বাবা-ছেলের যুদ্ধ!

বাবা রডের সঙ্গে ছেলে টম ল্যাথাম। ছবি: ওয়েবসাইটবাবা রডের সঙ্গে ছেলে টম ল্যাথাম। ছবি: ওয়েবসাইট
এ যেন বাবা–ছেলের যুদ্ধ! সোহরাব-রুস্তমের মতো সে রকম বিয়োগান্ত বা ‘সিরিয়াস’ অবশ্য নয়। খুনোখুনি নেই, আছে দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি। আর সেই লড়াইয়ে আজ আবারও বাবাকে হারিয়ে দিলেন ছেলে। সেঞ্চুরি উদ্‌যাপন করতে গিয়ে টম ল্যাথাম যে অমন চওড়া হাসি দিলেন, সেটা বাবার উদ্দেশেই হয়তো। বাবা রড ল্যাথাম যে গ্যালারিতে ছিলেন।

রড লাথামের টেস্ট ক্যারিয়ার খুব সংক্ষিপ্ত। চারটির বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি। তবে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ১৯৯২ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বুলাওয়েতে। পরে ছেলে টমকে ক্রিকেটার বানিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের অপূর্ণতা ঘোচাতে চেয়েছিলেন হয়তো। সেঞ্চুরি পর দুই টেস্ট খেলেই ক্যারিয়ার শেষ, অতৃপ্তি তো থাকবেই।

ছেলে টমও হতাশ করেনি। ক্যারিয়ারের নবম ইনিংসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে বাবার মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। ওয়াল্টার-রিচার্ড হ্যাডলি এবং কেন-হামিশ রাদারফোর্ডের পর তৃতীয় কিউই বাবা-ছেলে জুটি হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরি। আবুধাবির সেই সেঞ্চুরির পর বাবার সঙ্গে খুনসুটির গল্পটা শুনিয়েছিলেন টম। বলেছিলেন, ‘আমার কিন্তু টেস্ট সেঞ্চুরি আছে’—বাবার এই কথা শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। এবার বাবাকে পাল্টা জবাব দেওয়া যাবে। টেস্ট সেঞ্চুরি তো আমারও আছে!

বাবাকে ছাপিয়ে গেছেন অনেক আগেই। টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরির পাশে তিন অঙ্কের ইনিংস যোগ করেছেন আরও চারটি। এর মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তো স্পেশাল। বাবার একমাত্র সেঞ্চুরিটি যে মাঠে, সেই বুলাওয়েতেই সেঞ্চুরি করেন টম ল্যাথাম। একই মাঠে বাবা-ছেলের টেস্ট সেঞ্চুরির বিরল কীর্তি।

রড ল্যাথামের ওয়ানডে সেঞ্চুরিও ছিল না। আজ টম পেয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ১৩৭ রানের দুর্দান্ত এই ইনিংস বাবা হ্যাগলির গ্যালারিতে বসে দেখলেন।


১২১ বলে, ৭ চার আর ৪ ছয়ে সাজানো ১৩৭ রানের ইনিংসটি দেখতে দেখতে কী ভাবছিলেন রড? নিজের ক্যারিয়ার ৪ টেস্ট আর ৩৩ ওয়ানডেতে থেমে গেলেও ছেলের এগিয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই তাঁর মনে অনির্বচনীয় আনন্দের জন্ম দিচ্ছিল। ম্যাচ শেষে বাবার সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা হবে টমের। ছেলে কিছু বলতে চাইলেও বাবা নিশ্চয়ই তাঁকে সে সুযোগ দেবেন না।

বুকে জড়িয়ে ধরে তাঁর মুখ থেকে একটি কথাই বেরিয়ে আসবে—‘টম তোমার জন্য গর্ব হয় আমাদের।’ চোখের কোণে আনন্দাশ্রু চিকচিক করবে রডের। কিন্তু সেটি যেন ছেলের চোখে না পড়ে, সে চেষ্টা তিনি করে যাবেন আপ্রাণ! ছেলের কাছে হেরে যাওয়ার চেয়ে বড় গর্ব একজন বাবার আর কিসে হয়!

Comments