গুলশানে ডিএনসিসি মার্কেটে হঠাৎ হঠাৎ আগুনের ফুলকি

রাজধানীতে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেট থেকে গতকাল তৃতীয় দিনেও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। আর সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা l ছবি: প্রথম আলোরাজধানীতে গুলশান ডিএনসিসি মার্কেট থেকে গতকাল তৃতীয় দিনেও ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। আর সেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা l ছবি: প্রথম আলো

.রাজধানীর গুলশানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ধসে পড়া অংশে গতকাল বৃহস্পতিবারও আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তবে ভবনটি ধসে পড়ায় হঠাৎ কোথাও কোথাও আগুনের ফুলকি দেখা যাচ্ছে।
গুলশান ১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা গতকালও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে দাবি করেছেন। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে সবাইকে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গতকাল দুপুর ১২টায় ও বিকেল সাড়ে ৪টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুই ভবন থেকেই ধোঁয়া বের হচ্ছে। ধসে পড়া কাঁচা মার্কেটের ভেতর হঠাৎ হঠাৎ আগুনের ফুলকি চোখে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ভিড় করে আছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন শতভাগ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।’
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান ও সংস্থার পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হুসেন বলেন, ‘ভবনটি ধসে যাওয়ায় সব জায়গায় পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ জন্য কিছু জায়গায় ছোট ছোট আগুন তৈরি হচ্ছে এবং সেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। যেখানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেখানেই পানি দিচ্ছেন।’

গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের দুটি অংশ ছিল। এর মধ্যে আগুনে কাঁচা মার্কেট ধসে পড়েছে এবং পাকা মার্কেটের দোকানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল পাকা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের তাঁদের দোকান পরিষ্কারের কাজ করতে দেখা যায়। কাঁচা মার্কেটের দোকানিরা বিক্ষিপ্তভাবে বসে ছিলেন।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা গতকালও দাবি করেন, তাঁদের উচ্ছেদ করতেই পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে আগুন লেগেছিল কাঁচা মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। সকাল পর্যন্ত আগুন ওই মার্কেটেই ছিল। পরে পাকা মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মতৎপরতা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তোলেন।
দুপুরে এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই মেয়র আনিসুল হক বলেন, মার্কেটে আগুন লাগার পর সিটি করপোরেশনকে নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা কথা বলা হচ্ছে। সেসব ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বলেই এ সংবাদ সম্মেলন। তিনি বলেন, ‘দুই দিন ধরে ডিএনসিসিকে ঘিরে কিছু কিছু মন্তব্যে অস্পষ্টতার জন্ম হয়েছে। এটি পরিষ্কার করা আমাদের দায়িত্ব।’
অগ্নিকাণ্ডকে ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিত বলছেন—এ প্রশ্নে মেয়র বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে। নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত ফলাফলের জন্য দয়া করে অপেক্ষা করুন।’ এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ‘নাশকতা নয়, ৯৯ শতাংশ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা’—মেয়রের এমন মন্তব্য তদন্তকে প্রভাবিত করবে কি না?
মেয়র বলেন, ‘৯৯ শতাংশ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বলাটা ভুল হয়েছিল, এটা বলতে বললে বলব। তবে আমাদের কাছে মার্কেটটি সম্পর্কে যে তথ্য আছে, তাতে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যেকোনো সময় এ রকম দুর্ঘটনা ঘটতেই পারত।’
মেয়র সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন নথিপত্র উপস্থাপন করে বলেন, ধসে পড়া কাঁচা মার্কেটে নানান সময়ে মোট ৯০টি অবৈধ দোকান নির্মাণ করা হয়। দুটি খাবারের হোটেল নির্মাণ করা হয়। গ্যাসের সিলিন্ডারের মাধ্যমে নিয়মিত রান্না করা হতো। এসব অবৈধ স্থাপনা মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। বুয়েটের পরীক্ষায় ২০০৯ সালে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়। মার্কেটের ভার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন ব্যবসায়ীদের মার্কেটের ভার কমাতে অনুরোধ জানালেও তাঁরা আমলে নেননি।
ঝুঁকিপূর্ণ আরও মার্কেট
মেয়র বলেন, ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে থাকা আরও অন্তত সাতটি মার্কেট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোতেও যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর মধ্যে কারওয়ান বাজারের দুটি মার্কেট ও খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের নাম উল্লেখ করেন তিনি। এসব মার্কেটের বিষয়ে কী করা হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কোনো কিছু হলেই আদালতে যান। অস্থায়ী স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবসায়িক স্বার্থ ত্যাগ করে দোকানপাট যদি সংস্কার করতে হয়, তবে তা-ই করতে হবে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেই মার্কেটগুলো গড়তে হবে।
পাকা মার্কেটটি বুয়েট পরীক্ষা করবে
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পাকা মার্কেট খুলে দেওয়ার বিষয়ে মেয়র বলেন, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে পাকা মার্কেট ভবন পরীক্ষা করানো হবে। তিনি বলেন, ‘কাল-পরশু মার্কেট চালু হয়ে যাবে এটা ভাবার কারণ নেই। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পুনরায় মার্কেট চালুর ক্ষেত্রে কারিগরি ও আমলাতান্ত্রিক বিষয় জড়িত। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি চালু করার চেষ্টা করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে গুলশান কাঁচা মার্কেট ও পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা এবং ডিএনসিসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটি
ডিএনসিসি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। এর আহ্বায়ক কমিশনের সদস্য নুরুন নাহার ওসমানী। কমিটিকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সরেজমিন তদন্ত করে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
গতকাল কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
mongsai79@gmail.com

Comments