ভালো থাকুন : শুক্রবারের স্বাস্থ্য পরামর্শ রোগের নাম চিকুনগুনিয়া

..
ভাইরাসের নাম চিকুনগুনিয়া। ১৯৫২ সালে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় এটিকে বলে চিকুনগুনিয়া, যার অর্থ ‘কোমর বাঁকা’। কেননা, এই সংক্রমণে হাড়ের জোড়া বা সন্ধিতে এত ব্যথা হয় যে রোগীকে কোমর বাঁকা করে হাঁটতে হয়। তবে চিকুনগুনিয়া সংক্রমণের লক্ষণ বা উপসর্গ ডেঙ্গুজ্বরের মতোই। সামান্য কিছু পার্থক্যও আছে।
জ্বর-ব্যথা-ফুসকুড়িচিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর মতোই আকস্মিক জ্বর, সঙ্গে ত্বকে ফুসকুড়ি বা দানা হয়। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন গিরায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়। ডেঙ্গু হলেও শরীর ব্যথা করে, তবে খুব তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। চিকুনগুনিয়ার বিশেষত্ব হচ্ছে, জ্বরের প্রথম থেকেই হাত-পায়ের ছোট গিরা, হাঁটু, কনুই, গোড়ালিতে প্রচণ্ড ব্যথা থাকতে পারে। কখনো গিরা ফুলে যেতেও পারে। সকালবেলা হাত-পা জ্যাম হয়ে যাওয়া বা মর্নিং স্টিফনেসও থাকতে পারে, যার কারণে অনেক সময় আর্থ্রাইটিস বা বাতরোগের মতো মনে হতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও ব্যথা সম্পূর্ণ সারতে বেশ কিছুদিন লেগে যেতে পারে। এমনকি পাঁচ-ছয় মাসও থাকতে পারে। এই গিরাব্যথাই ডেঙ্গু থেকে চিকুনগুনিয়াকে আলাদা করেছে। তা ছাড়া এতে দানা বেরোলেও ডেঙ্গুর মতো রক্তক্ষরণের ভয় নেই।

বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া
২০০৮ সালে প্রথম বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়। কিন্তু সত্যি বলতে কি, এই রোগের অস্তিত্ব আরও আগে থেকেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়া এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। জ্বর-ফুসকুড়ি-গিরাব্যথা থাকলে এবং রক্তে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন নেগেটিভ থাকলে চিকুনগুনিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। জ্বরের প্রথম সপ্তাহে রক্ত পরীক্ষা করে ও তারপর আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা সম্ভব। তবে এখনো আমাদের দেশে হাতে গোনা দু-একটি ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষা হয়। তবে পরীক্ষা জরুরি, তা নয়। উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা করা সম্ভব। অন্যান্য ভাইরাস সংক্রমণের মতোই চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসারও মূল লক্ষ্য উপশম। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল, জ্বর চলে যাওয়ার পরও ব্যথা থাকলে ব্যথানাশক ওষুধ, যথেষ্ট বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার এবং তরল খাদ্য গ্রহণই মূল চিকিৎসা। রোগে কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বা জটিলতা হবে না, এটা রোগীকে বোঝাতে হবে। তবে ব্যথার তীব্রতায় অনেকে কষ্ট পেতে পারেন। গিরা ফোলা ও ব্যথা ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকলে অন্যান্য সমস্যা দূর করার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
প্রতিরোধ 
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর কোনো টিকা নেই। এ ছাড়া একবার হলে আর হবে না, এমন নিশ্চয়তাও নেই। তাই প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। মশার আবাস ধ্বংস করা জরুরি। নগরবাসী ও কর্তৃপক্ষ উভয়কেই সচেতন হতে হবে। জমে থাকা পানি, খোলা ড্রেন, নর্দমা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশারির ব্যবহার, ফুলহাতা জামা ও প্যান্ট পরার মাধ্যমে শিশুদের রক্ষা করতে হবে।
mongsai79@gmail.com

Comments

Post a Comment

Thanks for you comment