গল্প গুড্ডুবুড়ার চোর ধরা

অলংকরণ: আনিসুল হক
অলংকরণ: আনিসুল হকগুড্ডুবুড়ার বাবা গুড্ডুবুড়ার জন্য একটা খেলনা গাড়ি কিনে আনলেন। গুড্ডুবুড়ার বয়স আট বছর। সে কিছুই খায় না। না খেতে খেতে তার মাথার বুদ্ধি গেছে কমে।
খেলনা গাড়িটা ব্যাটারি দিয়ে চলে। একটা রিমোটও আছে।
গুড্ডুবুড়া বলল, বাবা, গাড়ি কিনে এনেছ, খুব ভালো করেছ। এবার একটা ড্রাইভার জোগাড় করে দাও।
বাবা বললেন, ড্রাইভার লাগবে না। এই যে রিমোট কন্ট্রোলের বোর্ড দেখছ। এটা টিপলে গাড়ি সামনে যাবে, এটা টিপলে পেছনে। এটা টিপলে ডানে যাবে, এটা টিপলে বামে।
গুড্ডুবুড়া গাড়ি পেয়ে ভীষণ খুশি। কিন্তু তার মাথায় তো বুদ্ধি কম। কাজেই সে সামনের জায়গায় পেছনের বোতাম টিপল, ডানের জায়গায় বামে। একটু পরই সে বিরক্ত হয়ে বলল, বাবা, একজন ড্রাইভার এনে দাও না।
ড্রাইভার কী করবে?
এই রিমোটটা টেপাটিপি করবে।
বাবা হাসতে লাগলেন। গুড্ডুবুড়ার মা, শুনেছ, তোমার ছেলে খেলনা গাড়ির রিমোট টেপার জন্যও ড্রাইভার চায়।
গুড্ডুবুড়া দেখল, তাদের দোতলা বাসার নিচে পাশের বাড়ির ড্রাইভার গাড়ি ধুচ্ছে।
সে ভাবল, আমার গাড়িটাও তো ধোয়া দরকার।
যা ভাবা, সেই কাজ। সে গাড়িটা বাথরুমে নিয়ে গিয়ে বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখল।
গাড়িটাই হয়ে গেল নষ্ট।
বাবা খুব মন খারাপ করলেন।
মা বললেন বাবাকে, মন খারাপ কোরো না। যার জন্য গাড়ি কিনেছ, সেই নষ্ট করেছে। তোমার মন খারাপ হলে তো চলবে না।
গুড্ডুবুড়া টেলিভিশনে দেখল, বিদেশিদের কম্বলগুলো কী রঙিন। আর তাদের ঘরে লেপটা সাদা। এটার রঙিন হওয়া উচিত।
সে তার রংতুলি নিয়ে লেপের কভারে রং করতে লাগল। ফুল পাখি লতা পাতা।
একটু পর তাদের বাসার কাজের ছেলে এসে বলল, ভাইয়া, কী করসেন? পুরা লেপ তো শেষ কইরা ফেলসেন! খালাম্মা দেখলে খবরই আছে। ভয় পেয়ে গুড্ডুবুড়া লেপটা নিয়ে গিয়ে বালতির পানিতে চুবাল।
মা-বাবা সব জেনে রাগে-দুঃখে কাঁদতে লাগলেন।
তারা গুড্ডুবুড়াকে নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার গুড্ডুবুড়াকে ভালো করে দেখলেন। সবকিছু পরীক্ষা করলেন। তারপর বললেন, আপনার ছেলের সব ভালো, তবে ও তো কিছু খেতে চায় না। সে জন্য ওর মাথার বুদ্ধি খুলছে না। গুড্ডুবুড়া তোমাকে সবকিছু ঠিকঠাক খেতে হবে। তুমি ভাত খাবে, মাছ খাবে, শাক খাবে, সবজি খাবে, ডাল খাবে, ডিম খাবে, দুধ খাবে, ফল খাবে। তাহলেই তোমার মাথায় বুদ্ধি হবে।
গুড্ডুবুড়া এখন ঠিকমতো খায়। আর প্রচুর খেলাধুলা করে। তার শরীরটাও এখন ভালো, বুদ্ধিও এখন খুব বেশি।
একদিন দুপুরবেলা সে তার ঘরে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই সে দেখতে পেল, একটা লোক জানালার শিক কেটে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে।
কী করা যায়।
তখন তার মনে হলো, তার ঘরে একটা খেলনা উড়োজাহাজ আছে। আর সেটা চালানো যায় রিমোট কন্ট্রোল টিপে।
আর তার আছে একটা খেলনা রাবারের সাপ।
সে তাড়াতাড়ি করে রবারের সাপটাকে সুতো দিয়ে বাঁধল ওই উড়োজাহাজের ওপরে। সাপের মাথাটা রইল ফণা তুলে।
তারপর সুইচ অন করে রিমোট কন্ট্রোল টিপে উড়োজাহাজটাকে সজোরে নিয়ে গেল চোরটার মুখ বরাবর।
এখন তো তার মাথাভরা বুদ্ধি। এখন সে কাজেও খুব দক্ষ।
তার লক্ষ্য হলো নির্ভুল। হঠাৎ চোরটা দেখতে পেল, একটা সাপ ফণা তুলে উড়ে আসছে তারই দিকে। সে ওরে বাবারে সাপ বলে জানালার শিক ছেড়ে পেছনের দিকে হেলান দিতেই ধপাস করে পড়ে গেল দোতলা থেকে।
তখন চারদিকে শুরু হলো হইচই।
চোরটা নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়েছে, না অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে, রাতের বেলা এই নিয়ে টেলিভিশন টক শোতে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।
আর পুলিশ বিভাগও গুড্ডুবুড়াকে পুরস্কার দিল একজন কুখ্যাত গ্রিলকাটা চোরকে ধরিয়ে দেবার জন্য।
mongsai79@gmail.com

Comments