সাবেক কর্মী হিসাবে আমি ক্ষমা চাইছি ,জনকন্ঠতো আপনাদেরই পত্রিকা: ফজলুল বারী প্রকাশিত: ২০১৭-০৪-২৯ ১০:৪৪:৪২
রিপোর্টটি যে করেছে সেই ফিরোজ মান্না আমার খুব প্রিয় একজন। এক সময় টাঙ্গাইলে যখন রিপোর্ট করতে যেতাম সেখানে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। মান্না তখন জনকন্ঠের হয়ে কাজ করতো টাঙ্গাইলে। অনেক কষ্টের ক্যারিয়ার তার। কিন্তু এই রিপোর্ট মান্না'র সঙ্গে মিলেনা। তার এই রিপোর্টটি পড়ে দূঃখ পেয়েছি।
রিপোর্টটি নিয়ে আমি আজ জনকন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়'র সঙ্গে কথা বলেছি। রিপোর্টটি নিয়ে তিনিও বিশেষ বিব্রত-মর্মাহত। এই রিপোর্টে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে গালগল্প বেশি। দীর্ঘদিন পাহাড়ে রিপোর্ট করাতে সেখানকার নানা কাঠামো আমি জানি। পার্বত্য চট্টগ্রামের গোয়েন্দা সূত্র মানে কোরান বা বাইবেল না। সেখানকার এসবের কাঠামোটাই পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই'র গড়া। এখনও এর তেমন পরিবর্তন হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘদিনের বড় দুটি সমস্যা শান্তি বাহিনী আর শরণার্থীদের ভারত থেকে দেশের সীমান্তের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনা নিয়ন্ত্রিত গোয়েন্দা সংস্থা তখনও এর বিরুদ্ধে, পাহাড়িদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করাতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে বিশেষ ঘরানার সাংবাদিকদের পাহাড়ে নিয়ে যেত। শান্তি চুক্তি হয়ে গেছে, তখনও মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এক শ্রেনীর সেনা কর্মকর্তারা আমাদের বোঝাতেন, এই শান্তি চুক্তি করা ঠিক হয়নি। তখন মুখের ওপর বলতাম শান্তি বাহিনী ভারতে থাকাটা খুব ঠিক ছিল তাইনা? ওদের দেখিয়ে বেশি বেশি বাজেট বরাদ্দ করাতেন! তখন তারা চুপ মেরে যেতেন।
এক সময় পাহাড়ে সাংবাদিকতা-প্রেস ক্লাব এসব তদারকি-প্রতিষ্ঠার নেপথ্যেও সেনাবাহিনী-গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জড়িত ছিল। আজ পর্যন্ত যে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। এর নেপথ্যেও তারা। এরা নানান সময়ে নানান জুজুর ভয় ছড়ায়। কাজেই পাহাড়ে যে কারও রিপোর্ট করতে এসব মাথায় রাখলে ভালো। আর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্টেতো সব পক্ষের বক্তব্য থাকতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থার কথিত রিপোর্ট কোন অবস্থাতে অনুসন্ধানী রিপোর্ট হতে পারেনা। জঙ্গীদের নিয়েও নিয়মিত ব্রিফিং হয়। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে এতো বড় কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়ে সরকার কোন ব্রিফিং করবেনা এটা কি করে বিশ্বাসযোগ্য?
বাংলাদেশের আর সব সম্প্রদায়ের মতো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ও দেশের আইনানুগ জনগোষ্ঠী। তারাও দেশকে ভালোবাসেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদ যেমন দেশের মুসলমানদের ভালোবাসার শ্রদ্ধা-জায়গা পাহাড়ের বৌদ্ধ মন্দিরগুলোও তাই। হযরত মোহাম্মদ(দঃ) যেমন মুসলমানদের শ্রদ্ধার, গৌতম বুদ্ধও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে সমান শ্রদ্ধার। আমি বা আমরা কেউ একটি সম্প্রদায়ের মন্দিরসমূহকে ঢালাও প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্যে জর্জরিত করতে পারিনা। জনকন্ঠের মতো পত্রিকার পাতায়তো তা অবিশ্বাস্য। পাহাড়ি যে সব বন্ধু রিপোর্টটিতে ক্ষুদ্ধ-মর্মাহত হয়েছেন, জনকন্ঠের একজন সাবেক কর্মী হিসাবে সে জন্যে ক্ষমা চাইছি। কারন জনকন্ঠতো আপনাদেরই পত্রিকা।
Comments
Post a Comment
Thanks for you comment