প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারাও অস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন

ডিলারদের লাইসেন্স ফি কমল ৫ গুণ, নবায়ন ফি কমল ৪ গুণ * অস্ত্র কেনাবেচা ও মেরামতের সময় পরীক্ষামূলক ফায়ারিং করা যাবে
রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদাধিকারী এবং প্রথম শ্রেণীর সব কর্মকর্তা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধন করে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এতে সাংবিধানিক পদধারীদের অস্ত্রের লাইসেন্স আয়করমুক্ত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে অস্ত্র ব্যবসায়ীর (ডিলার) লাইসেন্স ইস্যু ফি এক লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ হাজার এবং নবায়ন ফি ২০ হাজার থেকে কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচা ও মেরামতের সময় পরীক্ষামূলক ফায়ারিংয়ের বৈধতা দিয়ে সংশোধন করা হয়েছে বিদ্যমান ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সংশোধিত নীতিমালা জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চার মাসের ব্যবধানে আগ্নেয়াস্ত্রের নীতিমালা সংশোধন করা হল। এর আগে গত ৩ আগস্ট ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর সব কর্মকর্তা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করলেও সবাই তা পাবেন না। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক যাকে যোগ্য মনে করবেন তিনি লাইসেন্স পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন। জেলা প্রশাসকের সুপারিশের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আবেদনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, আগের আগ্নেয়াস্ত্র নীতিমালায় লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু বিচারপতিদের কথা উল্লেখ ছিল। সংশোধিত নীতিমালায় তা রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক পদসমূহের কথা বলা হয়েছে। ফলে এখন থেকে নির্বাচন কমিশন (ইসি), সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ও বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা এর আওতায় পড়বেন। এ ছাড়া আগে জাতীয় বেতন স্কেলের ষষ্ঠ গ্রেডভুক্ত চাকরিরত বা অবসরে যাওয়া সরকারি ক্যাডার কর্মকর্তারা অস্ত্রের জন্য আবেদন করতে পারতেন। এখন থেকে প্রথম শ্রেণীর স্থায়ী যে কোনো কর্মকর্তা আবেদন করতে পারবেন। নীতিমালার ৩২.১(ছ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এ সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। একইভাবে সংশোধিত নীতিমালায় ৩২.১(ঙ) অনুচ্ছেদ ‘বিচারপতিবৃন্দ’-এর স্থলে ‘রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক পদে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ’ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচা ও মেরামতের সময় পরীক্ষামূলক ফায়ারিং বৈধ রেখে নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় ও মেরামতের সময় টেস্ট ফায়ারিং করা যাবে। এ ছাড়া আগের বিধান আত্মরক্ষা ও টার্গেট প্র্যাকটিসের উদ্দেশ্যে গুলি করার বিষয় বহাল রাখা হয়েছে। টেস্ট ফায়ারিংয়ের জন্য সর্বোচ্চ ৫টি গুলি ব্যবহার করা যাবে এবং তা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ন করবে। সংশোধনের আগের নীতিমালায় অস্ত্র ক্রয় বা মেরামতের ক্ষেত্রে টেস্ট ফায়ারিংয়ের সুযোগ ছিল না।
এ ছাড়া সংশোধিত নীতিমালায় অস্ত্রের ডিলার ও মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ইস্যু ফি এক লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ হাজার টাকা এবং লাইসেন্স নবায়ন ফি ২০ হাজার থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেফ কিপিংয়ের ক্ষেত্রে লাইসেন্স ফি ২০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার এবং নবায়ন ফি ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই নীতিমালায় বলা হয়- ব্যক্তি পর্যায়ে সর্বোচ্চ দুটি, প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬টি লাইসেন্স দেয়া হবে। আবেদনকারীর বয়স ৩০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হতে হবে। আগের মতোই স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিচারক, গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট পর্যায়ের কর্মকর্তাদের লাইসেন্স আয়করমুক্ত রাখা হয়। কোনো ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তরা লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে সাজা শেষ হওয়ার ৫ বছর পর দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিও আবেদন করতে পারবেন। সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়ার জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) ক্ষমতাবান থাকবেন। তিনিই আবেদনকারীর অস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করবেন। ডিসি আবেদনযোগ্য মনে করলে লাইসেন্স ইস্যু করার সুপারিশসহকারে প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় সম্মতি দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স ইস্যু করবে।

Comments