বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাকে (মিন্নি) সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিষয়ে রায়ে আদালত বলেছেন, আয়শা এই হত্যা পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা। তাঁর কারণেই রিফাতের মা-বাবা পুত্রহারা হয়েছেন। আয়শার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর বয়সী মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই এ মামলায় তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়। গতকাল শনিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে আয়শা সিদ্দিকাসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি চার আসামি খালাস পান।
বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল প্রকাশ। রায়ের অনুলিপি নিয়ে আপিল করতে ঢাকায় গেছেন আয়শার বাবা।
শুরুতে আয়শা এই মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন। পরে তাঁকেও আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার রায়ে বিচারক বলেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে সনাতনী অস্ত্র রামদা দিয়ে কুপিয়ে এই হত্যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনকারী আসামিরা সবাই যুবক। তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে যুবসমাজসহ দেশ-বিদেশের সব বয়সের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে। এমতাবস্থায় আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশের যুবসমাজ ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য পাঁচ আসামি হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)।
রায়ে বলা হয়, ‘আলোচনা হতে দেখা যায়, আসামিরা (দণ্ডপ্রাপ্ত) পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভিকটিম রিফাত শরীফকে অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণকল্পে খুন করে দণ্ডবিধির ৩০২ ও তৎসহ ৩৪ ধারার (ষড়যন্ত্র) অপরাধ করেছে মর্মে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন এবং তৎসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ৩৪ ধারা মূলত স্বতন্ত্রভাবে শাস্তি বিধান আরোপকারী কোনো ধারা নয়। এটা অন্যান্য অপরাধের শাস্তি আরোপকারী ধারার পরিপূরক। এই ধারা অনুযায়ী রিফাত শরীফকে হত্যায় ওই আসামিগণ সমানভাবে দায়ী।’
এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পান আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন। এরপরই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আপিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে
আয়শার বাবা দাবি করেন, তাঁর মেয়ে নির্দোষ। রিফাত হত্যার পেছনে নয়ন বন্ড তৈরির কারিগর যারা, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক সেই প্রভাবশালীদের রক্ষায় জন্য পুলিশি তদন্তে আয়শাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, উচ্চ আদালতে আয়শা ন্যায়বিচার পাবে।
উচ্চ আদালতে আয়শার আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলায় পুলিশের তদন্তে গাফিলতি ছিল। হত্যাকাণ্ডের সময় মাদকের বিষয়টি আলোচনায় এলেও তদন্তে সেটা আমলে নেওয়া হয়নি। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজ এলাকায় দিনদুপুরে রিফাতকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেন তাঁরই পরিচিত এক দল তরুণ। এরপর রিফাতকে হাসপাতালে নিয়ে যান আয়শা। হাসপাতালে নেওয়ার পর রিফাত মারা যান।
রিফাতকে যখন কোপানো হচ্ছিল, তখন তাঁর স্ত্রী আয়শা চেষ্টা করছিলেন স্বামীকে বাঁচাতে। এমন এক ভিডিও চিত্র তখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে দেশের মানুষকে নাড়া দিয়েছিল। ঘটনার ১৫ মাস পর আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, স্ত্রী আয়শাই ছিলেন রিফাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী।
আয়শার বাবা দাবি করেন, তাঁর মেয়ে নির্দোষ। রিফাত হত্যার পেছনে নয়ন বন্ড তৈরির কারিগর যারা, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক সেই প্রভাবশালীদের রক্ষায় জন্য পুলিশি তদন্তে আয়শাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, উচ্চ আদালতে আয়শা ন্যায়বিচার পাবে।
আর রিফাতের ওপর আক্রমণে নেতৃত্বে ছিলেন সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড। যিনি ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় দুর্ধর্ষ একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তুলেছিলেন। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশের সঙ্গে এক ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নয়ন বন্ড। অভিযুক্ত বাকি আসামিদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ কিশোরের বিচার চলছে শিশু আদালতে।
Source
মজার মজার ভিডিও দেখতে নিচে লিংকের ক্লিক করুণ
https://www.youtube.com/dashboard?o=U
https://www.youtube.com/channel/UCDUgcFp1WTEUfSzViR9tozA
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment