১৯৬৩ সালের একদিন। কয়েক সপ্তাহ আগেই সীমানা নিয়ে চীন-ভারত যুদ্ধ শেষ হয়েছে। চীনা সেনাবাহিনীর এক সার্ভেয়ার ভারতে ঢুকে পড়ে গ্রেপ্তার হলেন। সেই থেকে আটকা পড়ে আছেন ওয়াং ছি নামের ওই চীনা ব্যক্তি।
ওয়াং ছির বয়স এখন আশির কোঠায়। এত দিনে ভারতে থেকে একটা দেশি নামও পেয়ে গেছেন রাজবাহাদুর। ঘরসংসার করেছেন। তিনটি সন্তানের বাবা। তবে সময় কিংবা দূরত্বের ব্যবধান দেশে ফেরার আকুতি কমাতে পারেনি তার। এর মধ্যে মাকে হারিয়েছেন। সারা জীবন ছেলের অপেক্ষায় কাটিয়ে ২০০৬ সালে চোখ মুদেছেন তিনি।
ওয়াং ছির ভাষ্য, চীনা সেনাবাহিনীর জন্য সীমান্তে সড়কের মাপজোখ করতে গিয়ে ভুলে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন তিনি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য তা বিশ্বাস করেনি। আটকের পর প্রায় সাত বছর জেলে কাটে তাঁর। ১৯৬৯ সালে জামিন পান। পুলিশ তাঁকে নিয়ে মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রামে রেখে আসে। সেই থেকে ওয়াং ছিকে ভারত ছাড়তে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি ভারতীয় নাগরিকত্ব বা বসবাসের কোনো অনুমতিও। ছির চীনে থাকা স্বজনেরা বলেছেন, ভারত ত্যাগ করার জন্য তাঁর কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগবে।
ওয়াং ছি যুদ্ধবন্দী কি না তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়। ভারত যাদব নামে একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, এর মধ্যে ‘কিছু ঘাটতি’ এবং ‘আগ্রহের অভাব’ আছে। ভারত যাদব বলেন, ‘ছির কাজকর্মে কোনো কিছু সন্দেহজনক নেই। তিনি ফিরে যেতে চাইলে আমরা তাঁকে সাহায্য করতে চেষ্টা করব।’ চীনা দূতাবাস ২০১৩ সালে ওয়াং ছিকে একটা পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সে পর্যন্তই। সরকারি কাজের ধীরগতি ওয়াং ছির ইতিমধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহরকে করে তুলেছে আরও বেশি যাতনাময়।
সময় থেমে থাকে না। ১৯৭৫ সালে সুশীলা নামের এক ভারতীয় তরুণীর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুরু করেন জীবনের আরেক পর্ব। অজানা-অচেনা ভিনদেশির সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় বাবা-মায়ের ওপর প্রথমে খেপলেও সুশীলা অল্প দিনেই মানিয়ে নেন।
ওয়াং ছি শেষ পর্যন্ত চীনে যেতে পারবেন কি না, তা আদৌ স্পষ্ট নয়। আর এত দিন পর মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারলে ভারতে আর আসবেন কি না, তা-ও একটা প্রশ্ন। ছির নিজের মনে অবশ্য কোনো সংশয় নেই। ‘আমার পরিবার এখানে। আমি আর কোথায় যাব?’—বিবিসির প্রতিবেদককে ছির জবাব। তাঁর কোলে তখন খেলছিল নাতনি।
সুশীলার মনের কোণে কেন যেন ভয়, ‘ও যেন ফিরে আসে সেটাই আমার আশা।’
mongsai79@gmail.com
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment