংলাদেশের ত্রাণ নিচ্ছে না। তারা ইউএনএইচসিআর বা বিশ্ব সম্প্রদায়ের ত্রাণ নিচ্ছে।
এদিকে এ সমস্যাকে ত্রাণকাজে সমন্বয়হীনতার দুর্বলতা হিসেবে দেখছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ৪৭টি দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জোট ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি।
এদিকে এ সমস্যাকে ত্রাণকাজে সমন্বয়হীনতার দুর্বলতা হিসেবে দেখছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা ৪৭টি দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জোট ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ বা আইএসসিজি।
প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা শিরিন আকতার বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করতে পারলে সুষ্ঠু সমন্বয় সম্ভব হবে। তার আগে প্রয়োজন মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই যে হারে রোহিঙ্গা আসছে, তা বন্ধ হওয়া।
তবে পুলিশ বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যেই একশ্রেণীর দালাল গড়ে উঠেছে। এরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ত্রাণ ও নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অনেক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ডেকে আনছে। তাই সবার আগে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
একই সঙ্গে তাবলীগ জামায়াতসহ ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ হিসেবে নগদ অর্থ বিতরণও বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ক্যাম্প থেকে ক্যাম্পে ছোটাছুটি ও নতুন রোহিঙ্গা আসা বন্ধ হবে না।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment