রোহিঙ্গা সমস্যার সুযোগ নিতে পারে আইএস!

আপডেট: 
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে ফায়দা নিতে পারে। তাই মিয়ানমারের সরকারের প্রতি এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার সেনাপ্রধান। আজ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের ইংরেজি অনলাইন টুডে অনলাইন ডটকমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

মালয়েশিয়ার সেনাপ্রধান চলমান পরিস্থিতিতে আইএসের উত্থানের যে শঙ্কার কথা বলেছেন, তা যথার্থ বলে মনে করছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। 
টুডে অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মালয়েশিয়ার সেনাপ্রধান জেনারেল জুলকিফেলি মোহাম্মদ জিন এ সপ্তাহের প্রথম দিকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং লাইং এবং মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় তাঁর এই শঙ্কার কথা জানান। মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী আজ বুধবার এ কথা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জেনারেল জুলকিফেলি জেনারেল মিং অং লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা যদি যথেষ্ট ভালোভাবে এবং প্রজ্ঞার সঙ্গে না সামলানো যায়, তবে আইএস এ পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে। সংগঠনটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব বাড়াতে পারে এ সুযোগে। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও একই কথা বলেন জেনারেল জুলকিফেলি। 
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চলমান নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এটি এ অঞ্চলে জঙ্গিবাদের উত্থানে ভূমিকা রাখতে পারে। রোহিঙ্গাদের সমর্থকেরা এমন আশা করছেন যে এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের জন্য মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে পারে। 
রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। এ 
নিয়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের কূটনীতিক টানাপোড়েনও শুরু হয়েছে। 
রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় ক্ষোভ দেখা গেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক চলমান এই নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেশটির যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী খাইরি জামালুদ্দিন আসিয়ান জোট থেকে মিয়ানমারের সদস্য পদ স্থগিত করার বিষয়টি বিবেচনার মত দিয়েছেন। 
তবে মালয়েশিয়ার এসব ক্ষোভের বিষয়কে ভালোভাবে নেয়নি মিয়ানমার। গত মঙ্গলবার মিয়ানমারে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়। নাজিব রাজাকের গণহত্যার অভিযোগকে ‘অসমর্থিত এবং অযাচিত অভিযোগ’ বলে পাল্টা ক্ষোভ জানায় মিয়ানমার সরকার। 
মিয়ানমারে সহিংস নির্যাতনের শিকার প্রায় ২১ হাজার রোহিঙ্গা গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিদিন নৌকায় করে বা স্থলসীমান্ত দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। তিন সপ্তাহ ধরে এ এক নৈমিত্তিকতার অংশ হয়ে গেছে। গত মাসের শুরুতে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নারকীয় নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে এরপরও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মালয়েশিয়ার সেনাপ্রধান যে শঙ্কার কথা বলেছেন, তাকে যথার্থ বলে মানছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী। আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার চেয়ে এ সংকটে বাংলাদেশ বেশি ভুক্তভোগী। এ সমস্যার প্রাথমিক ভুক্তভোগী দেশ হলো বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানে এ সমস্যার ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় নেই। 
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী মনে করেন, এ সমস্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের যেমন সোচ্চার হওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। তিনি বলেন, এ সমস্যার বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে পাঠানো যেত। এ ছাড়া চীনের মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগও করতে পারত বাংলাদেশ।

Comments