কক্সবাজারে বিজিবি-বিজিপির বৈঠক: সীমান্তে একসাথে কাজ করতে ঐক্যমত

cox-bgb-bgp-meeting-01-copy
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট বিজিবি রেস্ট হাউজে বুধবার দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি বিকেল ৩টায় শেষ হয়।
বৈঠক শেষে বিকেল ৪টায় রেস্ট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চলের (চট্টগ্রাম) কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার ফরিদ হাসান জানান,  মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সন লুইন গত মাসে মিয়ানমারের মংডু অঞ্চলের দায়িত্ব নিয়েছেন। এরপর বিজিবি’র পক্ষ থেকে তাকে পরিচিতিমূলক একটি বৈঠকের জন্য চিঠি দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুতরাং এটি একটি পরিচিতিমূলক বৈঠক।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন সৌজন্যমূলক বৈঠকে সাধারণত কোন এজেন্ডা থাকেনা। তারপরও তাদের সম্মতিক্রমে সীমান্ত এবং মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মুসলমানদের হত্যার ব্যাপারে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে যে মুসলিম কমিনিটি রয়েছে-তারা আমাদের দেশে চলে আসছে সীমান্ত পার হয়ে অবৈধভাবে। আমরা বিষয়টি তাদেরকে জানিয়েছি। বিজিপি স্বীকার করেছে যে, সন্ত্রাসীদের ধরতে যে অভিযান চলছে তাতে রোহিঙ্গারাও গৃহহারা হচ্ছে। ফলে তাতে ভয় পেয়ে কিছু মানুষ বাংলাদেশের দিকে চলে আসছে। মিয়ানমারের পুলিশ বাহিনী সম্মত হয়েছে তারা সীমান্তে টহল আরও জোরদার করবে। এবং আমাদেরকে বিজিপি জানাবেন কোন সীমান্ত দিয়ে কোন মিয়ানমার নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে কিনা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, সীমান্তে একসাথে সুন্দরভাবে কাজ করতে ঐক্যমত পোষণ করেছেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিবি)।
ইয়াবার বিষয়েও আমরা তাদেরকে জানিয়েছি। তারা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বিজিপিও চিন্তিত। আমরা বলেছি- তাদের সান প্রদেশ থেকে মংডু হয়ে যেসব ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে, তা আমাদের দেশে ভয়াবহ খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। আমরা অনুরোধ জানিয়েছি যে তাদের আইন শৃংখলা বাহিনী দিয়ে তা ঠেকায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি আপনাদের মংডুতে ইয়াবা তৈরির কয়েকটি ফ্যাক্টরি রয়েছে। সে গুলো ধ্বংস করেন। তারা বলেছেন-মংডুতে কোন ফ্যাক্টরি নেই। তবে আমাদের দেশ থেকে যে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে, তা আমরা প্রতিহত করার সব ধরণের চেষ্টা করবো।
সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল খন্দকার ফরিদ হাসান বলেন, আমরা বিজিপিকে বলেছি সীমান্তে কোন ঘটনা ঘটলে আমরা আপনাদের জানায়। অথচ আপনাদের কাছ থেকে রিপ্লাই পেতে দেরি হয়ে যায়। যার কারণে কোন কাজ হয়না। এরপর অবশ্যই তিনি একমত হয়েছেন যে কোন তথ্য তাড়াতাড়ি আদান প্রদান করবেন।
সিও এবং কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক হয়, কিন্তু বিওপি পর্যায়ে এখনো বিজিপি’র সাথে বৈঠক হয়নি। তিনি কথা দিয়েছেন পরবর্তী বিওপি পর্যায়েও বৈঠক আহ্বান করবেন।
সীমান্তে যৌথ টহল করার বিষয়েও কথা হয়েছে। এটি হলে সীমান্ত অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে।
বর্ডার লিয়াজো অফিস করার ব্যাপারেও কথা হয়। এছাড়া সম্প্রীতি বাড়াতে বিজিবি-বিজিপি’র মাঝে খেলাধূলা, অনানুষ্ঠানিক মিটিং করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।  আমরা তাদেরকে জানিয়েছি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির অবস্থান খুবই শক্ত।
আমরা তাদেরকে আরও জানিয়েছি, ইয়াবা এবং ওয়াইন এর মিয়ানমারের সিগারেট বাংলাদেশে ঢুকছে। যার কারণে আমাদের দেশীয় কোম্পানী গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যাপারেও কথা হয়েছে। তারা উভয় বিষয় গুলো দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া নাফনদীতে জেলেদের জিরো লাইন অতিক্রমের বিষয়েও আলাপ হয়। আমরা বলেছি খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেক জেলে বুঝতে না পেরে তারা জিরো লাইন অতিক্রম করেন। তারা যেন বিষয়টি ভাল নজরে দেখেন। আমরা সে বিষয়ে আহ্বান করেছি। পাশাপাশি কিছুদিন আগে যে ৯ জেলেকে তারা ধরে নিয়ে গেছে তাদেরকে ফেরত দেয়ার জন্য বলেছি। তারা বলেছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে জেলেদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ের শেষে দিকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বুধবার রাতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, আরআরসি সহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়ন লে. কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার সহ বিজিবির পদস্থ কর্মকর্তা ও জেলা শহরে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments