ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধে খুশি ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধে খুশি দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স পেজে লাইক কিছুটা কমলেও এতে ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। উল্টো ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ায় ফেসবুকে অনলাইন বিজ্ঞাপন খাতে তাঁদের খরচ কমেছে।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেসবুকে ই-কমার্স পেজের প্রচারণার জন্য বিজ্ঞাপন দিতে একটি নির্দিষ্ট খরচ হয়। ফেসবুকে যত বেশিসংখ্যক ব্যবহারকারী একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখবেন, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানকে তত বেশি অর্থ গুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে খরচ ভুয়া ও প্রকৃত অ্যাকাউন্টের জন্য একই রকম।
অন্যদিকে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গত কয়েক দিনে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কারণে ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে, বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোট ইন্টারনেট ডেটার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফেসবুক ব্যবহারে খরচ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০০ জিবিপিএস (গিগা বিটস প্রতি সেকেন্ড) ইন্টারনেট ব্যান্ডউইটথ ব্যবহার হয়। এ হিসাবে ১০০ জিবিপিএস ডেটা ব্যবহৃত হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। গত ১০ দিনে ফেসবুকের মাধ্যমে এই ডেটা ব্যবহারে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহসভাপতি রেজওয়ানুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ই-ক্যাব এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। কারণ, ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফেসবুক বা ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের কখনোই তেমন ব্যবসা হতো না। নিজের মালিকানাধীন অনলাইনভিত্তিক টিকিট বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান বিডিটিকেটসের হিসাব দিয়ে রেজওয়ানুল বলেন, আগে বিডিটিকেটসের ফেসবুক পেজে ৬০ হাজার লাইক ছিল। এখন সেটা কমে ৫০ হাজারে নেমে এসেছে কিন্তু তাতে ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়েনি।
সফটওয়্যার খাতের জাতীয় সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বাগডুম ডট কমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, এটা ভালো হয়েছে, কারণ ভুয়া অ্যাকাউন্টের জন্য এখন বিজ্ঞাপনের খরচ করতে হচ্ছে না। এতে যারা প্রকৃত ব্যবহারকারী, তাদের আরও ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
ফেসবুক ১২ এপ্রিল এক বিবৃতিতে জানায়, ভুয়া অ্যাকাউন্ট ঠেকানোর কার্যকর উপায় হিসেবে ‘স্প্যাম অপারেশন’ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ অন্য কয়েকটি দেশ থেকে আসা ভুয়া লাইক ও মন্তব্য ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কত অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান ফেসবুক প্রকাশ করেনি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কাছেও এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। অনেক অ্যাকাউন্ট এর মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে যেসব প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ রয়েছে, গত ১০ দিনে তাদের ফেসবুক পেজে দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত লাইক কমে গেছে।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছেন। দেশে যত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহৃত হচ্ছে, এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই ফেসবুক।
mongsai79@gmail.com

Comments