ধর্মের নামে অধর্ম নয়

আপডেট: 
গত বুধবার পেপসিকো ইন্টারন্যাশনাল ঘোষিত ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার গ্রহণ করতে গিয়ে মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের অফিস সহকারী মিরাজ হোসেন ধর্মের নামে অধর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বানে সমাজের প্রতিটি শান্তিকামী মানুষের আকুতি ও প্রত্যয়ই প্রকাশিত হয়েছে। মিরাজ হোসেন নিজেকে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমি ধর্ম পালন করি, ধর্ম মানি। কিন্তু ধর্মের নামে অধর্ম মানি না।’
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ধর্ম আর ধর্মের নামে অধর্ম এক নয়। ধর্মের নামে অধর্ম বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী জঙ্গিগোষ্ঠী সব সময়ই দাবি করে আসছে যে তারা ধর্ম রক্ষা করছে। কিন্তু বাস্তবে তারা ধর্মের সত্যকেই অস্বীকার করে চলেছে। তাদের বক্তব্য যে অসার সেটাই ফের প্রতিধ্বনিত হলো মিরাজ হোসেনের বক্তব্যে। তিনি যখন শুনলেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়েছে, তখন মোটরসাইকেলযোগে ধাওয়া করে একজন সন্ত্রাসীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এখানে আরও উল্লেখ্য, মিরাজের শাশুড়ি ও একজন গৃহকর্মী ওই অহত শিক্ষককে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। সে ব্যাপারেও মিরাজ তাঁদের সহায়তা করেছেন।
ধর্মের নামে অধর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবেএই ঘটনা প্রমাণ করে যে যারা সত্যিকার ধর্মপ্রাণ মানুষ তারা ধর্মের বিভেদকে পেছনে ফেলে আক্রান্তের পাশে দাঁড়ান, জীবনের হুমকি উপেক্ষা করে অন্যের প্রতি সহায়তার হাত বড়িয়ে দেন। ১ জুলাই হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডির সময় নিহত ফারাজ হোসেনের নামে প্রবর্তিত সাহসিকতা পুরস্কার একজন প্রকৃত সাহসী ব্যক্তির হাতেই গেছে। নিজের জীবনের মায়া না করে মিরাজ তাৎক্ষণিকভাবে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে অসীম সাহসী ও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হিসেবেই মানতে হবে।
ফারাজ হোসেন বন্ধুদের রক্ষা করতে গিয়ে নিজে জীবন দিয়েছেন। এই ঘটনা বিশ্বের সামনে যে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে, সেটাই প্রকৃত বাংলাদেশ। পেপসিকো গ্লোবালের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইন্দ্রা কে নুয়ির ভাষায়, ১ জুলাই আঁধারের মধ্যে ফারাজ যে আলো জ্বেলেছিলেন, তা সবখানে ছড়িয়ে দিতেই সাহসিকতা পুরস্কার। আলো জ্বালানো আরেক মিরাজকে পাওয়া গেছে। যিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সাহসী হতে প্রেরণা জোগাবেন। ধর্মের নামে যারা অধর্ম করে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে প্রেরণা জোগাবেন। এটাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশের চেতনা।
mongsai79@gmail.com

Comments