'দর্শক তৈরি আছে'

ভিন্নধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে যে ক'জন নির্মাতা ঢাকাই ছবিকে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম করছেন তাদের অন্যতম মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিজ্ঞাপন ও টিভি নাটক নির্মাতা হিসেবেও তিনি আলোচিত। নিজের কাজসহ দেশের টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রসঙ্গে অন্তরঙ্গ কথা বলেছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলে প্রচ্ছদ লিখেছেন মীর সামী

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ভেতর আর বাহিরটা জানতে হলে তার সঙ্গে মিশতে হবে। এই কথা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করবেন, যারা তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে চলাফেরা করেছেন বা মিশেছেন। সম্প্রতি নন্দন পরিবার হাজির হয়েছিল ফারুকীর বনানীর বাসায়। কলিংবেল চাপতেই তার দরজা খুলে গেল। সদর দরজা পার হতেই বসার ঘর। ঘরটা খুব সাদামাটাভাবে সাজানো-গোছানো। বসতে না বসতেই ফারুকী এলেন, সব সময়ের মতো একই ভঙ্গিতে, পরনে জিন্স প্যান্ট, টি-শার্টের ওপর ছাই রঙের সোয়েটার, মাথায় টুপি আর পায়ে কনভার্স। হাতে সব সময়ের সঙ্গী মোবাইল ফোন। জানা গেল, তিনি এখন নতুন তিনটি বিজ্ঞাপনে কাজের পাশাপাশি তার নতুন ছবি 'ডুব'-এর পোস্ট প্রডাকশনের কাজ নিয়ে দারুণ ব্যস্ত। শুরুতেই জানতে চাই ডুব ছবিটি নিয়ে। অনেক দিন ধরেই ছবিটির পোস্ট প্রডাকশনের কাজ করছেন। ছবিটি কবে নাগাদ মুক্তি দেবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন? ফারুকী বলেন, 'এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার জন্য খুব মুশকিল। এখনও যে কাজ আছে, তাতে মাসখানেক লাগবে। ছবিটি মুক্তি নিয়ে আমার প্রযোজকদের বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। কারণ ছবিটি বাংলাদেশ ছাড়াও কয়েকটি দেশে একযোগে মুক্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশে হলে ফেব্রুয়ারিতেই মুক্তি দিতে পারতাম। যেহেতু ছবিটি কয়েকটি দেশে মুক্তি দেওয়া হবে, সে কারণে কিছুটা সময় লাগবে। সেটা কবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না।'

ছবিটি কি কোনো নামি উৎসবে প্রিমিয়ার করবেন? 'পৃথিবীর সব নির্মাতাই চান তার ছবিটি একটা মর্যাদাপূর্ণ উৎসবে প্রিমিয়ার করতে। একটি ছবি যখন একটি ভালো উৎসবে প্রিমিয়ার হয়, তখন কিন্তু আমাদের সম্মানটা বেড়ে যায়। এই সম্মান একার নয়, পুরো বাংলাদেশের সম্মান। এখনও বলতে পারছি না কোন উৎসবে বা কখন ছবিটি মুক্তি পাবে।' বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, ছবিটি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবন অবলম্বনে নির্মিত। আসলে কি তাই? 'দেখুন এখানে দুই রকমের কথা আছে। প্রথমত আমাদের পরিষ্কার করে বুঝতে হবে জীবনী বা বায়োপিক কাকে বলে? আমি যদি কারও বায়োপিক বানাতে যাই তাহলে তার জীবনে যা যা ঘটেছে হুবুহু তাই দেখাতে হবে। তার জীবনের সব কিছুই সত্য হতে হবে তাহলেই বায়োপিক বা জীবনী হবে। আর আমি বায়োপিক বানাইনি। তাহলে কী করে দাবি করি, 'ডুব' হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক! আমি হুমায়ূন আহমেদের জীবন নিয়ে ছবি নির্মাণ করলে তার জীবনের ওপর রিসার্চ করতাম, পরিবারের মানুষের সঙ্গে আলাপ করতাম। কিন্তু ছবিটি তার জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত কি-না সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি না।'

তার মানে এটা হুমায়ূন আহমেদের জীবন অবলম্বনে না? 'দেখুন ছবিতে কয়েকটি ফিকশনাল চরিত্রের কথা বলেছি। এই চরিত্রগুলোকে নিয়ে একটি গল্প বলেছি। গল্প দেখে কারও যদি মনে হয়, এটা অমুক মানুষের জীবনের সঙ্গে মিল আছে, তাহলে মিল। যদি মনে হয়, হুমায়ূন আহমেদ না; এটা অমিতাভ বচ্চনের একটি ছবির গল্পের সঙ্গে মিল, তাহলে তাই। মোদ্দা কথা হলো, দর্শকরা যা মনে করবেন সেটাই। আমি একটি গল্প বলেছি।' বায়োপিক প্রসঙ্গে ফারুকী আরও বললেন, 'আনন্দবাজার যখন এই সংবাদ প্রকাশ করল তখন অনেকেই ফেসবুকে লিখেছেন_ ভাই, এটা কী হুমায়ূন আহমেদের জীবনী কি-না? আবার কেউ লিখেছেন কার জীবনী? তখন উত্তর দিয়েছি, এটা আমার জীবনী। এরপর ফেসবুকে লিখেছি, সেটা এখানেও বলতে চাই, ডুব আমার আত্মজীবনী, এ পর্যন্ত আমি যত ছবি বানিয়েছি, সব আমার আত্মজীবনী। আমি যে জীবনযাপন করেছি বা করিনি সেটাও আমার আত্মজীবনী, এমনকি আমার জন্মের আগের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্পার্টাকাসও আমার আত্মজীবনী, ফলে আমি মনে করি আমার সব চরিত্রই আমার যাপিত কিংবা অযাপিত জীবনের আত্মজীবনী।'

এই বিষয়টি নিয়ে তো হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেছেন। আপনি কাজটি ঠিক করেননি? 'প্রথম কথা হচ্ছে মেহের আফরোজ শাওনের কোনো কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না। উনি হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ওনার প্রতি আমার সম্মান, শ্রদ্ধা আছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। আমার কী উচিত হয়েছে, কী হয়নি, এই বিষয়ে অভিমত না ব্যক্ত করাই ভালো। আমি একটা ছবি বানিয়েছি। দর্শকরা দেখবেন, বোঝার চেষ্টা করবেন। দর্শক যদি মনে করেন, যে এটা হুমায়ূন আহমেদের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত, তাহলে অনুপ্রাণিত। আমি কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছি, এর চেয়ে বড় কথা হলো, ছবিটি দেখে দর্শক কী মনে করছেন। ছবির চরিত্রগুলোর সঙ্গে তারা রিলেট করতে পারছেন কি-না? চরিত্রগুলোর অসহায়ত্বকে খুঁজে পাচ্ছেন কি-না। আমাদের মানব জীবন খুব জটিল আর অসহায়। এই জীবনকে সাদা-কালোতে ব্যাখ্যা করা যায় না। এক লাইনে বলে দেওয়া যায় না, লোকটা ভালো বা খারাপ, এক লাইনে বলে দেওয়া যায় না, কাজটা ভালো না খারাপ। ডুব ছবিতে কয়েকটি জটিল জীবনের গল্প তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। দর্শকদের কাছে চরিত্রগুলোর অসহায়ত্ব, জটিলতা এবং আবেগ যদি প্রকাশ পায় তাহলেই আনন্দিত হবো। দর্শক যদি চরিত্রগুলোর প্রতি মায়াবোধ করেন তাহলে আনন্দিত হবো। ছবিটি দেখার পর যেন দর্শকরা বোঝেন, আহারে! আহারে জীবন! ফারুকী আরও বললেন, 'ডুব অফিসিয়ালি হুমায়ূন আহমেদের বায়োপিক না, আন অফিসিয়ালিও না। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করেছে। এই উছিলায় ভারতের একাধিক দৈনিকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়েছে।

আপনার আগের পাঁচটি ছবির সঙ্গে ডুবের মিল কতটুকু? 'আপনি যদি আমার ট্রাক রেকর্ড দেখেন তাহলে আন্দাজ করতে পারবেন।

ব্যাচেলরের সঙ্গে মেড ইন বাংলাদেশের কোনো মিল নেই, মেড ইন বাংলাদেশের সঙ্গে থার্ড পারসন সিঙ্গুুলার নাম্বারের মিল নেই, টেলিভিশনের সঙ্গে পিঁপড়াবিদ্যার মিল নেই। ঠিক সেভাবে

পিঁপড়াবিদ্যার সঙ্গেও ডুবের কোনো মিল নাই। এর কারণ আগে যা করে ফেলেছি তা করতে আর ভালো লাগে না। কিন্তু আমার প্রতিটি কাজে একটা সিগনেচার থাকে। আমার স্বভাব সবসময় নতুন জায়গা, নতুন রাস্তা আবিষ্কারের। সেই জায়গা থেকে ডুব অনেক বেশি ধ্যানমগ্ন। অনেক বেশি গভীর। বলা যেতে পারে, জাপানের মাউন্টফুজির মতো। জাপানে যখন বরফ পড়ে তখন বাইরে থেকে বরফে ঢাকা মাউন্টফুজিকে দেখলে মনটা শীতল হয়ে যায়। কিন্তু এই শীতলতার ভেতরে ফুটছে ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি। ডুব ছবির বাইরে আছে ছদ্মবেশ, বরফশীতল, কিন্তু ভেতরে আগ্নেয়গিরির মতো জলন্ত।'

টেলিভিশনের চলমান সংকট নিয়ে আপনার অভিমত কী? বিদেশি সিরিয়াল বন্ধে টেলিভিশনের ১৩টি সংগঠন মিলে এফটিপিও গঠন করেছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

দেখুন, হিন্দি সিরিয়ালের তথাকথিত দাপটের যুগেই কিন্তু আমরা ৫১বর্তী, ৬৯, ৪২০ করেছি। তখন কি আমাদের নাটক দর্শকরা দেখেননি? অবশ্যই দেখেছেন। এদিকে তারা বলছেন, টেলিভিশনের জন্য প্রোডাকশন বানাতে হলে এফটিপিওর অন্তর্ভুক্ত সংগঠনের সদস্য হতে হবে বা অনুমোদন নিতে হবে। এটা পাণ্ডাগিরি ছাড়া আর কিছু নয়। পাণ্ডাগিরি কী জিনিস, সেটা এফডিসিতে সদস্য হতে গেলেই অনেকেই হাড়ে হাড়ে টের পান। আমাকে তিনবার ইন্টারভিউ দিয়ে পাস করতে হয়েছিল। সেই ইন্টারভিউগুলো চ্যাপলিনের ছবিকেও হার মানাবে। একটু নমুনা দিই, একটা প্রশ্ন ছিল রাউন্ড দ্য উইকেট এবং ওভার দ্য উইকেট বলের পার্থক্য কী! সেই একই খেলা টেলিভিশনে যাতে শুরু না হয়, সে বিষয়ে আমার অবস্থান এবং বক্তব্য পরিষ্কার করেছি আমি। শিল্পীকে তার কাজ করার ক্ষেত্রে প্রাক-যোগ্যতার বিধান রাখার কোনোই প্রয়োজন নেই। সে তার মতো কাজ করবে। একটা কাজ প্রচারিত হলেই তাকে সসম্মানে সদস্য করে নিলেই হলো। পাশাপাশি এফটিপিও যেসব সমস্যার কথা বলছে, তারা কিন্তু কোনোভাবেই সমস্যার গভীরে যেতে পারেনি। সমস্যার আসল জায়গাটা হচ্ছে বিজ্ঞাপন আহরণ এবং অনুষ্ঠান বিক্রয়ে নানা রকম অসততা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের দাপট। মনে রাখতে হবে, কোনো কোনো টিভি চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগ যেদিন থেকে বিজ্ঞাপন আহরণের এই অসৎ পথ চিনে গেল, সেদিন থেকেই এ দেশের টেলিভিশনে ধ্বংসের বীজ বপন করা হয়েছিল। টিভি চ্যানেলগুলো ক্যাশ কিংবা কাইন্ডে সুবিধা দিয়ে ভাবল, 'আমার আর কন্টেন্টের পেছনে দৌড়ানোর দরকার কী? আমার আর ভালো ডিরেক্টরকে তোয়াজ করার প্রয়োজন কী?' অর্থাৎ সে ভালো কন্টেন্ট না বানিয়ে, কম খরচে বেশি মুনাফার রাস্তা পেয়ে গেল। এতে সে নিজেকে ভীষণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবল। কিন্তু এসব করতে গিয়ে বেশিরভাগ প্রডাকশনের ক্ষেত্রেই তার দর্শক সংখ্যা কমতে থাকল। এবার দর্শক কমে যাওয়াতে বিজ্ঞাপনদাতার কাছে তার ক্ষমতা আরেকটু কমে গেল। বিজ্ঞাপনদাতা বিজ্ঞাপনের রেট কমিয়ে দিতে চাইলে সে আরেক অসৎ রাস্তা আবিষ্কার করল। সে বলল, রেট কমানোর দরকার কী? আমি আপনাকে মিনিট বাড়িয়ে দিচ্ছি। ফলে অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বিরতি লম্বা হয়ে গেল। প্রথম দফায় সে চাপ দিল কন্টেন্টের ওপর। আর এ দফায় সে চাপ দিল দর্শকের ধৈর্যের ওপর। আপনি খারাপ কন্টেন্টও দেবেন, আবার দর্শককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে বলবেন_ এটা তো হবে না। ফলে যা হবার তাই হলো। বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই দর্শক হারাতে থাকল। কিন্তু আপনি যদি ভালো কন্টেন্ট করেন তাহলে দর্শক আছে_ তার প্রমাণ হলো হিন্দি সিরিয়ালের এই দাপটের যুগে ৫১বর্তী, ৬৯, হাউসফুল তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। আর হিন্দি বা কলকাতার চ্যানেলের দাপটের এই যুগেও আরমান ভাই সিরিজ, সিকান্দার বক্স সিরিজ, মন ফড়িংয়ের গল্প, ছিন্ন, রাতারগুল এক্সফ্যাক্টও, ল্যান্ডফোনের দিনগুলোতে প্রেমসহ তাহসান, তিশা, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিমের অসংখ্য কাজ জনপ্রিয় হয়েছে। ফলে আমি যে কথা বলতে চাচ্ছি, আমাদের টেলিভিশনের অনেক সমস্যার সমাধান নিহিত আছে একটা বিষয়ের মধ্যে। সেটা হলো, অনুষ্ঠানগুলোর প্রকৃত দর্শক নিরূপণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানোর মাধ্যমে। এ জন্য কন্ডিশনার এক্সেস সিস্টেম বা সেটটপ বক্সের আওতায় চলে যেতে হবে সব চ্যানেলকে। সরকার এটা বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছে। দর্শক সংখ্যা যখন জানা যাবে, তখন আর বিজ্ঞাপনদাতা চাইলেও কোনো সিন্ডিকেট বা কোনো অবৈধ উস্কানিতে মানহীন প্রযোজনার পেছনে টাকা ঢালতে পারবে না। তখন টিভি চ্যানেল বাধ্য হয়ে ভালো কন্টেন্টের পেছনে দৌড়াবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এ পদ্ধতি তো জনপ্রিয় কাজের ক্ষেত্রে খাটবে। কিন্তু সব ভালো কাজ তো জনপ্রিয় হবে এমন নয়। সেই অজনপ্রিয় কিন্তু ভালো কাজগুলোর তাহলে কী হবে? উত্তর সহজ_ টিভি চ্যানেলগুলো যখন অন্যান্য কাজ থেকে ভালো টাকা আয় করবে, তখন তাদের ব্র্যান্ড ইমেজের জন্য এমন কিছু কাজে বিনিয়োগ করবে।

এফটিপিও যখন আন্দোলন শুরু করল, তখন দেখলাম, এই আসল ব্যাপারটা তাদের দাবিদাওয়ার মধ্যে নেই। শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে ঘুরে এসে এ বিষয়ে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখেছিলাম। আমি দাবি করছি না_ আমার স্ট্যাটাসের ফলে তারা তাদের দাবিতে এটা ঢুকিয়েছে। তবে পরবর্তীকালে তাদের দাবিদাওয়াতে এগুলো সংযুক্ত হতে দেখেছি। কিন্তু মুশকিল হলো, তাদের আসল ঝোঁক লক্ষ্য করছি সুলতান সোলায়মান বন্ধ করা এবং নতুন ছেলেদের কাজ করার পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের সংগঠনের সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার দিকে। ফলে এ সংগঠনের গ্রহণযোগ্যতা এবং এর পেছনে যারা আছেন তাদের চিন্তার গভীরতা নিয়ে মানুষের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ হাসাহাসিও করছে।

সুলতান সোলায়মান বন্ধের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

এটা আমার কাছে হাস্যকর দাবি বলে মনে হয়। তাদের সব জ্বালা এখন সুলতান সোলায়মানের ওপর পড়েছে। বাংলাদেশের টিভিতে আমেরিকান, জাপানিজ, ভারতীয় সিরিয়াল চলেছে। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়াল চললে সমস্যা কী? বলা হচ্ছে, এটা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। তো অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় সিরিয়াল আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। কোনোদিন তো তাদেরকে এটা নিয়ে টুঁ শব্দও করতে দেখিনি। আবার অনেকেই বলছেন, আমেরিকান সিরিয়ালও আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। অনেকে এক সময় মনে করতেন, ব্যান্ড মিউজিক আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। এক সময় অনেকে মনে করতেন, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। শাপলা চত্বরে উপস্থিত কতিপয় মানুষ মনে করেছিল, মেয়েদের জিন্স প্যান্ট পরাও আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। এ কারণে তারা জিন্স প্যান্ট পরা এক নারী সাংবাদিককে পিটিয়েছিলও। আমাদের দেশের ট্র্যাজেডি হচ্ছে, এখানে ধর্মের কু ব্যাখ্যাকারী, অন্ধ মোল্লা এবং তথাকথিত সেক্যুলার সংস্কৃতিসেবী প্রায় একই ভাষায় কথা বলেন। এর চেয়ে বড় দুঃখের কিছু নেই।

আপনি টেলিভিশনের ক্ষেত্রে বিদেশি অনুষ্ঠানের পক্ষে কিন্তু সিনেমার ক্ষেত্রে বিদেশি সিনেমার বিপক্ষে কেন?

সিনেমার ক্ষেত্রে আমি বিদেশি সিনেমার বিপক্ষে- এটা ভুল তথ্য। সিনেমার ক্ষেত্রে যখন ঢালাও আমদানির কথা বলা হলো আমাদের চলচ্চিত্র উন্নয়নের (!) নামে, তখন আমরা ঢালাও বিরোধিতা করেছি। কারণ এর সঙ্গে উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। এর পেছনে এক ধরণের হীনমন্যতা প্রকটভাবে দেখা যাচ্ছিল, এবং এটা শতভাগ স্ক্রিনিং স্লট নিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেছিল। কিন্তু যখন নীতিমালা নিয়ে কথা হচ্ছিল তখন আমরা লিখিত প্রস্তাব, যেটা সরকারকে দেওয়া হয়েছিল সেখানে ৩০ শতাংশ স্লট আমদানিকৃত ছবির জন্য রাখার কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছি। আমার আপত্তি আমাদের এক্সপ্রেশনের প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ বন্ধ করার ক্ষেত্রে সব সময়ই ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু বাড়তি কর ও সীমিত স্ক্রিনিং স্লটের ভিত্তিতে এবং দেশীয় প্রযোজনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদেশের জন্য দুয়ার খুললে আমার কোনোই সমস্যা নেই। টেলিভিশনের স্লট ২৪ ঘণ্টা। তার মধ্যে এক-দুই ঘণ্টা বিদেশি অনুষ্ঠানের জন্য রাখলে সমস্যা কী? আমাদের প্রতিযোগিতাকে ভয় নেই। ভাইয়েরা আমার। বাংলাদেশের বহু তরুণ আছেন, যারা এ চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তার আগে ইন্ডাস্ট্রিকে কন্টেন্ট ড্রিভেন করতে হবে।

দেশের তরুণ নির্মাতাদের প্রতি আপনার প্রত্যাশা কী?

তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আমার একটা আহ্বান আছে। আমাদের দর্শক তৈরি আছে। তারা আমাদের ছবিগুলো লাইন দিয়ে দেখছে। আপনারা যখন ছবি নির্মাণ করতে যাবেন, তখন যেন ছবি বানানোর সহজ রাস্তায় হাঁটবেন না। সেই পুরনো গল্প আর লাউড অভিনয় নিয়ে কাজ করবেন না, পাশাপাশি দর্শক কিছু বোঝে না ভেবে তাদের বোঝানোর জন্য যা খুশি তা বলতে যাবেন না। লোক হাসানোর সহজ রাস্তায় না গিয়ে নতুন নতুন ঢঙের গল্প বলার চেষ্টা করুন। তাহলে আমাদের সিনেমা শিল্পে একটা বড় বিপ্লব ঘটবে। আপনারা আপনাদের প্রতিভার ওপর বিশ্বাস রাখবেন। কারণ, আপনি যে গল্পটি বলতে চান, সেটা আপনার মতো করে বললেও দর্শক দেখবেন। কোনো প্যাঁচ দিয়ে একটা গল্প বানানোর দরকার নেই। আমাদের চারপাশে লাখ লাখ গল্প আছে। সেখান থেকে আপনার গল্পটি বেছে নিন। ছবিটি দেখে যেন বুঝতে পারি, ছবিটিতে আপনি কী বলতে চেয়েছেন। আর এটা করার এখনই সময়। পাশাপাশি আপনাদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, একটু সাহিত্য, কবিতা আর পত্রিকা পড়ূন। শুধু ফেসবুকে থেকে নিজেরা নিজেদের পিঠ চুলকাবেন না। া

Comments