পার্বত্য চট্টগ্রামের যে তিনটি সার্কেল রয়েছে তার মধ্যে আমি চাকমা সার্কেল কে এগিয়ে রাখবো ।


পার্বত্য চট্টগ্রামের যে তিনটি সার্কেল রয়েছে তার মধ্যে
আমি চাকমা সার্কেল কে এগিয়ে রাখবো । অন্য দুটি সার্কেলের চাইতে চাকমা সার্কেলকেই এগিয়ে রাখ‌বো । আর আমি গর্ববোধ করি চাকমা সার্কেলের বাসিন্দা হতে পেরে । চাকমা সার্কেলের রাজ পরিবারের সদস্যরা আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে যা অন্য দুটি সার্কেলের রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা যায় নি । চাকমা সার্কেলের রাজা ও রাণী উভয় দুজনই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত । মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার ইস্যুতে শ্রদ্ধেয় রাজা ও রাণী বেশ তৎপর । বি‌ভিন্ন সম‌য়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টক শোতে চাকমা রাজা ও রাণী কে দেখা যায় । তাছাড়া বিভিন্ন মানবাধিকার কার্যক্রমে ওনা‌দের দেখা যায় । কিন্তুু অন্য দুটি সার্কেল মং সার্কেল ও বোমাং সার্কেলের রাজা কিংবা রাণী কখনো আদিবাসী অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন কিনা সন্দেহ রয়েছে । আর ওনাদের কখনো এসব গুরুত্ব পুর্ণ ইস্যু নিয়ে মন্তব্য দিতে দেখি নি । তাদের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কোন কার্যক্রম এখনো দেখি নি । বান্দবান রাজপুণ্যাহ মেলার একটি লিফলেট দেখলাম । যেখানে পাহাড়ের ভুমিপুত্র জুমিয়া
আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে । যাসত্যি হতাশাজনক । একটি সার্কেলের অধিকর্তারা যদি নিজেদের উপজাতি হিসেবে তুলে ধরেন তবে তার অধিনস্থ প্রজাদের মন মানসিকতা কেমন হতে পারে ?
আমরা যারা পাহাড়ের ভুমি পুত্ররা প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যাচ্ছি যে , আমরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসিন্দা এবং নিজেরাই স্বয়ংসম্পুর্ণ এক একটি জাতিসত্বা । হয়তোবা সংখ্যায় আমরা নগণ্য কিন্তুু আমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষা,বর্ণমালা,সংস্কৃৃতি,ঐতিহ্য ও ধর্ম । আমরা বাংলাদেশী কিন্তুু বাঙ্গালি না । একবিংশ শতাব্দী এসে উপজাতি শব্দটির প্রয়োগ সত্যি দুঃখজনক । একটা সময় ব্রিটিশরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি মনে করতো । তারা অন্যজাতিদের অসভ্য,বর্বর,অশিক্ষিত আখ্যা দিয়ে উপজাতি শব্দটি প্রয়োগ করতো । উপজাতি হলো মুলত একটি জাতির উপজাত । যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতির বর্ণমালা,ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে থাকে ।
সেদিক থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা ব্যতিক্রম । তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালিদের কোন কিছু কে ধারন করে নি । সুতরাং ,তারা বাঙ্গালিদের থেকে আলাদা এবং নিজেরাই স্বয়ংসম্পুর্ণ এক একটি
জাতিসত্বা হবার অধিকার রাখে। তাহলে কোন যুক্তিতে পাহাড়ে বসবাসরত জাতিসত্বা সমুহ লোকদের উপজাতি বলা হচ্ছে । শুধু কি রাষ্ট্রগঠন কিংবা সংখ্যা গরিষ্ঠ হলে জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যায় ?
২. .
শত শত বছর ধরে পাহাড়িরা পাহাড়ে বসবাস করে এসেছে । একটা সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে ‌তেমন কোন বাঙ্গালি ছিল না । ব্রিটিশ আমলে পাহাড়িদের জন্য আলাদা একটি অন্চল হিসেবে পরিচিত ছিল
আজকের এই পার্বত্য চট্টগ্রাম । যেখানে আলাদা শাসন রিতী ছিল । বাংলাদেশ সৃষ্টি হবার পর থেকে , পাহাড়ের আদিবাসিন্দা দের অস্তিত্ব চরম হুমকির মুখে পড়েছে । তবুও সংগ্রাম করে টিকে থাকতে আছে অনেকেই আবার অনেকসময় হয়েছে দেশান্তরী । নিজেদের বাপ,দাদার ভুমি ফেলে কে দেশান্তরী হতে চাই ? পাহাড়ের ইতিহাস ভালো করে অধ্যায়ন করুন , পাহাড়ের মাটির প্রতি ইন্চিতে পাহাড়িদের রক্ত মিশে আছে । এ জুমিয়া পাহাড়িদের আদিপুরুষেরাই পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটিকে বসবাসের উপযোগী করে তুলেছে । আর আজ, তাদের উত্তরসুরীদের ভুমি কেড়ে নিয়ে গড়ে তুলা হচ্ছে গুচ্ছ গ্রাম, পর্যটন স্পট। এতকিছুর পরেও , পাহাড়ের ভুমি পুত্র রা টিকে
আছে সংগ্রাম করে । প্রতিনিয়ত তাদের সংগ্রাম;করতে হচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য ।
৩. . 
বোমাং সার্কেলের যে রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠান, সেটি নিশ্চয়ই তাদের রাজপরিবারের ঐতিহ্য রক্ষার্থে । যা তাদের সার্কেলের
বাসিন্দাদের জীবনধার‌নের চিত্র তুলে ধরে , তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে । এটা নিশ্চয়ই একটা ভালো প্লাটফর্ম । কিন্তুু তাদের সেই প্লাটফর্ম কতটুকু ভুমিকা রাখতে পেরেছে পাহাড়ের আদিবাসিন্দাদের জন্য । বরন্চ লিফলেটের মাধ্যমে পাহাড়ের ভুমিপুত্রদের উপজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে ।যা চরম
মুর্খতার ও অপমানজনক । মানলাম, রাষ্ট্র আমাদের জাতিসত্বার স্বীকৃতি দেয় নি এবং সংবিধানে আমাদের উপজাতি বলা হয়েছে । কিন্তুু আমরা তো উপজাতি নয় ,তাহলে বোমাং সার্কেলের অধিকর্তারা কেনো নিজেদের উপজাতি হিসেবে তুলে ধরেছেন । তার মানে কি ধরে নিবো উপজাতি ও জাতিসত্বা ইস্যুটে
ওনাদের জ্ঞান খুবই অল্প । নাকি ওনারা নখ দন্তহীন বাঘে পরিণত হয়ে দালালিপনা করা শুরু করেছেন । যতটুকু জানি, ওনাদের রাজপুণ্যাহ মেলা সরকারী ও দাতা সংস্থাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়ে থাকে। তাহলে কি ধরে নিবো সরকারকে খুশি করতে নিজেদের
ও নিজ প্রজাদেরকে উপজাতি বানিয়ে দিয়েছেন । একটি সার্কেলের অধিকর্তাদের থেকে এরুপ কার্যক্রম আশা করা যায় না । যেখানে ওনাদের এসব ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হয়ে , প্রজাদের সচেতন করার কথা ছিল সেটা না করে ওনারা শুধুমাত্র নিজ স্বার্থে নিজেদের জাতিসত্বার স্বীকৃতি কে বিসর্জন দিয়ে উপজাতি হয়ে গেলেন ।
পরিশেষে বলবো , পাহাড়িরা রাষ্ট্র বিরোধি কিংবা সরকার বিরোধি নয় । তারা নিজ অধিকার নিয়ে বেচে থাকতে চাই । তারা দেশের প্রয়োজনে দেশ সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চাই । আর সেজন্য তাদের নায্য অধিকার দিতে হবে, অন্যথায় তারা হয়ে
যাবে বিদ্রোহি ।
উ‌থোয়াইচিং মারমা বাবু
১৮\১২\১৭
‌বিঃদ্রঃ পরবর্তী পে‌স্টে রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠান নি‌য়ে আলোচনা আলোচনা করা হ‌বে ।
Source মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিপ করুণ
https://www.youtube.com/dashboard?o=U
https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA

Comments