রাজবন বিহার সহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মানহানি লজ্জিত সাধারণ জনগণ


রাংগামাটি প্রতিনিধি
২৪ এপ্রিল জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত" পার্বত্য এলাকায় নতুন অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় ‘ভাবনা কেন্দ্র’ শিরোনামে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ তথা বাংলাদেশের সকল বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মানহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সেখানে ভান্তেদের নামে কিছু মিথ্যা-বানোয়াট ও মুখরোচক তথ্য প্রকাশ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।  যা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একদিকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আর অন্যদিকে সকল ভান্তে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মানহানিকর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।

রাঙ্গামাটি থেকে "ফিরোজ মান্না" প্রতিবেদনে আরোপিত সংবাদে উল্লেখ ছিল ধর্মযাজক বা ভান্তে সেজে পাহাড়ীদের মধ্যে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে এইসব সন্ত্রাসী উগ্রপন্থী ভান্তেরা। সরকারের জায়গা দখল করে নাকি বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলছে ‘ভাবনা কেন্দ্র’ বা কিয়াং ? রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারে চলছে অস্ত্রের আমদানি ও জুডো ক্যারাতে প্রশিক্ষণ, এতে ২৫ হাজারের উপরে পাহাড়ী প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। 

এদিকে বান্দরবানের স্বর্ণমন্দিরের ধর্ম ধর্মযাজকদের বিরুদ্ধে একিই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে চলছে অস্ত্রের আমদানি আর চাইনিজ "কুম্পুর প্রশিক্ষণ"। বিশেষ নজরদারিতে কয়েক হাজার অনুসারি তৈরি করা হচ্ছে ইত্যাদি।তাদের রিপোর্টে দেখা যায় বৌদ্ধদের ধর্মীয় প্রধান গৌতম বুদ্ধকে ও সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এছাড়া রাঙ্গামাটি থেকে "ফিরোজ মান্না" রিপোর্টে বলা হয়েছে এসব মন্দিরে জনসাধারণের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধ বিধি বিদ্যমান থাকার কারণে জনগণ রাজবন বিহার সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন তীর্থ মন্দিরে তারা পাবলিককে ঢুকতে দিচ্ছেন না। 

পক্ষান্তরে, তার সমস্ত রিপোর্ট পড়ে জানা গেল প্রশিক্ষণ দাতা ভান্তেরা আরাকান আর্মী (এ এ)’, ‘আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’, ‘রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশন (আরওএস),’ আল ইয়াকিন’সহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী দলের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। যা কয়েকদিনের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ধর্মযাজকদের দখলে চলে আসবে। 

বিহার কর্তৃপক্ষ ও কিছু ভান্তের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, দৈনিক জনকণ্ঠে জ্ঞাপিত রিপোর্টটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট । তাদের নামে রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের কিছু উগ্র(সেটেলার সমর্থিত) সাংবাদিক প্রতিনিয়ত পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি মানুষদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে ও প্রকাশ্যে ধর্মীয়মর্যাদায় আঘাতহানিসহ নানান মুখরোচক তথ্য উপস্থাপন করে মিডিয়ার সামনে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে আমরা "অস্ত্র আমদানি ও ক্যারাতে" প্রশিক্ষণের সাথে জড়িত নয় । আমাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে ধর্মপ্রচার করা। 

রাঙ্গামাটি থেকে কয়েকজন ভদ্রলোকের সাথে এ ব্যাপারে প্রতিকার বিষয়ে পরামর্শ ও জানতে চাইলে, তারা জানান রাঙ্গামাটি নান্যাচর কলেজ ছাত্র নির্যাতনের রমেল চাকমার মৃত্যুকে নিয়ে মিডিয়ায় সামনে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক সেটেলারীয় বাঙ্গালি ও সাংবাদিক জনগণের মতকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। 

তাদের দেওয়া রিপোর্ট গুলি এক একটি সংবাদ ভিন্ন ভিন্ন টাইপের, ভিন্ন ভিন্ন টাইপ বলতে "কালের কন্ঠ" পত্রিকায় দিয়েছে একরকম আর "দৈনিক ইনকিলাবে" দিয়েছে আরেকরকম। সর্বশেষ ২৪ এপ্রিল "দৈনিক ইত্তেফাকে" প্রকাশিত পাহাড় থেকে গড়িয়ে সে রাস্তায় বেবিট্যাক্সির সামনে এসে পড়ে, আর তাতেই এমন আহত হয় যে সেই আঘাতে তার শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় এমন সংবাদ তারা উপস্থাপন সহ গোটা জনসাধারণের মতকে ভিন্ন প্রভাবিত করার বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

এছাড়া কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মুলত এই প্রতিবেদনকারীগুলো রমেল চাকমার মৃত্যুকে কিভাবে জনগণের মতকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্নখাতে তার  মৃত্যুর বিষয়টি উপস্থাপনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভাবমুর্তি কিভাবে ক্ষুণ্ণ করা যায় সেজন্য তারা অহরহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন অনলাইন সাইটে অপপ্রচার করতে উঠে পড়ে লেগেছে এমনই অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের।

তারা অভিযোগ করে বলেন, রাজবন ও বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির হচ্ছে বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র স্থান। এটা কোন পাবলিক জায়গা নয় । এখানে ধর্ম শিক্ষাসহ ধর্মীয়াচার বিধি পালন করা হয়ে থাকে। রাজবন বিহারের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে গতবছর রাজবন বিহার ও স্বর্ণমন্দির  কয়েকদিন প্রবেশের ঠিকই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু তা আবার কয়েকদিন পর খুলে দেওয়া হয়েছে।যে কারণে বন্ধ ছিল সেটার মুখ্য সমস্যা হচ্ছে বিহারে পবিত্রতা নষ্ট করা,জুটা-সেন্ডেল পায়ে প্রবেশ,টুপি মাথায় মুর্তির সামনে দাড়িয়ে,যেখানে সেখানে উচ্চস্বরে কথা বলা,প্রকাশ্যে বিহারের আশপাশে সিগারেট ও নেশাদ্রব্য সেবন করা ইত্যাদি অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য স্রেফ কয়েকদিন বিহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। 

তাহলে কারা পবিত্রটা নষ্ট করে জানতে চাইলে জানান, দুর দুরান্ত বিভিন্ন দেশী-বিদেশী আগত পর্যটক ও দর্শণার্থী অকস্মাৎ এসে ধমীর্য় পবিত্রার নীতি না জেনে অজ্ঞাতে তারা এসব কাজ করে ফেলেন। এতে ধর্মীয় নীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে । কিন্তু কোন আগত পর্যটককে কখনো প্রকাশ্যে গালাগালি করা হয়নি। বিহারে পবিত্রটা বজায় থাকার জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা সহ কাগজে ছাপানো তথ্য বিহারে দেয়ালে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।এতে অনেকে নজরকেড়ে আগেবাগে নিজ দ্বায়িত্বে সজাগ হয়ে নেন।

এদিকে ফিরোজ মান্না রিপোর্টে "জনকণ্ঠে" প্রকাশিত সংবাদে তীব্র নিন্দা ও লজ্জিত প্রকাশ করেছেন পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীসহ তথা সমগ্র বাংলাদেশের বৌদ্ধ অনুসারী। এছাড়া রিপোর্ট এর নিচে প্রতিবাদ করতে ও দেখা যায়।
mongsai79@gmail.com

Comments