উইওয়ার্কের অভীক

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে উইওয়ার্কের কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন একজন নতুন উদ্যোক্তা  l ছবি: সংগৃহীতযুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে উইওয়ার্কের প্রধান কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৌশল পরিচালক বাংলাদেশের অভীক গাঙ্গুলি। তাঁর প্রধান দায়িত্ব হলো সফটওয়্যার প্রকৌশলীদের একটা বড়সড় দল গঠন করে প্রতিষ্ঠানের মতাদর্শে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করা। আর সেই দলের নেতৃত্ব দেওয়া। এমন বড় একটা প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় পদে থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন—গত শনিবার মুঠোফোনে তা-ই জানতে চাওয়া হয়েছিল অভীকের কাছে।
অভীক গাঙ্গুলির অভিজ্ঞতা জানার আগে উইওয়ার্ক সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ বা স্টার্টআপ শুরুর জন্য একসঙ্গে বসে কাজ করার জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে বড় কোনো জায়গা ভাড়া করে কাজের জন্য উপযুক্ত করে নেওয়াটা খুব ব্যয়বহুল। বিশেষ করে স্টার্টআপগুলোর জন্য। ঠিক এই সমস্যার সমাধানে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘উইওয়ার্ক’। তারা বড়সড় জায়গা, কোনো ক্ষেত্রে পুরো ভবন ভাড়া নিয়ে আধুনিক সব সুবিধার কর্মক্ষেত্র তৈরি করে। স্টার্টআপগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী জায়গা ভাড়া নিয়ে সরাসরি কাজ শুরু করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের ৩৩টি শহরে উইওয়ার্কের কর্মক্ষেত্র আছে, প্রতিষ্ঠার পর সাত বছরে ১ হাজার ৬৯০ কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে উইওয়ার্ক।
অভীক গাঙ্গুলিগত বছরের জানুয়ারিতে উইওয়ার্কে যোগ দেন অভীক। প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমার লক্ষ্য হলো একদম শূন্য থেকে শুরু করে কোনো কিছুকে একটি অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নেওয়া। উইওয়ার্কে আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি। এখন সব মিলিয়ে আমাদের সাতজন প্রকৌশলীর দল। আগামী দুই বছরে এই সংখ্যা ৩০-এ নিয়ে যেতে চাই।’
২০০৭ সালে তিনি পড়াশোনা শুরু করেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। বাংলাদেশ থেকে সেবারই প্রথম তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া। হঠাৎ করে এমন বহুসংস্কৃতির মানুষের একটি দেশে গিয়ে অভীকের মানিয়ে নিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ, সে অভিজ্ঞতা তাঁর নবম শ্রেণিতেই হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে অভীকের বাবা-মা জানতে পারেন ভারতের মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজের হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তির জন্য ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে একটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। অভীক পরীক্ষা দিলেন, বৃত্তিসহ পড়াশোনার সুযোগ পেলেন।
অভীক বলেন, ‘বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা শুরুর পর থেকেই একধরনের দায়িত্ববোধ ও স্বাধীনতা চলে আসে। আমার সব কাজ আমাকেই করতে হবে, সময়ের মধ্যে করতে হবে, ভুল করার সুযোগ নেই। সেখানে নানা রকম ব্যক্তিত্বের নানা মানসিকতার বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে হয়েছে। সেই চার বছর আমার জীবনের একটা মোড় ছিল বলা যেতে পারে।’
দক্ষিণ ভারতের একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেন। এরপরে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা শুরু—প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির স্যান হোজে ক্যাম্পাস এবং পরে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলি ক্যাম্পাসে। তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড অপারেশনস রিসার্চ।
স্নাতকোত্তর শেষে একরকম বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই পিএইচডি শুরু না করে যোগ দেন প্রথম চাকরিতে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলস ফারগোতে জ্যেষ্ঠ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরপর শুরু হয় তাঁর উইওয়ার্কে কাজ। অভীকের ভাষ্যমতে, অনেক মানুষের জীবন স্পর্শ করার সুযোগ আছে উইওয়ার্কে।
কাজের বাইরে ভ্রমণ অভীকের সবচেয়ে পছন্দের। তিনি বলেন, আমি সব সময় ভাবতাম কীভাবে আরও বেশি মানুষকে জানতে পারব, কীভাবে নানা সংস্কৃতির ধারণা পাব তা নিয়ে সব সময় ভাবতাম। কাজটা একটা অপশন। কাজের সঙ্গে আমাকে কেউ বেঁধে রাখেনি।’ নিউইয়র্ক শহরটা তাঁর পছন্দের এটা অন্যতম কারণ। এখানে তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে মেশার, তাঁদের জানার সুযোগ পেয়েছেন। এখন বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কাজ করতে চান অভীক। সুযোগ পেলেই তরুণদের পরামর্শ দেন।
প্রযুক্তিতে এখনো লিঙ্গ বৈষম্য রয়ে গেছে বলে মনে করেন অ​ভীক। তিনি বলেন, ‘আমি একটা উদ্যোগ নিয়েছে মেয়েদের আরও বেশি সফটওয়ার প্রকৌশল ও কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে যুক্ত করার জন্য। ব্ল্যাক গার্লস কোড–এর মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্যান ফ্রান্সিসকো ফুড ব্যাংকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি।’ 
অভীক গাঙ্গুলির বাবা হারাধন গাঙ্গুলি দীর্ঘদিন সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর বাইরে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। কর্মজীবনের শেষ দিনগুলো দৈনিক সংবাদ-এ কাজ করেছেন। মা তৃপ্তি সমদ্দার কর্মজীবনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।
২০১৪ সালে খুলনার মেয়ে পূজা ব্যানার্জির সঙ্গে বিয়ে হয় অভীক গাঙ্গুলির। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কর পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন, বাংলাদেশে টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান করেন।
mongsai79@gmail.com

Comments