এপ্রিলে একটি পোস্ট করার দুই মাস পর আরেকটি পোস্ট করা হয় ভিজিট বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে। ছবি: ভিজিট বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হলেও ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা ছিল না। কিন্তু পর্যটন বর্ষ-২০১৬ সফল করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) প্রচারণার জন্য যে কয়টি কার্যক্রম হাতে নেয়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন’।
কিন্তু বিগত বছরে বিটিবি কিংবা ভিজিট বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে এমন কোনো কার্যক্রমই খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা দেশীয় বা বিদেশি পর্যটকদের পর্যটন স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে আরও বেশি আকৃষ্ট করে তুলবে। ওয়েবসাইটে রয়েছে সাদামাটা তথ্য। অন্যদিকে বিটিবি ও ভিজিট বাংলাদেশের প্রতিটি ফেসবুক পেজে বছরজুড়ে ছবি–সংবলিত ৫০ থেকে ৬০টি মতো পোস্ট করা হয়। যার বেশির ভাগই আবার ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে পোস্ট করা হয়। এসব ছবির মধ্যে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি, বিভিন্ন দিবসে শুভেচ্ছা জানানো ও নিজেদের কর্মকাণ্ডের ছবি। ডিজিটাল কোনো মাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চালাইনি বিটিবি কর্তৃপক্ষ।
ডিজিটাল মাধ্যমে কোনো ধরনের প্রচারণা না চালানোর ব্যাপারে বিটিবির নির্বাহী কর্মকর্তা (বিপণন ও পরিকল্পনা) এ কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি ছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে।’ তাঁর দাবি, নতুনভাবে চুক্তি করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে। এ কারণে প্রচারণা একটু কম ছিল।
‘সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন’ কেমন হবে সে ব্যাপারে বোর্ড স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি।
ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানোর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে। কিন্তু শুরু থেকেই একই ধরনের অবস্থা দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়া ও ওয়েবসাইটে।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমোশনের বাইরে কিছু প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে সংস্থাটি। এই প্রচারণা কার্যক্রমের মধ্যে ছিল দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন মেলায় অংশ নেওয়া, ক্যাম্পেইন ও রোড শো। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি।
বিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পর্যটন বর্ষের জন্য আলাদা কিংবা বিশেষ কোনো বরাদ্দ তাঁরা না পাওয়ায় নিয়মিত বরাদ্দ থেকে এসব কার্যক্রম চালিয়েছে বিটিবি। কিন্তু ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া তাদের কার্যক্রম পর্যটককে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট ছিল কি না, জানতে চাইলে এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করার ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি ছিল।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সাবেক পরিচালক ও বেঙ্গল ট্যুরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, ‘এমন কোনো কর্মকাণ্ড ছিল না যার মাধ্যমে আমাদের পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের পরিকল্পনার ঘাটতির কারণে পর্যটন খাতে যে মন্দা চলছিল, তা কাটানো যায়নি পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেও।’
প্রসঙ্গত গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, পর্যটনশিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১৬ হবে ভিজিট বাংলাদেশ ইয়ার।
গত ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত মেগা বিচ কার্নিভ্যাল দিয়ে শুরু হয় এ পর্যটন বর্ষ। তবে এর প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে কাজ শুরু হয় আরও আগে। এর কার্যক্রম চালানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় বিটিবিকে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়ন, প্রচার ও বিপণন—এসব বিষয় নিয়েই মূলত পরিকল্পনা নেওয়া হয় ভিজিট বাংলাদেশের জন্য। এর কার্যক্রম শেষ হবে ২০১৮ সালে। আর তাই ভিজিট বাংলাদেশের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া এবং পর্যটন খাতকে আরও গতিশীল করতে সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করে। লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করা হয় ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিবছরে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত করা, এ খাতে ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে ১,১৩৬ কোটি টাকা) রাজস্ব আয় এবং সাড়ে তিন লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করা।
এসব পরিকল্পনার জন্য ২৩২ কোটি বরাদ্দ চায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এরপর প্রচারণার জন্য ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে বলে জানায় সরকারের অর্থ বিভাগ। আর পর্যটন আকর্ষণে ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেবে বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন। পর্যটন বর্ষ শেষ হতে চললেও বিটিবি এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পায়নি এ বিশেষ পরিকল্পনার জন্য।
উল্লেখ্য, সরকার এর আগেও ২০১১ সালে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সেবার বিটিবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। এর বেশির ভাগ টাকা-ই (একটি সূত্রমতে ৬০ কোটি) ফেরত গিয়েছিল কাজ করতে না পারায়। ফেরত যাওয়া এসব টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইনের জন্য। কিন্তু এর দরপত্র না হওয়ায় এ কাজও করা সম্ভব হয়নি।
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment