- Get link
- X
- Other Apps
PreviousNext
চৈনিক সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ‘দুজিয়াংইয়ান ইরিগেশন সিস্টেম’। ২৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ‘সিন ডাইনেস্টি’র সময়ে মিন নদীতে তৈরি করা হয়েছিল এই সেচব্যবস্থা। প্রায় দুই হাজার ২৬০ বছরের পুরনো!
সিচুয়ানের পশ্চিমদিকের বিস্তীর্ণ সমতলভূমি আর সিনহাই-তিব্বতের মালভূমি জুড়ে বিস্তৃত এই সেচব্যবস্থা। প্রাচীন চীনের অন্যতম বিখ্যাত প্রকৌশলী এবং রাজনীতিবিদ লিবিং ‘সিন ডাইনেস্টি’র গভর্নর থাকাকালে এর পরিকল্পনা ও নির্মাণকাজ শুরু করেন।
সুপ্রাচীন এই সেচব্যবস্থা আজকের দিনেও পাঁচ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানি প্রবাহিত করে। ওই অঞ্চলের কৃষিতে এই সেচব্যবস্থা অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। বলা হয়ে থাকে, এই সেচব্যবস্থার জন্যই সিচুয়ান চীনের সবচেয়ে বেশি কৃষি-উৎপাদনশীল প্রদেশ।
কিন্তু ‘দুজিয়াংইয়ান ইরিগেশন সিস্টেম’ ঘুরে এসে আমার মনে হয়েছিল,চৈনিক সভ্যতার এই প্রাচীন নিদর্শন সুযোগ পেয়েও না দেখাটা বোকামি হয়ে যেত। বলা বাহুল্য, ‘দুজিয়াংইয়ান ইরিগেশন সিস্টেম’ এবং পাশে অবস্থিত ‘ছিংছেং’ পর্বত ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
চেংদুর ‘সেঞ্চুরি সিটি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার’ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ‘দুজিয়াংইয়ান ইরিগেশন সিস্টেম’। সেটার কাছাকাছি পৌঁছাতে আমাদের দুই ঘণ্টা সময় লাগল। সফরসঙ্গীদের অধিকাংশই ‘প্রাণরসায়ন’ গবেষণার চীনা রথিমহারথী।
মিন নদীর মাঝখানে বেশ লম্বা এক দ্বীপ। একদিকে বাঁধ দিয়ে নদীর পানির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে এই সেচপ্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। তীব্র স্রোতের পাহাড়ী নদীর পানির প্রবাহকে ইচ্ছেমত কম-বেশি করে প্রয়োজনমত বিভিন্ন দিকে ব্যবহার করা যায়।
আমি এর সূক্ষ্ম বর্ণনা দিতে পারবনা,কারণ আমি প্রকৌশলী কিংবা কৃষিবিদ কোনটাই নই। যে কেউ চাইলে গুগলে খুঁজে দেখতে পারেন,অনেক তথ্য আছে।
মূল বাঁধের ওপর দিয়ে ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে আমরা মাঝখানের দ্বীপে চলে এলাম। বাঁধের এক দিকে উত্তাল নদী,আরেক দিকে পাথুরে ভূমির ওপরে মাত্র একফুট পানি। কোথাও শুকনো খটখটে।
স্বচ্ছ পানি কিন্তু তীব্র স্রোত,পানির গর্জন,ওপাড় থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত ‘ছিংছেং’ পর্বতের সারি,নীলাকাশ,বিশুদ্ধ বাতাস,সেই সাথে প্রাচীন চীনের ইতিহাস- এক অদ্ভুত আবহ সৃষ্টি করল আমাদের মনে।
দুজিয়াংইয়ানে বেশ অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমরা গিয়েছিলাম ‘ছিংছেং’ পর্বতে। এটা ‘তাও’ (এর ভিন্ন উচ্চারণ ‘থাও’)-দের পবিত্র পাহাড়। এখানে অসংখ্য তাও-মন্দির আছে। এই পর্বত শ্রেণিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৩৬টি চূড়া। আছে অসংখ্য ঝরনা। বিখ্যাত ‘দুজিয়াংইয়ান পান্ডা সেন্টার’ এই পাহাড়েই।
আমরা যে চূড়াটায় উঠেছিলাম,তা প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার উঁচু। পুরোটা উঠতে হয়েছে আঁকাবাঁকা ঢালু পথ আর সিঁড়ি বেয়ে। আমরা উঠছিলাম ‘তাও’ তীর্থযাত্রীদের সাথে। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম,কিন্তু পাহাড়ী পথ আর আশেপাশের চূড়ার সৌন্দর্য আর ক্ষণিক পরপর ঝরনার উপস্থিতি আমাদের মনকে ক্লান্ত হতে দিচ্ছিল না।
আর অবাক হয়ে ভাবি,সেই দুই হাজার বছরের বেশি সময় আগেও চীনারা প্রকৌশলগত দিক দিয়ে কিংবা কৃষিক্ষেত্রে কতটা অগ্রসর ছিল!
লেখকের কথা:
আমি লেখক নই। সাহিত্যজ্ঞানও শূন্যের কোটায়। বিজ্ঞানের ছাত্র। বৈচিত্র্যময় জীবনের নানা বাঁকের ছোট ছোট টুকরো কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে দিনপঞ্জিতে লিখি, এই আর কি। পড়াশোনা এবং জীবিকার তাগিদে বেশ কিছুদিন ধরে প্রবাসে। এই মুহূর্তে আছি ভিয়েতনামের হো চি মিনে। তবে এর আগে চীনে ছিলাম বেশ ক'বছর। আমার অতি সাধারণ প্রবাস জীবনের সাধারণ কিছু টুকরো অভিজ্ঞতা, সাধারণ কিছু কথা বলার জন্যই এখানে লেখা।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment