থানছি-মিয়ানমার সীমান্তে অবহেলায় ৫০০পাহাড়ি পরিবার

বান্দরবানের থানছি উপজেলার রেমাক্রী ইউনিয়নে দূর্গম মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বিশটি  গ্রামে অন্তত ৫০০পাহাড়ি পরিবারের বাসিন্দারা মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে
উপজেলার ১নং রেমাক্রী ইউনিয়নের এবং ৯নম্বর ওয়ার্ডে বড় মদক বাজার থেকে প্রায় ৩৫কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা ¤্রংগং পাড়া, ¤্রংগং ত্রিপুরা পাড়া, নাসালাং পাড়া, যোগিরাম ত্রিপুরা পাড়া, ফোশৈউ পাড়া, চাইশৈউ পাড়া, অংগি পাড়া, জাপারাং পাড়া, চিঠিরাং পাড়া, আনং পাড়া, উসাথোয়াই পাড়া, ক্রাহ্লাঅং পাড়া, য়ংনং পাড়া, নারেসা পাড়া, চিংচং ¤্রাে পাড়াসহ বিশটি গ্রামে রয়েছে অন্তত ৫০০টি  নাগরিক অধিকার বঞ্চিত পাহাড়ি পরিবার
গত শনিবার সকালে এই প্রতিনিধিসহ এক দল সংবাদকর্মী  এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনকালে গ্রামবাসীদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এসব গ্রামে অধিকাংশ শিশুরা রক্ত শূন্যতা অপুষ্টিতে ভূগছে
স্বাস্থ্য সচেতন না হওয়ায় বছরে অধিকাংশ সময়ে অসূখ-বিসূখেও লেগে থাকে তারা। এখানে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সরকারি কোন কর্মসূচি পৌঁছায়নি। কেউ জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী-অস্থায়ী পদ্ধতির কথা জানে না
প্রধান মন্ত্রীর বিশেষ কর্মসূচিশেখ হাসিনার অবদান-কমিউনিটি ক্লিনিক বাঁচায় প্রাণএমন প্রচারনায় সারা দেশের নাগরিকরা  কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য সেবা পেলেও সেটিও এই এলাকায় নেই। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অত্রাএলাকার বাসিন্দারা সারা দেশের সাথে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা
শেখ হাসিনা জন বান্ধব  সরকারের সারা দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও কোন রকম সরকারি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এসব এলাকায়। চোখে-মুখে  দেখা যায়, তাদের অসহায়ত্বের জীবন যাত্রার চিত্র। সারা বছর অভাব-অনটন যেন তাদের পেছনে লেগে থাকে। তাদের ভাগ্য বদলাতে এবং আধুনিক মানব সভ্যতার ছোঁয়া ছড়িয়ে দিতে জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টির দাবিও জানাচ্ছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা
¤্রংগং পাড়ার গ্রাম প্রধান(কারবারি) ক্যশৈপ্রু মারমা বলেন, তাদের গ্রামের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। নেই স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা। আমরা পূরাতন পদ্ধতিতেই (খোলা পায়খানা) পায়খানা করি। আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত কোন স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। অসূখ-বিসূখ হলে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে নিতে হয় প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা
তিনি আক্ষেপে প্রশ্ন করেন, আমরা মৌলিক নাগরিক সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত কেন? আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নয়? অথচ নির্বাচন আসলেই ভোট নিতে আমাদের কাছে ছুটে আসেন অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। প্রতি শ্রুতি দিয়ে যান উন্নয়নের। নির্বাচনের পর আর দেখা মেলেনা তাদের। আমরা যেন বাংলাদেশের অনাথ সন্তান
¤্রংগং ত্রিপুরা পাড়া কারবারি মনিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, তার গ্রামে কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। স্যানিটেশনের সুবিধা নেই। স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত রয়েছেন তারা। বছরে একদিনও স্বাস্থ্য কর্মীরা এখানে আসেনা। কেউ অসুস্থ হলে বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে বেঁচে থাকি। না হয় জঙ্গলী ওষুধ সেবন করে থাকি। এখানে কোন সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীদের দেখা মেলেনা
এদিকে, উসাথোয়াই কারবারি বলেন, বাংলাদেশের ভূখন্ডের ভেতরে নাগরিক হয়েও আমরা নাগরিকের মৌলিক অধিকারসমূহ থেকে বঞ্চিত রয়েছি। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতেও এখানকার বাসিন্দারদের খেতে হয় হিমশিম
স্থানীয় বাসিন্দা মংক্যসা মারমা বলেন, এবছর  দুইশমন আদা পেয়েছিলেন ক্ষেত থেকে। কিন্তু নদী পথে থানছি বাজারে নেয়ার সময় নৌকা ভাড়া  ক্ষেত থেকে আদা তোলার মজুরি বাদ দিয়ে তিনি প্রতি মণ আদার দাম পান ৫০ থেকে ৬০টাকা। এতে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে
রেমাক্রী ইউপি সদস্য বাওয়াই মারমা জানান, স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত থাকায় এসব এলাকায় মাতৃত্বকালীন সময়ে অনেক প্রসূতি মাকে অকালে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। অসুস্থ হলে অনেকেই আদিম যুগের প্রথায় দেবতা পূজা দিয়ে থাকেন
রেমাক্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ঘেঁষা রেমাক্রী ইউনিয়নে এবং ৬নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রায় বিশটি গ্রামে অন্তত ৫০০টি পাহাড়ি পরিবার তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এসব এলাকায় নেই কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেই স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা। আধুনিকতার সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা অত্যন্ত দরিদ্র। তাদের অন্ন,বস্ত্র,স্বাস্থ্য,শিক্ষাসহ নাগরিক মৌলিক অধিকারসমূহ  নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ অংশৈপ্রু মারমা অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তাদের পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই দূর্গম অঞ্চলের বাসিন্দারদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে
mongsai79@gmail.com

Comments