বিচিত্র ভুয়া খবরের বিস্তার রুখবে ‘টিকা’?

ভুয়া খবরের বিস্তার রুখবে ‘টিকা’?ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা বা ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি। এসব পড়ে সাধারণ মানুষ স্বভাবতই বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাই দেখে যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী একটি বিশেষ ‘টিকা’ বানানোর চিন্তাভাবনা করছেন। এটি লোকজনের মধ্যে ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধের ক্ষমতা গড়ে তুলবে!
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকেরা মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার উপযোগী একটি উপকরণ বানানোর চেষ্টা করছেন, যা কিনা সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের কাজে লাগবে। তাঁদের মতে, এটি কোনো তথ্যের মধ্যে সামান্য মিথ্যার মিশ্রণ পেলেই পুরো খবরটা বাতিল করতে পাঠকদের উৎসাহ জোগাবে।
সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং সিরিয়া যুদ্ধে ভুয়া খবর ছড়িয়ে অনেকে ফায়দা লুটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কেমব্রিজের গবেষক সান্ডার ফন ডার লিন্ডেন বলেন, ভুল তথ্য ভাইরাসের মতোই দ্রুত ছড়াতে পারে। তাঁরা বোধশক্তির উন্নয়নে মানুষকে সাহায্য করতে চাইছেন, যদি তাতে ভুল তথ্য প্রত্যাখ্যানের সামর্থ্য বা সম্ভাবনা বাড়ে। এই উদ্যোগ সফল হলে লোকে পরবর্তী সময়ে কেবল কম সন্দেহজনক খবর পড়তেই পছন্দ করবে।
গ্লোবাল চ্যালেঞ্জেস সাময়িকী এ বিষয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধ ছেপেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত দুই হাজার বাসিন্দা এ গবেষণা জরিপে অংশ নেন। তাঁদের সামনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে গবেষকেরা একের পর এক তথ্য তুলে ধরেন। এসবের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য যেমন ছিল, তেমনি ভিত্তিহীন দাবিও ছিল। জরিপে দেখা যায়, ভুল তথ্যের মিশেল থাকলে সেটা মানুষের মধ্যে কম প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নানা রকমের ভুয়া খবর ছড়িয়েছিল, যেমন: পোপ সার্ভিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং হিলারি ক্লিনটন কথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করেছেন—ইত্যাদি। ফেসবুকে লাখ লাখ মানুষ এসব খবর শেয়ার করেছিল। পরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা এসব বানোয়াট খবর বেছে বেছে মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করবে। গুগল এবং টুইটার কর্তৃপক্ষও এ রকম মিথ্যা খবর রুখতে চাপের মধ্যে পড়েছে।
এদিকে জার্মানির কর্মকর্তারা চলতি বছর আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ভুয়া খবরের বিস্তার ঠেকাতে সরকারের একটি বিশেষ শাখা চালুর প্রস্তাব করেছে। যুক্তরাজ্যের একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা গত সপ্তাহে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটিশ রাজনীতি দূষিত হয়ে যেতে পারে।
ভুয়া খবর আসলে কম? কোনো দিন ঘটেইনি—এমন কাল্পনিক কিছু লিখে নতুন ঘটনা হিসেবে প্রচার করে কাউকে বিনোদন দেওয়া বা বোকা বানানোই এ রকম কাজের উদ্দেশ্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উন্মুক্ত বলেই নির্বিচারে এসব ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে শত শত ওয়েবসাইট গজিয়ে উঠেছে, যারা সত্যিকারের সংবাদপত্রের অনুকরণে মিথ্যা ও বিদ্রূপাত্মক খবর প্রকাশ করছে। এসবের নেপথ্যে কখনো নিছক মজা যেমন আছে, তেমনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকে।
mongsai79@gmail.com

Comments