উইকিলিকসে ট্রাম্প! সত্য না কৌতুক?

আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ
আমেরিকার নির্বাচনের পরের দিন ডোনাল্ড ট্রাম্প গোয়েন্দাকর্তা ও নিরাপত্তা-বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকের খবর উইকিলিকস ফাঁস করে দেয়।
সেই খবরে দেখা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প খুবই হতাশ হয়েছেন। কারণ, এই বৈঠকের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট একটা আলংকারিক পদ মাত্র। তাঁর নিজের কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। তিনি ব্যবস্থার শিকার। সবকিছু সিস্টেম নামক যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, প্রেসিডেন্ট কেবল তাদের মুখপাত্র হিসেবে সামনে আসেন।
পেন্টাগন, সিআইএ ও এফবিআইয়ের সঙ্গে সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার:
ট্রাম্প: আমাদের অবশ্যই আইএসকে ধ্বংস করতে হবে। অনতিবিলম্বে।
সিআইএ: আমরা তা করতে পারব না, স্যার।
ট্রাম্প: কেন পারব না? আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
সিআইএ: স্যার। আইএস আমরা বানিয়েছি। কিন্তু একা বানাইনি। আমাদের সঙ্গে আছে ইসরায়েল, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব...
ট্রাম্প: না। এটা আমরা বানাইনি। ডেমোক্র্যাটরা বানিয়েছে।
সিআইএ: আমরা বানিয়েছি, স্যার। এটা যদি আমরা ধ্বংস করি, পেট্রোডলার আসা বন্ধ হয়ে যাবে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো অনেক টাকা দিয়ে আমাদের দ্বারা আইএস বানিয়ে নিয়েছে।
ট্রাম্প: পাকিস্তানকে টাকা দেওয়া বন্ধ করো।
সিআইএ: এটা আমরা করতে পারব না, স্যার।
ট্রাম্প: কেন পারব না?
সিআইএ: তাহলে ইন্ডিয়া বেলুচিস্তানকে কেটে পাকিস্তান থেকে বের করে দেবে।
ট্রাম্প: আমার তাতে কোন কচুটা যায়-আসে?
সিআইএ: তাহলে কাশ্মীরে শান্তি এসে যাবে।
ট্রাম্প: তাতে কী ক্ষতি?
সিআইএ: তাহলে ইন্ডিয়া আর আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনবে না। আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে। আর ইন্ডিয়াতে শান্তি এসে গেলে তারা পৃথিবীর এক নম্বর পাওয়ার হয়ে যাবে। আর ইন্ডিয়া এক নম্বর পাওয়ার হয়ে গেলে তারা কারও কথাই শুনবে না। নিক্সন কেন ইন্দিরা গান্ধীকে নোংরা গালি দিয়েছিলেন, জানেন তো। কারণ, ইন্ডিয়ানরা নিজেদের সেরা বলে ভাবে।
ট্রাম্প: তাহলে?
সিআইএ: আমাদের অবশ্যই পাকিস্তানকে সাহায্য করে যেতে হবে, যাতে ইন্ডিয়া পাকিস্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
ট্রাম্প: কিন্তু আমি চাই তালেবানরা ধ্বংস হোক। এখনই।
সিআইএ: তা হয় না, স্যার। তালেবান আমরাই বানিয়েছিলাম। আশির দশকে, সোভিয়েত ইউনিয়নকে জ্বালাতন করতে। এখন তালেবানকে দরকার পাকিস্তানকে বশে রাখার জন্য। এবং তাদের আরও অ্যাটম বোমা বানানো থেকে নিরত রাখার জন্য।
ট্রাম্প: আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পতাকা ওড়াতে হবে। ওরা সব সন্ত্রাসবাদের প্রশ্রয়দাতা। লাদেন নিজে একজন সৌদি নাগরিক। আমরা সৌদি দিয়েই শুরু করতে পারি।
সিআইএ: আমরা তা পারি না, স্যার।
ট্রাম্প: কেন পারব না? গণতন্ত্রই সেরা। ফ্রিডম অতুলনীয় ও অপরিহার্য। আমরা তো তাদের উপকারই করছি।
সিআইএ: আমরা এই রাজতন্ত্রকে বছরের পর বছর ধরে প্রতিপালন করে আসছি, কারণ তারা আমাদের তেলের জোগানদাতা। দেশে গণতন্ত্র এলে তেল আর রাজাদের হাতে থাকবে না, জনগণের হাতে চলে যাবে। তখন আমরা আর তেল পাব না। আপনি জানেন দুনিয়া চলে তেলের ওপরে।
ট্রাম্প: ওকে। তাহলে আমরা ইরান দখল করে নিই।
সিআইএ: আমরা তা করতে পারব না, স্যার।
ট্রাম্প: কেন নয়?
সিআইএ: ইরান আক্রমণ করলে রাশিয়া আমাদের আক্রমণ করে বসবে। যেমনটা তারা করছে সিরিয়ায় আসাদের সমর্থনে। তারা আইএসকে আক্রমণ করছে। আমাদের চুরি যাওয়া ড্রোনগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। আর ইরানের দরকার আছে ইসরায়েলকে সামাল দেওয়ার জন্য।
ট্রাম্প: আচ্ছা, তাহলে আমরা আবার ইরাক আক্রমণ করি।
সিআইএ: তার দরকার পড়ে না, স্যার। আমাদের বন্ধু আইএস এরই মধ্যে ইরাকের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে ফেলেছে।
ট্রাম্প: কেন নয়? আমরা ইরাক আক্রমণ না করলে তো আইএস পুরা ইরাকই দখল করে ফেলবে।
সিআইএ: সেখানকার শিয়া সরকারকে আমাদের দরকার আইএসকে সামলানোর জন্য।
ট্রাম্প: আমরা ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করে দিই। ইসরায়েল শান্তিতে থাকুক।
সিআইএ: তাহলে ইসরায়েলকে কেউ সামলাতে পারবে না, স্যার।
ট্রাম্প: তাহলে আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে শান্তি এনে দিই?
সিআইএ: তাহলে আমাদের অস্ত্র বিক্রি কমে যাবে। আর আরব দেশের মাটির নিচে আমাদের যে তেল আছে, তার ওপর থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে।
ট্রাম্প: ওকে, তাহলে আমরা আমেরিকা থেকে মুসলিমদের বের করে দিই।
এফবিআই: তাহলে দেশের মানুষের বুকে আর ভয়ডর বলে কিছু থাকবে না। তারা ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিতে শুরু করবে।
ট্রাম্প: তাহলে আমরা সব মেক্সিকানকে বের করে দিই।
বর্ডার প্যাট্রল: তা সম্ভব নয়, স্যার।
ট্রাম্প: কেন নয়?
বর্ডার প্যাট্রল: তাহলে স্যার আপনার সীমান্ত-দেয়াল কে বানাবে?
ট্রাম্প: তাহলে আমরা এইচওয়ানবি ভিসা বন্ধ করে দিই।
চিফ অব স্টাফ: তা করা যাবে না, স্যার।
ট্রাম্প: কেন নয়?
চিফ অব স্টাফ: তাহলে হোয়াইট হাউসের সব কাজ আউটসোর্সিং করতে হবে। সব কাজ চলে যাবে বেঙ্গালুরুতে। আর বেঙ্গালুরু হলো ইন্ডিয়ায়।
ট্রাম্প: আমরা দেশে জব তৈরি করব। কোনো বিদেশি জিনিস আমদানি করব না।
হোয়াইট হাউসকর্তা: তা আমরা পারব না।
ট্রাম্প: কেন?
কর্তা: আপনার শার্টটা স্যার কোন দেশের তৈরি আপনি জানেন?
ট্রাম্প: বাংলাদেশের। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো শার্ট বানায়। আমি সেটা বিক্রি করি।
কর্তা: তাহলে স্যার, আপনি বাংলাদেশের শার্ট আনা বন্ধ করতে পারবেন না।
ট্রাম্প ঘামতে লাগলেন। গলার টাই ঢিলা করে বলতে লাগলেন: তাহলে প্রেসিডেন্ট হয়ে আমি কি ঘোড়ার ঘাস কাটব?
সিআইএ: আপনি হোয়াইট হাউসে আপনার দিনগুলো এনজয় করতে থাকুন। বাকি সব দুশ্চিন্তা স্যার আপনি আমাদের ওপর ছেড়ে দিন।
ট্রাম্প: ওকে। শোনো। আমি থাকব হোয়াইট হাউসে। হোয়াইট সুপ্রিমেসির দিনে। আমার ভাবমূর্তিও যেন সাদা থাকে। আর হোয়াইট-কলাররা যেন সুখে থাকে। আর হ্যাঁ। আমার শার্টও যেন সাদা থাকে। কোনো রকমের লাল দাগ যেন আমার সাদা শার্টে না লাগে।
হোয়াইট হাউসকর্তা: অবশ্যই স্যার। আমরা সব সময় আপনার জন্য পৃথিবীর সেরা সাদা শার্ট এনে রাখব। বাংলাদেশের শার্ট, স্যার।
আপনারা নিশ্চয়ই বুঝেছেন, এটা একটা কৌতুক। কেউ একজন বানিয়ে তৈরি করেছে। ইন্টারনেটে এই কৌতুকটা পাওয়া যায়। আমি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করলাম। একটু স্বাধীনতাও নিলাম অনুবাদের সময়।
অনুবাদ সম্পর্কে একটা প্রাচীন রাশিয়ান উক্তি প্রচলিত আছে। অনুবাদ হলো নারীর মতো, বিশ্বস্ত হলে সুন্দরী হয় না, সুন্দরী হলে বিশ্বস্ত হয় না।
তবে আমি এটা নিয়েছি কেনিয়ার একটা পত্রিকার ওয়েবসাইট থেকে। তারা এটা ছেপেছে তাদের আন্তর্জাতিক পাতায়। খবর হিসেবে। উইকিলিকসের লিক করা খবর হিসেবে। কৌতুক হিসেবে নয়।
জানি না এটাকে আপনারা কৌতুক হিসেবে নিচ্ছেন, নাকি সিরিয়াস একটা তথ্য হিসেবে নিচ্ছেন। আমি কেনিয়ার খবরের কাগজের খবরের কথা বলছি।
mongsai79@gmail.com

Comments