‘পাহাড়ে একুশের দিনে মাতৃভাষার আন্দোলন’

পাহাড়ে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সেকথা না জানার অভিযোগ আছে।শিক্ষাক্রমের কারণে সারা বছর ‘আমার মাতৃভাষা বাংলা’ উচ্চারণ করলেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তাদের ছিল ভিন্নস্বর। পাহাড়ের যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছেন, তারা হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে মায়ের ভাষার কথা লেখেন। নিজ মাতৃভাষা এবং তার মাতৃভাষার পরিচয় নিয়ে ফেসবুকে হাজির হন।

 সাপোর্টিং পিপল অ্যাণ্ড রিবিল্ডিং কমিউনিটিস এর পক্ষ থেকে এই ছবিগুলোকে ‘একসঙ্গে কথা বলা’র উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি রাষ্ট্রে একটি রাষ্ট্রভাষা থাকলেও অনেক মাতৃভাষা থাকতে পারে এবং সব মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লড়াই আজকের নতুন নয়।তারা বলছেন, বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও অন্য অনেক ভাষার উপস্থিতি আছে,এটা সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাভাষীদের জানানোর জন্য তারা এধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বৈচিত্র্যে বিশ্বাস করেন বলেই এটা জানান দেওয়ার কাজটি করছেন।
 ১৮৫১ সালে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, “অগ্রে মাতৃভাষা না শিখিয়া পরের ভাষা শিক্ষা কোনও মতে উচিৎ নহে।” সে বহুকাল আগের হলেও পরিস্থিতি এখনও বদলায়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েই যেকোনও ভাষার যথাযথ বিকাশ নিশ্চিত করা যায় না, বা সেই ভাষাকে কার্যকর শিক্ষার বাহন করে তোলাও সম্ভব না।
 জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রশান্ত ত্রিপুরা তার ফেসবুক নোটে লিখেছেন, ‘‘ধারণাগতভাবে ‘মাতৃভাষা’ আর ‘রাষ্ট্রভাষা’ আলাদা। কিন্ত তাদের সম্পর্ক ও পার্থক্য নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে আমাদের দেশে।’’
নিজ নিজ মাতৃভাষা জানান দেওয়ার এই অনলাইন আয়োজন বিষয়ে মুক্তাশ্রী চাকমা বলেন, ‘ভাষার জন্য রক্ত দেওয়ার মধ্যে যে গর্ব, তার প্রতিফলন হওয়া চাই, এই বাংলাদেশে বা অন্যদেশে যে সকল ভাষা আছে সব ভাষার প্রতি মর্যাদা দেখিয়ে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা গত কয়েক বছর কিছু কাজ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এখনও জনগণের মধ্যে অন্যের ভাষাকে শ্রদ্ধা করার প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি না।’
 তিনি  বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনে অনেক অরুণরা বলেন,‘তাদের চেহারা পোশাক ভাষা আলাদা হওয়ার কারণে পথেঘাটে চলতে ঠাট্টার আদলে কতধরনের অপমানজনক বাক্য শুনতে হয়।’ একজন বাঙালি যে কিনা নিজের ভাষা নিয়ে গর্ব করে, তারতো অন্য এক জাতির ভাষাকে অপমান করার বা নিচু দেখানোর কথা না। তার মানে সে জানে না দেশে আরও ভাষা আছে। যেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জানতে পারে বাঙলার মতো দেশে আরও অনেক ভাষা আছে, যাদের নিজস্ব বর্ণমালাও আছে। সে জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ।’’
মুক্তাশ্রী চাকমা আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে বসবাসকারী আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা বাংলা নয়, সেটাও বুঝা দরকার। একথা বলে আমরা আলাদা হতে চাই, তা নয়। বরঞ্চ আমরা এটাই বলতে চাই যে, আমাদের নিজ নিজ ভাষা ও ঐতিহ্য আছে এবং এ দুটো নিয়েই একজন আদিবাসী ও একজন বাংলাদেশি নিজ নিজ পরিচয়ে গর্বিত। এটা আমাদের বুঝতে হবে, এই বোঝাটা এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মাঝে গড়ে ওঠেনি।’
mongsai79@gmail.com

Comments