পাহাড়ে জুম্মোদের উপর সেনাবাহিনীর চলমান অমানুষিক দমন পীড়ন নির্যাতনের পরিণতিতে আজ মৃত্যু হল রোমেল চাকমার। সে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী এবার তাকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। দেয়নি স্বাভাবিক জীবনের অধিকার। কেড়ে নিল তার জীবন প্রদীপ। তার অপরাধ - সে পাহাড়ের নিপীড়িত জুম্মো জনমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। সে নিয়ত লড়ে যায় নিজের, দেশ, দশের, সমাজের শান্তির জন্য। সে লড়ে অধিকারের জন্য, মুক্তির জন্য।
তার অপরাধ - সে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিসিপির একজন উদীয়মান কর্মী ছিল। সে পাহাড়ের আপামর জনমানুষের উপর বাঙালি আধিপত্যবাদী শাসক শ্রেণির দমন পীড়নকে মানে না। সে প্রতিবাদ করে শাসকের অন্যায়ের, অত্যাচারের। সে প্রতিরোধ করতে চায় শাসকের জুলুমের। সেটাই কাল হল তার, তার পরিবারের, জুম্মোদের, বিশ্বের শোষিত নিপীড়িত সকল জনমানুষের। আজ আমরা তাকে হারালাম। তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে সরকার পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত করেছিল ১৯৯৭ এ, সে সরকার জারি রেখেছে পাহাড়ে ১১ দফা সম্বলিত সামরিক আইন। যে আইনের বলি হল আজ রোমেল চাকমা।
প্রকৃতপক্ষে রোমেল চাকমা বলি হয়নি। হয়েছে এ দেশের মানবতা, বিপন্ন বিশ্ব মানবাধিকার। রোমেল চাকমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আজ আমরা হারালাম আরেকজন প্রতিবাদীকে, লড়াইকারীকে। বাঙালিরা হারাল নিজের মর্যাদাবোধকে। তারা কলঙ্কিত হল বিশ্ব মানব সমাজে। তারা ধিকৃত হল জুম্মোদের কাছে, বিশ্বমানবতার কাছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এভাবে রোমেল চাকমাকে পরিকল্পিত হত্যার মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণ করল পাহাড়ে তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে আসেনি। এসেছে বাঙালীর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আগ্রাসন চালাতে, আধিপত্য কায়েম করে সবকিছু নিজেদের করে নিতে।
তাদের মনে রাখা উচিত- রোমেল চাকমার মৃত্য পাহাড়ের মুক্তিকামী লড়াইকারীদের পিছু হটাতে পারবে না। বরং আরো ঐক্যবদ্ধ করতে, শক্তিশালী লড়াই সংগ্রাম পরিচালনায় প্রেরণা যোগাবে। সেটাই আধিপত্যকামী শক্তির পরাজয়ের নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াবে।
রোমেল চাকমার মৃত্যু হয়ে উঠুক পাহাড়ে সেনাশাসন অবসানের এক অগ্নিস্ফূলিঙ্গ। জয় হোক মেহনতি মানুষের মুক্তি চেতনার।
পলঙ চাঙমা
১৯.০৪.২০১৭
১৯.০৪.২০১৭
ফটো: সংগৃহীত। রোমেল চাকমার মৃতদেহ, যেভাবে ফেলে রাখা হয়েছে চমেক হাসপাতালে!
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment