বান্দরবানের চিম্বুক এলাকার কৃষক তোয়ো ম্রোর সংসারে টানাটানি ছিল একসময়। তবে জুম চাষ ছেড়ে ফলের বাগান করে ভাগ্য বদলেছেন তিনি। আম, কুল, ড্রাগন ফল, পেঁপেসহ নানা ফল বিক্রি করে বছরে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা আয় করছেন। ফল বাগানের আয় দিয়ে দুই ছেলেকে ভালো স্কুলে পড়াশোনা করাচ্ছেন। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন।
বান্দরবান-চিম্বুক সড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে ২০ একরের মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন তোয়ে ম্রো। বাগানের ১৫ একর জমিতে কেবল আমগাছ লাগিয়েছেন তিনি। ফলদ বাগান ছাড়াও পাঁচ একর জমিতে বনজ বাগানও করেছেন। আমের বাগানে আম্রপালি, রাংগোয়াই, মল্লিকা, হাঁড়িভাঙাসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের আম রয়েছে। তবে আম্রপালি ও রাংগোয়াই বেশি। বাগানের পশ্চিম পাশে মিশ্র ফলের বাগান। সেখানে আপেলকুল, বাউকুল, ড্রাগন ফল, সফেদা, সাজিনা, তেজপাতা, লিচু, কমলা, লেবু, পেয়ারাসহ অসংখ্য ফলের গাছে রয়েছে। পাহাড়ি জমির বাগানে সেচের জন্য পাইপ লাইন দিয়ে বহু দূর থেকে পাহাড়ি ঝরনার পানি নিয়ে আসা হয়েছে। বাগানের কয়েকটি জায়গায় বড় ট্যাংকে পানি রাখা হয়েছে। সেখান থেকেও শুকনো মৌসুমে বাগানে পানি দেওয়া হয়। এ রকম একটি পরিকল্পিত বাগান চিম্বুক পাহাড় এলাকায় আর একটিও নেই বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
তোয়ো ম্রো বলেন, কৃষি বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৭ সালে বাগান শুরু করেছিলেন তিনি। রেড লেডি পেঁপে ও রাংগোয়াই আম দিয়ে শুরু করেছিলেন। প্রথম বছরে পেঁপে বিক্রি করে দুই লাখ টাকা পেয়েছেন। তখন থেকে জুম চাষ ছেড়ে তিনি বাগান করছেন। এখন বিভিন্ন ফল বিক্রি করে বছরে ছয়-সাত লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। আয়ের ওই টাকা অধিকাংশই এখনো বাগান পরিষ্কার করা, সেচের পাইপ লাইন স্থাপন কাজে বিনিয়োগ করছেন।
বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের বসন্তপাড়ায় সফল ফলচাষি হিসেবে পরিচিতি গড়ে উঠেছে তোয়ে ম্রোর। তাঁকে দেখে বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়ক এলাকার বহু ম্রো চাষি জুম চাষ ছেড়ে বাগান করছেন। বাগানে সেচসংকট, কীটপতঙ্গের আক্রমণসহ কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা তোয়ো ম্রোর কাছে সহযোগিতার জন্য ছুটে আসেন।
বসন্তপাড়ায় ২৫ পরিবার ম্রো বসবাস করেন। তোয়ো ম্রোর সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে তঁারাও এখন বাগান করছেন। রেংরুই ম্রো, লংচং ম্রো নামের দুই চাষি বলেন, ‘তোয়ো আমাদের পথ দেখিয়েছেন। শুধু আমাদের পাড়া নয়, আশপাশের নোয়াপাড়া, ম্রোলংপাড়া, রেণিক্ষ্যংপাড়া, ক্রামাদিপাড়াসহ চিম্বুক সড়কের কাপ্রুপাড়া ও দলাপাড়া পর্যন্ত এখন সবাই কমবেশি বাগান করে থাকেন’।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, তোয়ো ম্রো চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজনকে ফলবাগান গড়ে তুলতেও উদ্বুদ্ধ করেছেন। এখন চিম্বুক পাহাড়ে শত শত ম্রো বিশাল বিশাল বাগান করেছেন। তোয়ো শুধু নিজে বাগান করেন না, অন্যদেরও বাগানে উৎসাহিত করেন। এ জন্য বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের জন্য এবারে জেলা পর্যায়ে তাঁকে মনোনীত করা হয়েছে।
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment