দক্ষ শ্রমিক সংকটে ৯ খাত

 প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ০১:২১:৫৪

সমকাল প্রতিবেদক
শ্রমশক্তিতে দক্ষতা সংকটে ভুগছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাত। কৃষি খাতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তৈরি পোশাক খাতেও দক্ষতা সংকট রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এ সংকট ৪০ শতাংশের বেশি। এভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি খাতের শ্রমবাজারে দক্ষতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দু'দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের প্রথম দিনের এক অধিবেশনে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে গতকাল বুধবার চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। 

'বিভিন্ন খাতের দক্ষতা সমস্যা' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ। দেশের ৯টি শীর্ষস্থানীয় খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, নির্মাণ, স্বাস্থ্য, হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম, আইসিটি, চামড়াজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল, তৈরি পোশাক এবং জাহাজ নির্মাণ খাতের দক্ষতা সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়। এসব খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির কী পরিমাণ দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে এবং উত্তরণের পদ্ধতির বিষয় গবেষণায় তুলে ধরা হয়।

এতে বলা হয়, প্রতি বছর প্রত্যেক খাতে দক্ষ এবং আধা দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষতার অভাব সবচেয়ে বেশি কৃষি খাতে। এর পরেই রয়েছে পোশাক খাত। স্বাস্থ্য খাতে নার্সের সংকট রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অনেক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান 'বাংলাদেশের শ্রম বাজার : মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষতা সংকট' শীর্ষক আরেক গবেষণা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে একটি দুষ্ট চক্র কাজ করছে। স্কুলে নিম্নমানের অর্জন নিয়ে অনেকেই কারিগরি প্রশিক্ষণে যোগ দেয়। নিম্নমানের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিম্নমানের কর্মসংস্থানে যোগ দেয়। এর ফলে কম আয় করে। দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত মানব পুঁজি তৈরি করার জন্য এ দুষ্ট চক্রটি ভাঙতে হবে। 

বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুৎ ভর্তুকি নিয়ে গবেষণা উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. মনজুর হোসেন এবং ড. মোহাম্মদ ইউনুস। এতে বলা হয়, সোলার হোম সিস্টেমের (এসএইচএস) চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়ছে। গৃহস্থালি প্রয়োজন, ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোগ এমনকি কৃষি সেচে ডিজেলের পরিবর্তে এখন এসএইচএস ব্যবহার হচ্ছে। বহুমুখী ব্যবহারের ফলে ২০০৪ সালের ১ শতাংশ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এসএইচএসের ব্যবহার বেড়েছে ৪০ শতাংশ। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ৪৫টি পার্টনার এনজিওর মাধ্যমে ইডকল এসএইচএসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর বাইরেও কিছু এনজিও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ইডকল এবং অন্যান্য এনজিওর সেবার মধ্যে গুণগত তফাত রয়েছে। তবে সব ধরনের এসএইচএসের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। গ্রাহকের সংখ্যার পাশাপাশি ওয়াট বৃদ্ধির চাহিদাও বাড়ছে। চাহিদা প্রমাণ করে গ্রাহকরা উপকৃত হচ্ছেন। এসব বিবেচনায় ভর্তুকি হ্রাস করা হলে এসএইচএস সেবা ব্যাহত হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠান :উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ৫৭ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী রয়েছে। এসব মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে ২০৩০ সাল হবে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ এবং অর্থনীতি হবে জ্ঞানভিত্তিক।

তিনি বলেন, জাতীয় অগ্রগতিতে কোন ধরনের প্রকল্প কী পরিমাণ অবদান রাখবে, তা নিয়ে গবেষণালব্ধ ধারণা থাকা অপরিহার্য। সরকারের ইচ্ছা বিআইডিএসকে অর্থনীতির জন্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বিআইডিএস থেকে ২ থেকে ৩টি বিষয়ের ওপর মাস্টার ডিগ্রি এবং ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের পরিকল্পনাও রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ জনসংখ্যার লভ্যাংশ সুবিধা নিতে পারছে না। অল্প মজুরি এবং শ্রমের অদক্ষতার কারণে এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুধু পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে কাজ করলেই হবে না। পরিবেশের বাইরে আরও কিছু খারাপ প্রভাব পড়ে। এ জন্য সরকারের উচিত প্রকল্পের আর্থিক বিষয়টি বিশ্লেষণ করা। 

অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, ২৩ মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। কিন্তু এখানে অনেক দ্বৈততা যেমন রয়েছে, তেমনি দুর্বলতাও রয়েছে। বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারলে অনেক বেশি রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে রাতারাতি বিনিয়োগের পরিবেশের ব্যাপক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

Comments