পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুর্ভাবনা

পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে বিজ্ঞানীদের দুর্ভাবনা
সৌরজগতের কথিত রহস্যময় গ্রহ নিবিরু নিয়ে অনেক দিন ধরেই রাশিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দাবি করে এসেছেন। বলা হচ্ছে, গ্রহটি সূর্যকে ঘিরেই দীর্ঘ ও ভিন্ন পথে আবর্তিত হয়ে থাকে। যা এবছরই পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে।প্রাচীন সুমেরীয় ও মায়ানদের বর্ণিত নিবিরু গ্রহটি ৩৪০০ বছর পর পর কক্ষপথে নিয়মিতভাবেই পৃথিবীকে অতিক্রম করে থাকে। সমস্যা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর ভারসাম্যে তা মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলে। গ্রহটির আকর্ষণের কারণে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু বিপরীত অবস্থান নেয়। ফলে আমাদের বাসযোগ্য গ্রহটিতে দেখা দেয় ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ও অগ্ন্যুৎপাতের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ। যা গোটা মানবজাতি ও প্রাণীজগতের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় বয়ে আনে।
অবশ্য মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র বেশ ক’জন বিজ্ঞানী এতদিন তা উড়িয়ে দিয়ে আসছেন। তাদের মতে, নিবিরু গ্রহটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রমের যে গুজব রটেছে তা ডাহা মিথ্যে ও বানোয়াট এক গুজব। এমন আশংকা দেখা দিলে গ্রহটির সন্ধান অবশ্যই মিলত। শুধু তাই নয় বিশাল এই গ্রহটি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে শুধু দূরবীন দিয়ে নয়, খালি চোখেও তা দেখা যেত।
অবশ্য এই আশ্বাস বাণীতেও থেমে নেই নিবিরু বিশ্বাসীরা। নাসা অস্বীকার করলেও রুশ বিজ্ঞানীদের মতামতের সাথে মিল খুঁজছেন তারা। মিলিয়ে দেখছেন সুমেরীয় কিংবা মায়া সভ্যতার বর্ণনার সাথে বর্তমানে সংঘটিত দুর্যোগগুলোকে। আলোচনায় আসছে ১৫শতকের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা নসট্রাদামুসের ভবিষ্যৎবাণীও। যিনি কিনা পৃথিবীর এই সভ্যতা নিয়ে বেশ কিছু ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, যার বেশিরভাগই ফলে গেছে। আবিস্কৃত তার সর্বশেষ লিপিতেও আছে এই দুর্যোগের বর্ণনা। যার কারণ হিসেবে বিশাল এক গ্রহের উল্লেখ রয়েছে।
হালের খবর, রুশ জ্যোতির্বিদদের সাথে নিবিরু বিষয়ে নাকি বেশ ক’জন মার্কিন বিজ্ঞানীও একমত হয়েছেন। তারাও বিশ্বাস করেন, নিবিরু আসছে। যা সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, মার্কিন মহাকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর (Aerospace Defense Forces) এর ফাঁস হওয়া রিপোর্টেও নাকি নিবিরু’র উদ্বেগজনক বর্ণনা এসেছে। বলা হয়েছে, আমাদের সৌরজগতের মধ্যে একটি গ্রহের প্রবেশ লক্ষ্য করা গেছে। এর চলার গতিপথ বিশ্লেষন করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। ADF এর আগের রিপোর্টেও নাকি কৃষ্ণগহ্বর থেকে রহস্যজনক গ্রহের সৌরজগতে প্রবেশের উল্লেখ ছিল।
রাশিয়ার একটি ওয়েবসাইটের খবর, গ্রহটির গতিবিধি মানব সভ্যতার জন্য হুমকি বলে যে রিপোর্ট ADF দেয় ২০০৫ সালে নাসার বিজ্ঞানীরাও তার সত্যতা পান। ঐ বছরের জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র বিজ্ঞানীরাও এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। নিবিরু গ্রহটি এখনও দেখা যায়নি বলে যে বিবৃতি নাসা দিচ্ছে, সেটির ব্যাখ্যাও প্রতিবেদনে রয়েছে।
নাসা’র কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ লয়েড অলব্রাইট ১৯৯৯ সালে ছবিতে আমাদের সৌরজগতে গ্রহটির অনুপ্রবেশ প্রত্যক্ষ করেন। মার্কিন নভোচারী এবং নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন লিজা নোয়াক ২০০৭ সালে রাশিয়ার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারেও এর সত্যতা জানান। সেবার তিনি বলেছিলেন, তারা বিষয়টি জানলেও চেপে যাওয়া হয়েছে। সেসময় তিনি বলেন, বাইবেলে বর্ণিত শেষ দিনের বিষয়টি তিনি আগে বিশ্বাস না করলেও এখন তা করেন।
সম্প্রতি লুইসিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডেনিয়েল হুইটমায়ার রহস্যময় গ্রহটির সৌরজগতে প্রবেশের কথা উল্লেখ করেছেন। এই পদার্থবিদ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তার মাসিক গবেষণাপত্রে বলেছেন, রহস্যময় এই গ্রহটি পৃথিবীর প্রায় ঘাড়ের উপর এসে পৌছাল বলে! সেটি সংঘটিত হলে, পৃথিবীর ভারসাম্যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে। যদিও পৃথিবীর জন্য এটি নতুন বিষয় নয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বহুকাল আগে থেকেই এটি হয়ে আসছে।
এর আগে, ১৯৮৫ সালে তিনি ও তাঁর সহকর্মী জন মাটেসে প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাদের হিসেবে সুমেরীয়দের বর্ণিত গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় অন্তত ১০ গুণ বড়। এই গ্রহের প্রভাবে পৃথিবীতে প্রতিবারই বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে।
mongsai79@gmail.com

Comments