- Get link
- X
- Other Apps
আপডেট: ০০:০৭, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এই কাহিনিগুলো আমি পেয়েছি আমাদের সংগ্রাম চলবেই নামের একটা বইয়ের প্রথম পর্বে। এর সম্পাদক ছিলেন মো. আলী নকী ও মো. ইমাদউদ্দীন। প্রকাশক ‘অপরাজেয় সংঘ’। বইটি বেরিয়েছিল ১৯৮৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছিল ‘বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে’। এর ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন ১৯৮৮ সালের জানুয়ারি মাসে, কামরুল হাসান। শিল্পী কামরুল হাসান। ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কামরুল হাসান মারা যান। তার মানে তিনি বইটা প্রকাশিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেননি। কামরুল হাসানের আঁকা স্কেচ দিয়েই বইয়ের প্রচ্ছদ করা হয়। দুই খণ্ডের বইয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ফলে অনেক অজানা তথ্য, যুদ্ধের এবং শহীদদের বিষয়ে, আমরা জানতে পারি।
আমি শুনেছিলাম, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারিনি, প্রকাশের পর বইটা নিষিদ্ধ করা হয়। এবং সম্পাদকদ্বয়কে আমি চিনি না। এটা তাঁদের আসল নাম কি না, তা–ও আমার জানা নেই। ‘অপরাজেয় সংঘ’ সম্পর্কেও আর কিছু জানতে পারিনি। তবে বইয়ের শেষ মলাটে কবি শামসুর রাহমানের হাতের লেখায় কবিতা আছে, তাতে মনে হয়, শিল্পী কামরুল হাসান ও শামসুর রাহমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁদের।
ওই বইয়ে ব্রিগেডিয়ার এম এ মতিন, বীর প্রতীক, পিএসসি (অব.)-এর সাক্ষাৎকারে পাওয়া চারটা গল্প আজ আমি আপনাদের শোনাব।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বদলি হয়ে এম এ মতিন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন। ২৭ মার্চ খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে তাঁরা বিদ্রোহ করেন। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট এলাকা তাঁরা মুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। চট্টগ্রাম মুক্ত রাখার জন্য তাঁদের সাহায্যেও চলে যান যুদ্ধ করতে। পরে তাঁদের হেডকোয়ার্টার হয় ভারতের আগরতলার মেলাঘর। মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন সেক্টর কমান্ডার।
জুন মাসে এম এ মতিন জানতে পারলেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে চট্টগ্রামে আছেন। তাদের ভারতের মেলাঘরে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হলো শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে এবং আরেকজনকে (যাঁর নাম মতিন সাহেব বলছেন, তাঁর মনে নেই, তিনি পরে সেনাবাহিনীর মেজর হয়েছিলেন)।
আমি শুনেছিলাম, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারিনি, প্রকাশের পর বইটা নিষিদ্ধ করা হয়। এবং সম্পাদকদ্বয়কে আমি চিনি না। এটা তাঁদের আসল নাম কি না, তা–ও আমার জানা নেই। ‘অপরাজেয় সংঘ’ সম্পর্কেও আর কিছু জানতে পারিনি। তবে বইয়ের শেষ মলাটে কবি শামসুর রাহমানের হাতের লেখায় কবিতা আছে, তাতে মনে হয়, শিল্পী কামরুল হাসান ও শামসুর রাহমানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁদের।
ওই বইয়ে ব্রিগেডিয়ার এম এ মতিন, বীর প্রতীক, পিএসসি (অব.)-এর সাক্ষাৎকারে পাওয়া চারটা গল্প আজ আমি আপনাদের শোনাব।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বদলি হয়ে এম এ মতিন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে যোগ দেন। ২৭ মার্চ খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে তাঁরা বিদ্রোহ করেন। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট এলাকা তাঁরা মুক্ত রাখার চেষ্টা করেন। চট্টগ্রাম মুক্ত রাখার জন্য তাঁদের সাহায্যেও চলে যান যুদ্ধ করতে। পরে তাঁদের হেডকোয়ার্টার হয় ভারতের আগরতলার মেলাঘর। মেজর খালেদ মোশাররফ ছিলেন সেক্টর কমান্ডার।
জুন মাসে এম এ মতিন জানতে পারলেন, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে চট্টগ্রামে আছেন। তাদের ভারতের মেলাঘরে নিয়ে আসার দায়িত্ব দেওয়া হলো শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদকে এবং আরেকজনকে (যাঁর নাম মতিন সাহেব বলছেন, তাঁর মনে নেই, তিনি পরে সেনাবাহিনীর মেজর হয়েছিলেন)।
এই মাটির প্রতিটা ঘাসে, প্রতিটা বৃক্ষে, প্রতিটা অন্ন দানায় শহীদের রক্ত লেগে আছে, মিশে আছে শহীদদের স্বজনদের অশ্রু। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি
শাহাবুদ্দিন আহমেদরা এম এ মতিনের স্ত্রী, ছোট দুটো ছেলেমেয়ে নিয়ে হাঁটা পথে ছাগলনাইয়া হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। ১৪-১৫ মাইল একনাগাড়ে হাঁটতে হয়। এতটা পথ হাঁটতে গিয়ে মতিন সাহেবের মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভারতে আসার কিছুদিন পরে মেয়েটা মারা যায়।
এখন থাকল তাঁর ছেলেটা।
একদিন মেজর খালেদ মোশাররফ মেলাঘরে মতিন সাহেবকে ডেকে বললেন, ‘মতিন, তোমার ওয়াইফকে কি বলেছ, যদি আমরা মরে যাই, তোমার ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে হবে?’
এম এ মতিন জবাব দিলেন, ‘স্যার, ওটা বলার দরকার হবে না। না বললেও আমার ছেলে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। সেও মুক্তিযোদ্ধাই হবে।’
মতিন সাহেবের বলা আরেকটা গল্প।
জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার থানা অপারেশন হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মেলাঘর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে অপারেশন পরিচালনা করেন, পরে আবার মেলাঘরে ফিরে যান। সেই অপারেশনে নারায়ণগঞ্জেরই একটা ছেলে ছিলেন। হিন্দু পরিবারের ছেলে। ছেলেটার বাবা ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী, তিনি ব্যবসা করতেন নারায়ণগঞ্জেই। কিন্তু যুদ্ধের সময় তিনি আগরতলার মেলাঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের অদূরেই শরণার্থীশিবিরে থাকতেন।
নারায়ণগঞ্জে অপারেশন শেষে ফিরে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই সময় এক রাজাকারের গুলিতে ছেলেটা শহীদ হন। মেজর খালেদ মোশাররফ তখন মতিন সাহেবকে ডেকে বললেন, মতিন, এই ছেলেটা শহীদ হয়েছে। তার বাবা রিফিউজি ক্যাম্পে আছেন। তাঁকে ডেকে আনো। কিছু টাকাপয়সা দাও। আর তাঁকে একটু সান্ত্বনা দাও, সাহস দাও। মতিন সাহেব কথামতো সেই শহীদের পিতাকে ডেকে আনালেন মেলাঘরে। তাঁকে বলা হলো, আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মহান কাজ। আপনি একজন দেশপ্রেমিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা। আমরা যুদ্ধ করছি, করব। দেশ স্বাধীন হবে। আপনার ছেলের এই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।
মতিন সাহেব লক্ষ করলেন, এই পিতা তাঁর কথা ঠিকমতো শুনছেন না। তিনি উদাস। কী যেন ভাবছেন। মতিন সাহেব বললেন, দাদা, কী চিন্তা করছেন?
সদ্য সন্তানহারা পিতা জবাব দিলেন, ‘আমি চিন্তা করছি, ভগবান কেন আমাকে মাত্র একটা ছেলে দিল। আরেকটা দিলে
তো আজ আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাতে পারতাম।’
আরেকটা গল্প মতিন সাহেবের ইন্টারভিউ থেকেই শোনাই।
অক্টোবরের শেষ দিক। বিবির বাজারে এক হিন্দু ভদ্রমহিলা পাকিস্তানিদের গুলিতে আহত হয়েছেন। তাঁকে মেলাঘরে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তখন রক্ত কই পাওয়া যাবে? এই মুহূর্তে অপারেশনও সম্ভব না। ডাক্তার মোবিন তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া তিনি আর কীই–বা করতে পারেন।
মতিন সাহেবও সেখানে উপস্থিত। তাঁর টিবি হয়েছে। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
ভদ্রমহিলা বলছেন, ডাক্তার দাদা, আমি কি মারা যেতে পারি?
ডাক্তার বলছেন, আমরা সবাই মারা যেতে পারি। আপনিও পারেন, আমিও পারি। তবে আপনাকে আমরা মরতে দেব না। অবশ্যই আপনাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। ব্লিডিং হচ্ছে। আপনাকে রক্ত দিতে হবে। রক্ত কোথায় পাওয়া যাবে আমরা দেখছি। চেষ্টা চলছে যাতে ব্লাড জোগাড় করা যায়। তবে রক্ত এখনো জোগাড় করা যায়নি।
রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে। ভদ্রমহিলার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।
ভদ্রমহিলা ডাক্তার মোবিনের হাত ধরলেন। বললেন, ‘দাদা, আমি তো মরে যাব। তবে একটা কথা আমাকে দিন। অনুগ্রহ করে না করবেন না দাদা। কথা দিন।’
‘বলুন’—মৃত্যুপথযাত্রী নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার মোবিন বললেন।
‘আমি তো মরে যাব, কিন্তু কথা দিন, আপনারা দেশটাকে স্বাধীন করে যাবেন।’
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তালিকায় হয়তো এম এ মতিন সাহেবের (পরে ব্রিগেডিয়ার) মেয়েটির নাম নেই। আমরা কোনো দিনও জানব কি নারায়ণগঞ্জের ছোট ব্যবসায়ী পিতার ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের নাম? কিংবা কোথাও কি লেখা আছে মেলাঘরের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ নারীটির রক্তদানের পুণ্য কথা?
আহা, আমার বাংলাদেশ! ডিসেম্বরের আজকের সকালটা কী সুন্দর! নীল আকাশ ঝকঝক করছে রোদ্দুরে। স্বাধীনতার আলোয়। বিজয়ের গৌরবের আলোয়। এই মাটির প্রতিটা ঘাসে, প্রতিটা বৃক্ষে, প্রতিটা অন্ন দানায় শহীদের রক্ত লেগে আছে, মিশে আছে শহীদদের স্বজনদের অশ্রু। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
এখন থাকল তাঁর ছেলেটা।
একদিন মেজর খালেদ মোশাররফ মেলাঘরে মতিন সাহেবকে ডেকে বললেন, ‘মতিন, তোমার ওয়াইফকে কি বলেছ, যদি আমরা মরে যাই, তোমার ছেলেকে মুক্তিযোদ্ধা বানাতে হবে?’
এম এ মতিন জবাব দিলেন, ‘স্যার, ওটা বলার দরকার হবে না। না বললেও আমার ছেলে তার বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। সেও মুক্তিযোদ্ধাই হবে।’
মতিন সাহেবের বলা আরেকটা গল্প।
জুলাই মাসে নারায়ণগঞ্জের টানবাজার থানা অপারেশন হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মেলাঘর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে অপারেশন পরিচালনা করেন, পরে আবার মেলাঘরে ফিরে যান। সেই অপারেশনে নারায়ণগঞ্জেরই একটা ছেলে ছিলেন। হিন্দু পরিবারের ছেলে। ছেলেটার বাবা ছিলেন ছোট ব্যবসায়ী, তিনি ব্যবসা করতেন নারায়ণগঞ্জেই। কিন্তু যুদ্ধের সময় তিনি আগরতলার মেলাঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পের অদূরেই শরণার্থীশিবিরে থাকতেন।
নারায়ণগঞ্জে অপারেশন শেষে ফিরে আসছেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই সময় এক রাজাকারের গুলিতে ছেলেটা শহীদ হন। মেজর খালেদ মোশাররফ তখন মতিন সাহেবকে ডেকে বললেন, মতিন, এই ছেলেটা শহীদ হয়েছে। তার বাবা রিফিউজি ক্যাম্পে আছেন। তাঁকে ডেকে আনো। কিছু টাকাপয়সা দাও। আর তাঁকে একটু সান্ত্বনা দাও, সাহস দাও। মতিন সাহেব কথামতো সেই শহীদের পিতাকে ডেকে আনালেন মেলাঘরে। তাঁকে বলা হলো, আপনার ছেলে শহীদ হয়েছে। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া মহান কাজ। আপনি একজন দেশপ্রেমিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত পিতা। আমরা যুদ্ধ করছি, করব। দেশ স্বাধীন হবে। আপনার ছেলের এই ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।
মতিন সাহেব লক্ষ করলেন, এই পিতা তাঁর কথা ঠিকমতো শুনছেন না। তিনি উদাস। কী যেন ভাবছেন। মতিন সাহেব বললেন, দাদা, কী চিন্তা করছেন?
সদ্য সন্তানহারা পিতা জবাব দিলেন, ‘আমি চিন্তা করছি, ভগবান কেন আমাকে মাত্র একটা ছেলে দিল। আরেকটা দিলে
তো আজ আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠাতে পারতাম।’
আরেকটা গল্প মতিন সাহেবের ইন্টারভিউ থেকেই শোনাই।
অক্টোবরের শেষ দিক। বিবির বাজারে এক হিন্দু ভদ্রমহিলা পাকিস্তানিদের গুলিতে আহত হয়েছেন। তাঁকে মেলাঘরে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ভীষণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তখন রক্ত কই পাওয়া যাবে? এই মুহূর্তে অপারেশনও সম্ভব না। ডাক্তার মোবিন তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া তিনি আর কীই–বা করতে পারেন।
মতিন সাহেবও সেখানে উপস্থিত। তাঁর টিবি হয়েছে। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
ভদ্রমহিলা বলছেন, ডাক্তার দাদা, আমি কি মারা যেতে পারি?
ডাক্তার বলছেন, আমরা সবাই মারা যেতে পারি। আপনিও পারেন, আমিও পারি। তবে আপনাকে আমরা মরতে দেব না। অবশ্যই আপনাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব। ব্লিডিং হচ্ছে। আপনাকে রক্ত দিতে হবে। রক্ত কোথায় পাওয়া যাবে আমরা দেখছি। চেষ্টা চলছে যাতে ব্লাড জোগাড় করা যায়। তবে রক্ত এখনো জোগাড় করা যায়নি।
রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে। ভদ্রমহিলার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।
ভদ্রমহিলা ডাক্তার মোবিনের হাত ধরলেন। বললেন, ‘দাদা, আমি তো মরে যাব। তবে একটা কথা আমাকে দিন। অনুগ্রহ করে না করবেন না দাদা। কথা দিন।’
‘বলুন’—মৃত্যুপথযাত্রী নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে ডাক্তার মোবিন বললেন।
‘আমি তো মরে যাব, কিন্তু কথা দিন, আপনারা দেশটাকে স্বাধীন করে যাবেন।’
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের তালিকায় হয়তো এম এ মতিন সাহেবের (পরে ব্রিগেডিয়ার) মেয়েটির নাম নেই। আমরা কোনো দিনও জানব কি নারায়ণগঞ্জের ছোট ব্যবসায়ী পিতার ওই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের নাম? কিংবা কোথাও কি লেখা আছে মেলাঘরের হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ নারীটির রক্তদানের পুণ্য কথা?
আহা, আমার বাংলাদেশ! ডিসেম্বরের আজকের সকালটা কী সুন্দর! নীল আকাশ ঝকঝক করছে রোদ্দুরে। স্বাধীনতার আলোয়। বিজয়ের গৌরবের আলোয়। এই মাটির প্রতিটা ঘাসে, প্রতিটা বৃক্ষে, প্রতিটা অন্ন দানায় শহীদের রক্ত লেগে আছে, মিশে আছে শহীদদের স্বজনদের অশ্রু। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment