সাহিত্যের বদলে যাওয়া চেহারা

নতুন বছর মানে বদলে যাওয়া সময়। এ সময়ে তাকাতে ইচ্ছা করে ভবিষ্যতের দিকে—কী ঘটছে, কী ঘটতে যাচ্ছে, বুঝে নিতে চায় সবাই। কেমন হতে পারে আগামী দিনের সাহিত্যের চেহারা? আগামী পৃথিবীর বাস্তবতাই বা কেমন হবে, এ সংখ্যার দুটি গল্পে থাকল তার এক কাল্পনিক রূপ
অলংকরণ: তুলিআড়াই হাজার বছর আগে জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষবিদ্যা আপন মায়ের পেটের ভাই ছিল। তাদের মায়ের নাম ছিল ফিজিকস বা কসমোলজি, আর মেটাফিজিকস নামে তাদের আরেকটা বৈমাত্রেয় ভাইও ছিল। পরবর্তী সময়ে, যুক্তি যখন মানবের নির্বিকল্প সারথি হয়ে উঠল, তখন থেকে জ্যোতিষবিদ্যা টিয়া পাখির দখলে চলে গেল। তার জায়গা আজ ফুটপাতে। অন্য ভাই জ্যোতি থাকে নাসায়, স্টিফেন হকিংয়ের প্রযত্নে। তবু আজকের যুক্তিশাসিত মানুষ টিয়া পাখি ভালোবাসে। ভবিষ্যকথন ভালোবাসে। মিথ্যা জেনেও জ্যোতিষীকে খোঁজে। এটা পরকীয়া প্রেমের মতোই। লুকিয়ে করতে হয়। ইংরেজিতে বেশ ভারিক্কি একটা শব্দ আছে: প্রোগনস্টিকেশন। এর মানে হলো, বর্তমানের আলামতের ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের চেহারা খানিক উন্মোচন করা। ক্যালকুলেশন থেকে বেশি, কিন্তু প্রফেসি থেকে কম। সাহিত্যের বদলে যাওয়া চেহারা নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে আমিও এই ধরনের আধা-প্রফেসি করে ফেলতে পারি, সেটার আগাম সাফাই গাইতে গিয়ে এটুকু বলে রাখলাম।
সাহিত্যের কাজ সৌন্দর্য উৎপাদন করা। বিস্ময় তৈরি করা। সেটা সে যেমন তার আধেয় দিয়ে করে, আধার দিয়ে করে, তেমনি তার চলাচল দিয়েও করে। কখন কোনটি ভূমিকা নেবে, আগাম আঁচ করা মুশকিল। কখনো কখনো না মুমকিনও বটে। কিন্তু সাহিত্যের একটা সামাজিক চেহারা আছে, রাজনৈতিক অর্থনীতি আছে, এবং সাংস্কৃতিক রাজনীতিও আছে। যাকে আমরা ‘নান্দনিকতা’ বলে শনাক্ত করি, তার পক্ষে এসবের প্রভাব এড়িয়ে অনপেক্ষ থাকা অসম্ভব। বরং এসবের সমবায়ে একটা জটিল রসায়ন সব সময়ই ঘটতে থাকে। সাহিত্য পাল্টায়। পাঠক পাল্টায়। রুচি পাল্টায়। প্রত্যাশাও পাল্টায় হয়তো।
ফেলে আসা বছরে সাহিত্যে বব ডিলানের নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে হট্টগোল যথেষ্টই হলো। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত শোনা গেল। এত শোরগোলের একটা বড় কারণ নিশ্চয়ই ডিলানের তারকাখ্যাতি! তা না হলে তার আগের বছর বেলারুশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও নন-ফিকশন লেখক সভেতলানা আলেক্সেইভিচ যখন সাহিত্যে নোবেল পেলেন, তখন এত শোরগোল হয়নি। কিন্তু এই দুই বছরের পুরস্কারের ধরন থেকে আমরা আঁচ করতে পারি, চিত্রটা কত বিচিত্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে। প্রথমত, সাহিত্যের সীমানা বড় হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সাহিত্যকে একটা বিশিষ্ট পরিবেশনা আকারে না ভেবে বরং সাধারণ প্রবণতা আকারে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। বব ডিলানের নোবেল এসেছে তাঁর সংগীতের মধ্যকার ‘কাব্যিক’ সৌন্দর্যের জন্য, সভেতলানা আলেক্সেইভিচের নন-ফিকশন বই ভয়েসেস ফ্রম চেরনোবিলকে সামনে রেখে নোবেল পুরস্কার তাঁর লেখার ‘পলিফোনিক’ অর্থাৎ বহুস্বর প্রবণতাকে সাহিত্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করল।
এর আগে, যাকে বলা হয় ডায়াসপোরিক ফিকশন, তা কিন্তু বেশ দাপটের সঙ্গে সাহিত্যের মঞ্চে হাজির ছিল। যদিও এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তাদের একজন সালমান রুশদি এখনো নোবেল পুরস্কার পাননি। পাবেন বলে মনেও হয় না। তবু ডায়াসপোরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ, তার দাপট শেষ হয়ে গেছে—এখুনি বলা যাচ্ছে না। বরং তা আরও দাপটের সঙ্গে চলচ্চিত্রে সঞ্চারিত হয়ে গেছে, এবং এ বাবদে কিছু ভালো চলচ্চিত্র তৈরিও হয়েছে। কিন্তু রুশদী মাপের লেখক আর একজনও দিতে পারেনি ডায়াসপোরা সাহিত্য। বরং তার আগে লাতিন আমেরিকায় জন্ম নেওয়া জাদুবাস্তববাদ কিন্তু বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখককে হাজির করতে পেরেছে। সেখানে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের মাপে আরও অনেককেই মাপা সম্ভব। কিন্তু আমার এভাবে দেখার মধ্যে যে ক্যাটাগরি-বিভ্রাট ঘটছে, এ বিষয়েও আমি সচেতন। জাদুবাস্তবতা যেখানে একটি প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক তত্ত্ব, ডায়াসপোরা সাহিত্যের আলাপটি সেখানে পাড়তে হবে একটি সামাজিক-ঐতিহাসিক বাস্তবতার ভেতর। আবার, নন-ফিকশন বা সংগীতের ভেতর ‘কাব্যিকতা’ বা ‘বহুস্বরপ্রবণতা’ আদতে ফর্ম বা আঙ্গিকের বিষয়। ফলে তারা এমন কোনো সাধারণ সমতলে দাঁড়িয়ে নেই যে, তাদের নিয়ে একটা তুলনামূলক আলোচনা করা সম্ভব হয়ে উঠবে। তার দরকারও নেই আপাতত। যেটি বলার চেষ্টা করছি তা হলো, বিশ্বসাহিত্য নানা দিক দিয়ে বদলায়: মতাদর্শে, আঙ্গিকে, কিংবা তার সামাজিক কিংবা ভূরাজনৈতিক প্রভাব বলয়ের সাপেক্ষে। এখন তার ঝোঁকটা আঙ্গিকগত হাইব্রিডিটির দিকে। এখানে হাইব্রিড মানে কিন্তু আক্ষরিক অর্থে যাকে বলে ‘সংকর’ তা নয়। এই সংকরপ্রবণতার সঙ্গে একটা ক্ষমতাসম্পর্কের লড়াই থাকতে হবে। এটিই তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের দিক। ফলে ‘অর্থোডক্স’ বা প্রথাসিদ্ধ সাহিত্য যতই নাখোশ হোক, এ ধরনের অপ্রচলনের স্বীকৃতি সাহিত্যে আমরা আরও দেখতে থাকব।
দুই.
বাংলা সাহিত্যে বদলের ধরনটি স্বাভাবিকভাবেই অত জটিল হয়ে ওঠেনি। অবশ্য বাংলাদেশে ‘সাহিত্য’ নামের একটা পদার্থ আদৌ এখনো আছে কি না, সেটা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ থাকতে পারে। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের সাহিত্য ছাপামাধ্যম-নির্ভরতা কাটিয়ে উঠেছে আন্তর্জালিক তৎপরতার উদ্ভাবনের সঙ্গে সঙ্গে। এটি নিশ্চয়ই বৈশ্বিক প্রবণতারই অংশ। প্রথমে ব্লগ, তারপরে ফেসবুকনির্ভর সাহিত্যিক তৎপরতার ওপর অনেকেই ব্যাপক আশাবাদের বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই বিপ্লব অংশত সফল হয়েছে, আর অংশত বেহাত হয়ে গেছে। সফল হয়েছে এই অর্থে যে পত্রিকা সম্পাদকের পেছনে লাইন দিয়ে কবিতা ছাপার কোশেশ এখন না করলেও চলছে। এমনকি পকেটের টাকায় লিটলম্যাগ না ছেপে একটা ফেসবুক গ্রুপ বানিয়ে নিয়েও ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী’ সাহিত্য করে ফেলা সম্ভব। আর বেহাত হয়ে গেছে এই অর্থে যে মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক সবকিছুকে মিনিয়েচারে পরিণত করে ফেলছে। ফলে ‘ফেসবুক সাহিত্য’ হয়ে উঠছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট! এতে প্রাথমিকভাবে সাহিত্যের নড়াচড়া বেড়েছে মনে হলেও আদতে সাহিত্যপাঠের সময়সীমা মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। দরকারি নির্জনতাটুকও ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্য ছাপামাধ্যম থেকে স্বাধীন হওয়ার আনন্দ উদ্যাপনেই ব্যস্ত!
আমার বলার অর্থ এই নয় যে অনলাইন মাধ্যমে সাহিত্যের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আছে নিশ্চয়ই, তবে অনলাইনে নবরূপে আত্ম-আবিষ্কারের প্রাথমিক উত্তেজনাটুকু কাটিয়ে ওঠার পরই তা বোধগম্য হবে। এখন আমরা এই মাধ্যমে আমজনতার ক্ষমতায়ন দেখছি, ফলে ভালো লাগছে। মেলায় চরকিঘোরা দেখার আনন্দ। ক্রমে এই মাধ্যমের ‘পপুলিস্ট’ চেহারা আর সরল গণতন্ত্র পরিষ্কার হতে থাকবে। তাতে এখানে আমাদের আত্মগর্বী সাহিত্য আর কত দিন উৎসাহ পাবে, সে বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ আছে।
তাই বলে ছাপামাধ্যম সাহিত্যের হাল একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে এমন নয়। বরং উল্টো। অন্য একটা লেখায় বলেছি, পত্রিকার জন্য তাকে ঘিরে থাকা লেখকগোষ্ঠী নানা কারণে দরকারি। শুধু লেখা ছেপে আর নামমাত্র সম্মানী দিয়ে সেটা আজকাল হয় না। পাশাপাশি, নব্য পুঁজি তার স্বত্বাধিকারীর আধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য সমাজে নানাভাবে প্রযুক্ত হতে চায়। এভাবে সাহিত্য পুরস্কার অনেক ক্ষেেত্র একটি ‘আউটলেট’ হয়ে উঠছে। সাহিত্য পুরস্কারের প্রবর্তনের মাধ্যমে সাহিত্যে পুঁজিবাদের অনুপ্রবেশের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে, সাহিত্য সম্পাদকের কাজ হয়ে উঠছে করপোরেট পুঁজি আর বাজারি সাহিত্যের মধ্যে যোগাযোগের পাটাতন তৈরি হয়ে ওঠার। কাজটা একা করা কঠিন, ফলে আমরা বিভিন্ন সাহিত্যিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে দেখছি। এরাই করপোরেট দুনিয়ার সাহিত্যগোষ্ঠী। সাহিত্য রচনা নয়, নান্দনিকতার চেহারা পাল্টে দেওয়া নয়, বরং সাহিত্যের সঙ্গে বাজারের সমঝোতা রক্ষা করাই এঁদের কাজ।
মজার বিষয় হলো, এই ক্রমেই সক্ষম হয়ে ওঠা অর্থনীতির এই যে লগ্নি পুঁজি, তার ভার সামলানোর মতো কোমরের জোর বাংলা সাহিত্যের নেই। প্রতিবছর অন্তত যেখানে গোটা পাঁচ-ছয়টা উল্লেখযোগ্য মাপের সাহিত্য পুরস্কার এখন দেওয়া হচ্ছে, তাতে বোঝা-ই যাচ্ছে, অচিরেই তারা পুরস্কার দেওয়ার মতো লেখক খুঁজে পাবেন না। ফলে পাস মার্ক কমতে থাকবে। বা এর মধ্যেই কমে গেছে সেটা। এ অবস্থায়, সাহিত্য পুরস্কারের পক্ষে সাহিত্যিক অনুপ্রেরণা হিসেবে বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে উঠবে। এতে বিপাকে পড়ছে বা পড়তে যাচ্ছে সাহিত্যিক সিন্ডিকেটগুলো। কারণ, তারা এই নব্য উচ্চাভিলাষী পুঁজিকে গুণগতভাবেই বেশি দিন ধরে রাখতে পারবে না। একধরনের রেশনিং ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের কোনো কোনোটি টিকে থাকবে, কেউবা নিজেদের সোশ্যাল ক্যাপিটাল ব্যবহার করে নামবে অন্য ব্যবসায়ে বা নেমে গিয়েছে এরই মধ্যে।
এ রকম একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থাকে যদি আমরা সাহিত্যের অর্থোডক্স পরিভাষার ভেতর দিয়ে বুঝে উঠতে চাই, তবে তার চেহারা কেমন হবে? প্রথমত, এই প্রযুক্তিগত বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সাহিত্য নিয়ে আমার মতো ঢালাও প্রফেসি করা একদিকে যেমন সহজ হয়ে উঠল, অন্যদিকে সাহিত্যের ইতিহাস লেখার চলমান প্রক্রিয়াটি ততই কঠিন হয়ে উঠল। কোন ইতিহাস লিখবেন আপনি? খুলনার মাসুদের প্রিয় লেখক কাঁঠালবাগানের জিতু। হাতিরপুলের সাব্বিরের প্রিয় লেখক মাগুরার মোহিত। ফলে অনলাইনের ছোট ছোট সাহিত্যিক কম্যুনিটিগুলোকে আমলে নিলে সাহিত্যের ইতিহাস একেবারেই অন্য রকম হয়ে যেতে বাধ্য। তারা তা লিখছেও নিজেদের মতো করে। এটাকেই আমরা উত্তরাধুনিক পরিস্থিতি বলে ভাবতে পারি। সাহিত্য প্রকাশের কোনো একচ্ছত্র ক্ষমতাবান মাধ্যম নেই। সাহিত্যিক মুরব্বিরা নানাভাবে বিক্রি হতে হতে নিজেদের ক্রেডিবিলিটি হারিয়ে ক্লিশে হয়ে গেছেন। একেকটি সাহিত্যিক পুরস্কার একেকভাবে সাহিত্যিক সিলসিলা তৈরি করছে। প্রতিটা সাহিত্যিক সমাজ নিজ নিজ বলয়ে সুখী।
এই উত্তরাধুনিক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপর্যয়ে পড়ছে সাহিত্যের ঐতিহাসিক। কবিতার কথা বলি: শোনা যায়, প্রতি শুক্রবার ঢাকা শহরে অন্তত শ পাঁচেক কবিতাপাঠের আসর বসে। বাড়ির ছাদে, বৈঠকখানায়, মার্কেটের ভূগর্ভে, অফিসের টপ ফ্লোরে, করিডোরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজে, নদীর পাড়ে, পার্কের কোনায়, বেড়িবাঁধের নির্জনে, সমিতির অফিসে—এ রকম আরও নানা জায়গায়। দারুণ কনসিস্টেন্সি আছে এদের কারও কারও। সম্প্রতি এক মার্কেটপ্লেসের আন্ডারগ্রাউন্ডে সংঘটিত হতে থাকা একটি সাপ্তাহিক কবিতাপাঠের আসর তার পঞ্চশততম (বা তার কাছাকাছি) অধিবেশনটি সম্পন্ন করল। বায়ান্ন সপ্তায় এক বছর ধরলে, গোটা ১০ বছর ধরে এই অধিবেশন চলছে। এই সরল গণতান্ত্রিক যুগে সাহিত্যের ইতিহাস এদের কীভাবে অবজ্ঞা করবে?
সময়ের অগ্রগতির ধারণার ভিত্তিতেই ইতিহাস রচিত হয়। আমার লেখার শিরোনামও তা-ই বলে। সাহিত্যের ‘বদলে যাওয়া চেহারা’ যখন বলছি, তখন সময়ের অগ্রগতির একটা ধারণা এর মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে থাকছে। কিন্তু সাহিত্যিক সমাজের দিকে যখন তাকাই, তখন ভিন্ন ভিন্ন সময় একই সময়সীমায় প্রযুক্ত আছে, দেখতে পাই। এটা আবার যত না উত্তরাধুনিক, তার চেয়ে বেশি পরাবাস্তব। এমন একটা পরিস্থিতি কল্পনা করুন, ভারতচন্দ্র আর ব্রাত্য রাইসু কাঁটাবনের ফুটপাত ধরে হাঁটছেন, অন্যদিকে সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ আর মাইকেল মধুসূদন দত্ত বসে চা পান করছেন যে দোকানে, সেখানে রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর আবৃত্তির ক্যাসেট বাজছে! সমর সেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেছে মাসুদ খানের, যেহেতু দুজনেই আকাশের পানে চেয়ে চেয়ে হাঁটছিলেন! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এমন আন্তর্জালিক পরিস্থিতিতেও তাঁরা—বিভিন্ন ধরনের অতীতে বসবাস করা এই বর্তমানের তরুণ লেখকেরা—পরস্পর-যোগাযোগহীন। নিজ নিজ প্রেজুডিস কিংবা মূর্খতার ভেতর বন্দী। প্রত্যেকেই নিজেকে ‘মেইনস্ট্রিম’ বলে ভাবছেন। ফলে সাহিত্যের যে ‘আধুনিকতা’র গোড়াপত্তন হয়েছিল তিরিশের দশকে, সেটি বর্তমানে কার্যত মৃত। যাকে বলে, ক্লিনিক্যালি ডেড। আমরা যারা আজও ভাবছি একটা দশকওয়ারি তালিকা বানিয়ে সেটাতে ঢুকে পড়ব, তারা তা করতে পারি বটে। কিন্তু তার আর বিশেষ ফায়দা নেই। আগামী বছরগুলোতে ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র সংকলন আর অনলাইন টপ-টেন তালিকার ধুন্দুমার পড়ে যাবে। ফলে আধুনিকতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার যেকোনো রেনেসাঁ-প্রচেষ্টাও বিফলে যাবে। বহু সমসাময়িক লেখকই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অতীতে বসবাস করতে থাকবেন। ফলে সাহিত্যের বদলে যাওয়া চেহারা মানে এই যোগাযোগহীনতার চেহারাটি অবগত থাকা। সাহিত্যের নিখিল পাঠকগোষ্ঠী আছে, এমন ভুল ধারণা সম্পর্কে অবগত থাকা। নিজেকে মেইনস্ট্রিম ভাবার অনর্থক চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
mongsai79@gmail.com

Comments