বিদেশে কর্মসংস্থান সাত জেলার অবদান ৩৬.৭৪%

..
কুমিল্লা জেলা থেকে গত বছর সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজের জন্য বৈধ পথে বিদেশে গেছেন। বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে জেলাওয়ারি হিসাবে কুমিল্লার পরই রয়েছে চট্টগ্রাম। তৃতীয় অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। শীর্ষ দশের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের আরও চারটি জেলা রয়েছে। চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী। 
ওপরের এই চিত্রই বলে দিচ্ছে, বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া কর্মীদের ৩৬.৭৪ শতাংশই এই সাত জেলার।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের তুলনায় গত বছর বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৫ সালে কাজ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যান ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন। ২০১৬ সালে কাজের জন্য বিদেশে গেছেন ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন। 
২০১৬ সালে কুমিল্লা থেকে বিদেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৩৫২ জন, যা বিদেশ যাওয়া মোট কর্মীর ১১.৬০ শতাংশ। ২০১৫ সালেও শীর্ষে ছিল কুমিল্লা। ওই বছর এই জেলা থেকে বিদেশে গেছেন ৫৪ হাজার ১৫২ জন।
অন্যদিকে ২০১৫ সালেও জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম। সে বছর চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে গেছেন ৩২ হাজার ৩৯৯ জন কর্মী। আর ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা থেকে চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন ৪৫ হাজার ৭৮০ জন (মোট কর্মীর ৬.১৫ শতাংশ), যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে নারী শ্রমিকের বিদেশ যাত্রায় চট্টগ্রাম বেশ পিছিয়ে। ২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৬৯ জন নারী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে গেছেন মাত্র ১ হাজার ৪৬০ জন (২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত)। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশে গেছেন ১ হাজার ৪১১ জন নারী কর্মী। 
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবস্থান ৫.৯৫%, চাঁদপুরের ৪.২৪%, নোয়াখালীর ৩.৮১%, লক্ষ্মীপুরের ২.৫২% ও ফেনীর ২.৪৭%।
গত সোমবার ওমানে যাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সারতে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম জেলা জনশক্তি কার্যালয়ে আসেন মো. রবিউল ইসলাম। তাঁর ছোট ভাই সে দেশে কাজ করছেন। রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেরা বড় হচ্ছে। তাদের ভবিষ্যৎ আছে। বেশি রোজগারের আশায় ওমান যাচ্ছি।’ 
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে (২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত) চট্টগ্রাম থেকে কাজের খোঁজে ওমানে গেছেন ২৮ হাজার ২০০ জন, কাতারে ৯ হাজার ২৫৩ জন, বাহরাইনে গেছেন ২ হাজার ২৫৪ জন, সৌদি আরবে গেছেন ২ হাজার ২৫১ জন, আরব আমিরাতে গেছেন ৬৩৪ জন, সিঙ্গাপুর গেছেন ১৪৮ জন। 
চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আরব আমিরাতে শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার আগে চট্টগ্রাম থেকে বেশি জনশক্তি রপ্তানি হতো দুবাইয়ে। কিন্তু এখন বেশি যাচ্ছেন ওমানে। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত লোকজন থাকায় চট্টগ্রামের কর্মীরা ওমানে যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। 
চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রপ্তানি কম হওয়ার পেছনে সৌদি সরকারের একটি শর্তকে দায়ী করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) নেতারা। 
বায়রার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান এমদাদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনজন পুরুষ কর্মী গেলে বাধ্যতামূলকভাবে একজন নারী কর্মী পাঠানোর শর্ত জুড়ে দিয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু চট্টগ্রাম জেলার নারীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। এই শর্ত বহাল থাকলে একসময় চট্টগ্রাম থেকে তো বটেই, দেশের অন্য অঞ্চল থেকেও অনেক পুরুষ কাজের জন্য সৌদি আরব যেতে পারবেন না। এই শর্ত প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের মাধ্যমে আমরা সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি।’
mongsai79@gmail.com

Comments