২২ জনেও নেই সৌম্যর বিকল্প!

শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে ধাক্কা দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বোলিংয়ে সামনে থেকেই দিয়েছেন নেতৃত্ব। কিন্তু দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বৃথাই গেছে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স। কাল নেলসনে l ছবি: বিসিবিশুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে ধাক্কা দিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বোলিংয়ে সামনে থেকেই দিয়েছেন নেতৃত্ব। কিন্তু দলের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বৃথাই গেছে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্স। কাল নেলসনে l ছবি: বিসিবি
সৌম্য সরকার নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। বাজে ফর্মের কারণে দলের বাইরে চলে যেতে হয়েছে, তবু খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর বিকল্প। সৌম্য ব্যাটসম্যান হওয়ার পরও তাই তাঁর জায়গায় কাল খেলার সুযোগ পেলেন লেগ স্পিনার তানভীর হায়দার। দলের বাইরে থেকেও নিজের জায়গাটা বুঝি কেবল সৌম্যই ধরে রাখতে পারলেন!
কথাটা রূপক অর্থে বলা। সৌম্য দলে নেই মানে দলে তাঁর জায়গাও আসলে নেই। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ব্যাখ্যা মানলে তানভীরও দলে সৌম্যর বিকল্প হিসেবে আসেননি, এসেছেন একজন ‘অ্যাটাকিং লেগ স্পিনার’ হিসেবে, যিনি কিনা সাত-আটে ব্যাটিংও করতে পারবেন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের যে ব্যাটিং অর্ডার তাতে সাত নম্বর জায়গা নিয়ে এতটা উদাসীন হওয়ার কি সুযোগ ছিল? মুশফিকুর রহিমের মতো নির্ভরযোগ্য একজনের অনুপস্থিতিতে সেটা তো আরও নয়। বছর দুয়েক ধরে এই জায়গাগুলোয় নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরাই খেলে আসছেন এবং অনেক সময় ম্যাচ শেষ করে আসার দায়িত্বও তাঁদের পালন করে আসতে হয়। কাল ২ রানে আউট হওয়া তানভীরের কাছে কি সেই নির্ভরতা চাইতে পেরেছে বাংলাদেশ দল? ‘অ্যাটাকিং লেগ স্পিনার’ হিসেবেও তো সামান্যতম ভূমিকা রাখতে পারেননি তিনি! ৮ ওভার বল করে থেকেছেন উইকেটশূন্য।
দোষটা তানভীরের নয়। ১৫ জনের দলে থাকলে তিনি ১১ জনের দলে আসতেই পারেন। কিন্তু যে ম্যাচে ১৫ জনের দল দেওয়ার আগে তিনটি পরিবর্তনসহ একাদশই ঠিক হয়ে যায় এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে একাদশটি সংবাদমাধ্যমেও চলে আসে, সে ম্যাচের দলটা বোধ হয় আরও চিন্তাভাবনা করে করা যেত। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে সিরিজে ফেরার ম্যাচে একসঙ্গে তিনজনের ওয়ানডে অভিষেক ঘটানো নিয়েও আলোচনার দরকার ছিল আরও।
জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাঁর ক্লাসটাকে সব সময় বড় রাখতে পছন্দ করেন। একটা সময় যেমন দলের সঙ্গে বয়ে বেড়িয়েছেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেনকে, এখন যাঁর কোনো খবরই নেই। এবারের অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড সফরে দলের কলেবর বেড়ে গেছে আরও। হাতের কাছে যত ক্রিকেটার ছিলেন, প্রায় সবাইকেই সিডনির অনুশীলন ক্যাম্পে নিয়ে যান কোচ। নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে নেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায়ও রাখা হয় দুই ক্রিকেটারকে। বিপিএলের পর দলের সঙ্গে ২৩তম সদস্য হিসেবে যোগ হন মেহেদী মারুফ।
নিউজিল্যান্ডে আসার চার দিন পর মেহেদীকে দেশে ফেরত পাঠানো হলেও হাথুরুসিংহের পেছন পেছন রেলগাড়ির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন ২২ ক্রিকেটার। বিস্ময়কর হলো, এই ২২ জনের মধ্যে ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকও আছেন। অথচ সৌম্যের বিকল্প হিসেবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাঁর কথাও ভাবা হয়নি। কাল বাংলাদেশ দল যখন স্যাক্সটন ওভালে ম্যাচ খেলছে, মুমিনুল তখন তাইজুল-শুভাগতদের সঙ্গে বাইরের নেটে টেস্টের অনুশীলনে ব্যস্ত।
পরিবারে সদস্যসংখ্যা বেশি হলে কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবেই। বাংলাদেশ দলের ২২ সদস্যের বহরও এর ব্যতিক্রম নয়। ক্রাইস্টচার্চের একটা ঘটনার কথাই ধরুন। হ্যাগলি ওভালের প্রথম ওয়ানডের দিন দলের সঙ্গে থাকা নবীন এক ক্রিকেটার নাকি মাঠেই যেতে চাননি। দু-একজন মাঠে গিয়েও খেলা শেষ হওয়ার আগেই ফিরে যান হোটেলে। এটা ঠিক, এঁদের কেউই প্রথম ওয়ানডের ১৫ জনের দলে ছিলেন না। কিন্তু জাতীয় দলের সঙ্গে একই হোটেলে থেকেও কোনো কারণ ছাড়াই মাঠে যেতে না চাওয়াটা যে দলের প্রতি একাত্মতারও প্রকাশ নয়! জাতীয় দলে সুযোগ না পেয়েই জাতীয় দলের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে গেলে সেটার মর্যাদা বোধ হয় এ রকমই হয়।
সিরিজে খেলবেন না, এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলও কখনো এত লম্বা বিদেশ সফর করেছে কি না সন্দেহ। বাংলাদেশ দল সেদিক দিয়ে হয়তো নতুন দৃষ্টান্তই স্থাপন করল। তাতে ভালো হলো, নাকি খারাপ; সেটাই বড় প্রশ্ন। আপাতত প্রশ্নটার উত্তর—২২ জন নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কোনো সুফল এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সফরে দেখা যায়নি। বরং আশঙ্কা, সাফল্যের মধ্যে থাকা দলটাকে ভ্রাম্যমাণ এ গবেষণাগার না কোনোভাবে অস্থিতিশীল করে তোলে!
mongsai79@gmail.com

Comments