পাহাড়ে দেশী-বিদেশী এনজিও এর সেচ্ছাচারিতা: মানছেনা সরকারের নির্দেশ!

চৌধুরী হারুনুর রশীদ, অতিথি প্রতিবেদক: পার্বত্যঞ্চলে দেশী-বিদেশী এনজিও গুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকার ফলে কোন ধরণের প্রশাসনিক নিয়মনীতি মানছে না । প্রশাসনিক ও প্রতিষ্ঠানিক সমন্ময় না থাকায় অনিময়ম দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে পার্বত্যঞ্চলে। স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার জন্য যে সব প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে তারা আবার স্থানীয় এনজিও। এসব এনজিও দায়সারা কর্মসুচী পালনের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি অনিয়মকে উৎসাহিত করেছে।
দুদক ও প্রশাসনিক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে বিগত ১০ বছরে এনজিও গুলোর কার্যক্রম তদন্ত করা হলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, সম্প্রতি ইউএনডি-জেলাপরিষদ যৌথ স্থাস্থ্যসেবার নামে হরিলুট করা হয়েছে। স্থানীয় এনজিও হিল ফ্লাওয়ার ভ্রাম্যমান স্থাস্থ্য ক্যাম্প দেখিয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকার অদৃশ্য প্রকল্পের আত্বসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে । দুপ্রক /দুদক প্রতিরোধ সপ্তাহ করলো সরকারী তথা সরকারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের নিয়ে । সনাক দুর্নীতি বিষয়ে সচেতন বৃদ্ধির জন্য কর্মসুচী করলো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে নিয়ে । কিন্তু এসব দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির বিষয়ে নিজেরা কতটুকু সচেতন তা জনগণের জিজ্ঞাসা ।
রাঙ্গামাটি শহরে পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য দেশী ও আন্তজার্তিক এনজিওকে নিয়ে প্রতিবছর রিংওয়েল-টিউবওয়েল ড্রেন কোনটা দৃশ্যমান নয়। বর্তমানে বনরুপা বাণিজ্যিক এলাকায় কাঠব্যবসায়ী সমিতির অফিসের নীচে ড্রেনেএবং অঘোষিত ত্রিদিব নগর বাজার মুখে দুগন্ধ পথচারীরা চলাচল করতে পারে না, মসজিদের সামনে খাজা মাকের্ট বাসা বাড়ীর ময়লা আর্বজনা রাস্তার উপর ফেলে জনগণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।
বনরুপা চৌমুহনীতে যানজট নিরসন করতে পৌরসভা সিএনজি ষ্টেশনসহ প্রধান সড়ক বড় করেছে! কিন্তু জানজট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে । এই বিষয়ে পৌরমেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন ,যানজট সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য পৃথক সিএনজি ষ্টেশন, যাত্রী ছাউনী, পুলিশ বক্্র নিমার্ণ করে রাস্তার প্রস্ত বড় করেছি । তারপরও কেন যানজট হয় আমার মাথায় আসে না ।
সিসিডিআর নামে স্থানীয় এনজিও শতাধিক গ্রাহকদের কাজ থেকে সঞ্চয় নিয়ে মেয়াদ উক্তীর্ণ হলেও পাওনা পরিশোধ করছে না ।এ বিষয়ে জেলা দুর্নীতি কমিশন,জেলা প্রশাসক ও থানায় অভিযোগ করে কোন ধরনের গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করেনি। পাশাপাশি পার্বত্য উদ্যেক্তা/বস্ত্র মেলার নামে প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন ৭০ হাজার টাকা ৯০ হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে । জিমনিশিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মেলায় স্থানীয় এনজিও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবছর আয়োজন দোকার বরাদ্ধ করে আসছে ।
রাঙ্গামাটি শহরে আজ পর্যন্ত কয়টি এনজিও নিবন্ধন করেছে তার সংখ্যা কত ! এসব এনজিও,র মধ্যে কতটির অস্থিস্ত আছে। এসব এনজিও বিগত দশ বছরে কার্যক্রমের উপর দুদকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ তদন্ত করা হোক । তাহলে প্রকৃত অর্থে তলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে । বেশ কিছু ্এনজিও ড্রেনেজ সেনিটেশন কার্যক্রম অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল ।
অপর দিকে প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সন্মনয় না থাকায় গত ১৬ মার্চ শহরের কলেজগেট মন্ত্রিপাড়া এলাকায় পাহাড় কেটে দখল করে অবৈধ পাকাবাড়ি নির্মাণকালে বাড়ির মালিকসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। তার ছয় মাস আগে গত বছর ৪ অক্টোবর শহরের মহিলা কলেজ রোড সংলগ্ন এলাকায় হ্রদ দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত একটি বহুতল ভবন কাপ্তাই লেকে ধসে গিয়ে তিন শিশুসহ ৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এভাবে জায়গা দখল করে নির্মিত স্থাপনা ঘিরে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা।
এছাড়াও ডিসি বাংলো এলাকা, রিজার্ভমুখ, মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকা, তবলছড়ি, আসামবস্তী, বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ফিশারি এলাকা, পাবলিক হেলথ, কলেজগেট,ফরেষ্ট কলোনী,ট্রাইবেল আদাম,কৃষি সম্প্রসারণ অফিস,বনবিভাগ, ভেদভেদীসহ গোটা শহরে জায়গা দখল করে তৈরি করা হচ্ছে অপরিকল্পিত ও অবৈধ স্থাপনা। গড়ে উঠছে বস্তি। এসব দখল ও অবৈধ স্থাপনা ঘিরে বাড়ছে জানমালের ঝুঁকি। তৈরি হচ্ছে মৃত্যুর ফাঁদ! এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শহরসহ রাঙ্গামাটিতে জায়গা দখল বন্ধে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানায় প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো: মানজারুল মান্নান বলেন, অবৈধ দখলদার যতই প্রভাবশালী হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবৈধ দখলে কাপ্তাই লেক এখন মারাত্মক দূষণের শিকার। এটাকে দূষণমুক্ত করতে হবে। লেকের পাড় ও জলমহালসহ অবৈধ দখলদার যেই হোক কেউ পার পাবে না। রাঙ্গামাটি শহরে অবৈধ স্থাপনা, লেকের পাড় ও জলমহালসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত অপরিকল্পিত, অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা ও বাড়িঘরের তালিকা প্রণয়নের জন্য পৌরসভাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তালিকা হাতে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি শহরে অনুমোদনবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা রয়েছে। যেগুলো অবৈধ ও অপরিকল্পিত। এসব ঘিরে যে কোনো সময় বড় ধরনের সম্পদ ও প্রাণহানির দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর ও স্থাপনাগুলো রাতারাতি উচ্ছেদ সম্ভব হবে না। এজন্য প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। উচ্ছেদের আগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা ক্রাইম প্রতিদিনকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পাড় অবৈধ দখলবাজদের কবলে যাচ্ছে। এ কারণে পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটি জেলার একদিকে যেমন দিনদিন তার সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি হ্রদের পানিও মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। তিনি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন।
রাঙ্গামাটি শহরে বনরুপা রাস্তায় মলমুত্র গন্ধে পথচারীরা চলাচল করতে পারে না । ফলে পরিবেশ অত্যন্ত লাজুক হয়ে উঠেছে ।এসব দেখভাল করার জন্য যেই সব এনজিও দায়িত্ব প্রাপ্ত তারা কিন্তু কিছু ঠিকাদার নিজের প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে কার্য্যদেশ বিধিবহির্ভুত ভাবে সাব-কন্টাক্ট এর মাশুল দিচ্ছে জনগণ । এতগুলি এনজিও কার্যক্রম করার পরও রাঙ্গামাটি পৌর শহরে কাপ্তাই লেকের বর্জ্য নিক্ষেপ,মলমুত্র,পয়নিস্কাসনে পরিবেশ দুষণ হয়ে পড়েছে । বিষাক্ত হওয়ার কারণে হ্রদের ব্যবহারের অনুউপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘধরে দেখে আসছি সিভিল সার্জনের কার্য্যলয়ে ্একজন অভিজ্ঞ সেনেটারী ইন্সপেক্টর / পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনেটারী ইন্সপেক্টর কাছে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে স্থায়ী সমাধান দিয়েছে । বর্তমানে শুস্ক মৌসুমে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় নিন্ম মানের বসানো রিং ফেটে গিয়ে মলমুত্র এলাকায় দুগন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে । বসবাস করা দুস্কর হয়ে পড়েছে । পরিবেশ মারাত্বক বিপর্যয় ।
উল্লেখ্য গত দুইবছর আগে বনরুপা ফরেষ্ট রোডে সৌর্ন্দয্য বৃদ্ধি ও পরিবেশ দুষণমুক্ত করতে পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যেগে রাস্তার পার্শ্বে ভাসমান দোকানগুলি উচ্ছেদ করা হয়। প্রশাসন স্থানীয় ব্যবসায়ী কর্তৃক প্রসংশীত হয়েছে।
বর্তমানে রাস্তার ওপর ফুটপাতসহ সৌর্ন্দয্য নষ্ট করে প্রচুর ভাসমান দোকান বসিয়ে সেখানে অবৈধভাবে বিদুৎ সংযোগ দেয়া হয় । স্থানীয় ব্যতীত অপরিচিত লোকজন দাড়িয়ে প্রসাব করতে দেখাগেছে।এতে কবরস্থানের পবিত্রতা /পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে।
mongsai79@gmail.com

Comments