অাবারও গণআতঙ্কে আক্রান্ত প্রত্যন্ত একটি ত্রিপুরা গ্রামের বাসিন্দারা

গুইমারায় অজ্ঞাত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে, মেডিকেল টিম গঠনকয়েক বছর আগে একই ধরণের রোগে আক্রান্ত হয়ে একটা গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবতাবাদী সংগঠনের সক্রিয়তায় সেবার বেঁচে গুইমারা পাড়া নামের একটি অনুন্নত এবং আধুনিক জীবন থেকে বহু দূরে বাস করা গ্রামটির বাসিন্দারা।
গতকাল আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে তৈ মাতাই নামের অপর এক গ্রামে, যার অবস্থানও গুইমারা পাড়ার খুব সন্নিকটে।
গেলবারের রোগের লক্ষণ ছিল- কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে তার মনে হয় গা কেমন কেমন করে উঠছে, পরক্ষণে চুলকানি বা সে রকম কিছু, তারপর লোকটি হয় চিৎকার করে কান্নাকাটি করে নতুবা উচ্চস্বরে অস্বাভাবিকভাবে হাসতে শুরু করে। এবারের রোগের লক্ষণও অনেকটা একই ধরণের হলেও আরেক ধাপ এগিয়ে। গতবারের রোগীদের মাঝে সহিংসতা দেখা যায়নি। এবারের রোগিরা হাসি-কান্নার পাশাপাশি হাতের কাছে দা-লাঠি-ঢিল যা কিছু পাওয়া যায় তা দিয়ে এলাপাতাড়ি অন্যের দিকে নিক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।
গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ এখন এই রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্য হতে ছয়জন সিরিয়াস রোগিকে ধরাধরি করে আনে ঘটনা পরিদর্শনে যাওয়া টিএসএফ-এর কর্মীরা। তারা মাত্র নয়জন মানুষ এই অসাধ্য সাধন করার জন্য সেখানে গিয়েছিল। তাদের কর্মতৎপরতা দেখে তাদের সাথে হাত লাগায় গ্রামের শক্ত সমর্থ পুরুষেরা। আক্রান্ত রোগিদের দুধের শিশু ও আদরের কিশোর-কিশোরীরাও তাদের মা-বাবাদের সাথে আসে কেউবা গাড়ি রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে, কেউবা ঘরে একা হয়ে যাবে বলে। আসতে আসতে মাঝ রাস্তায় আরো কিছু সুস্থ মানুষ চিৎকার করে কেউবা কাঁদতে থাকে, কেউবা হাসতে থাকে। শেষে এলোপাতাড়ি দৌড়াতে থাকে। তাদেরকেও ধরাধরি করে আনা হয়। এভাবে ছয় কিলোমিটারের অধিক পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে গাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে আরো কয়েকজন আক্রান্ত হয়। হাসপাতালে পৌঁছার পর দেখা যায়, রোগির সংখ্যা ১৪। ছয়জনকে ধরাধরি করে আনতে গিয়ে আরো আটজন গ্রামবাসী আক্রান্ত হয়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে হাসপাতালে ভর্তি করার পর রোগিদের সাথে আসা আরো একজন আক্রান্ত হয়। ফলে এখন খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে রোগি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫জন। গ্রামে রয়েছে আরো কমপক্ষে ৩৬জন। আগামীকাল যদি জরুরি ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে মেডিক্যাল টিম পাঠানো সম্ভব না হয়, তাহলে প্রাণাহানি পর্যন্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। (সদয় মনোযোগ আকর্ষণ- Bikram Kishore Tripura স্যার, এমপি স্যার ও Kongjari Chowdhury স্যার)
রোগিদের ভর্তি করানোর পর সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেতাকর্মীরা রোগিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন, ডেকচিতে করে সরবরাহ করেছেন রাতের খাবার। আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই কমরেডগণ।
আজ সকাল সকাল খবরটি কৃষ্টি চাকমার (Kristi Chakma)মারফতে এফবি’র ইনবক্সে পাওয়ার পর দ্রুত ছাত্র-যুবদের সংগঠিত করে একটি গাড়ি রিজার্ভ করে ঘটনাস্থলে পাঠাই। এ কাজে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান বাবু কংজরী চৌধুরী মহোদয় (Kongjari Chowdhury Kongjari Chowdhury) এবং সম্মানীত সদস্য বাবু খগেশ্বর ত্রিপুরা মহোদয়কে (Khogeshwr Tripura) অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। খবর পাওয়ার সাথে সাথে ছুটে এসে যেসব ছাত্র-যুব নেতৃত্ব ঘটনাস্থলে যাওয়ার দলে যোগ দিয়েছেন, তাদের সকলকে অভিনন্দন। ধন্যবাদ জানাই সেই ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বারকে। তিনিও সেই দলে এসে যোগ দিয়েছেন। ধন্যবাদ কৃষ্টি চাকমাকে, আপনি ইনবক্স না করলে ঘটনাটি জানতে কিছুটা হলেও দেরি হতো। কারণ আমি অফিস সময়ে পারতঃপক্ষে ফেইসবুক দেখি না।
স্যালুট জানাই সেসব প্রানচঞ্চল ছাত্র-যুবদের যারা এই আক্রান্ত রোগিদের পাঁজাকোলো করে সেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রায় ৬/৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মাতাই তুয়ারি (মতান্তরে পুখির) এলাকা পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। কারণ থলি পাড়ার পর আর গাড়ি যাওয়ার কোন রাস্তা নেই, তাই পায়ে হেঁটে ঘটনাস্থলে পৌঁছা ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায় ছিল না।
জয় ও যদুর মুঠোফোনের ক্যামেরা থেকে কিছু ছবি মন্তব্যের (comment) ঘরে দিচ্ছি।


mongsai79@gmail.com

Comments