কোয়ান্টাম`র দখলে উপজাতিদের ২ হাজার একর ভূমি










 বান্দরবানের লামায় রাবার ইন্ডাস্ট্রিজসহ তিন প্রতিষ্ঠানের নামে পাহাড়িদের চার হাজার একর জমি অবৈধভাবে দখল করে রাখার অভিযাগ উঠেছে। পাহাড়ে এই চার হাজার একর ভূমি নিয়ে কী হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে শনিবার লামায় যেতে চেয়েছিল জাতীয় পর্যায়ের একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল। কিন্তু তাদের সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।
শনিবার সকালে বান্দরবানের রেইছা এবং দুপুরে লামা উপজেলার ইয়াংছায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন তাদের বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা। তারা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

বান্দরবানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি নাগরিক প্রতিনিধি দলকে

 পাহাড়ে চার হাজার একর ভূমি নিয়ে কী হচ্ছে

নাগরিক প্রতিনিধি দলে ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান ও মানবাধিকারকর্মী রওশন মাসুদা। এ ছাড়া আইনজীবী এবং সাংবাদিকরাও ছিলেন এই প্রতিনিধি দলে।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় দুটি বাস নিয়ে লামা উপজেলার ইয়াংছা এলাকায় পৌঁছান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এ সময় ইয়াংছা ক্যাম্পের সামনের সড়কে বাঁশের ব্যারিকেড দেখতে পান প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ওপরের নির্দেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইয়ুন লগ মুরং ও জামাল উদ্দিন নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তিকে ইয়াংছা বাজার এলাকায় যানবাহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা যায়। সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এতে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা কয়েক হাজার লোক দুর্ভোগে পড়েন।













যানবাহন চলাচলে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি জানি না। আমাদের নেতা ইয়ুন লগ মুরং জানেন।’ ইয়ুন লগের কাছে কিসের দাবিতে অবরোধ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমিও জানি না। আমি এখন আলী কদম থেকে আসছি।’ যানবাহন চলাচলে কেন বাধা দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়  বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। মুরং জনগোষ্ঠীর লোকজন সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে অবরোধ ডেকেছিল। তাই লামায় গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল।’
ম্রো স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বান্দরবান জেলার সভাপতি রেংচং ম্রো বলেন, ‘আমাদের সংগঠন বা জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অবরোধ বা অন্য কোনো কর্মসূচি ছিল না।’













প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর লামার ইয়াংছা থেকে ফিরে আসেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বান্দরবানের রেইছা চেকপোস্টে পৌঁছান তারা। সেখানেও তাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। রেইছা ক্যাম্পের ৫০ গজ দূরে রেইছা বাজারে অপেক্ষা করতে বলেন চেকপোস্টে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ওপরের নির্দেশে নাগরিক প্রতিনিধি দলের গাড়ি যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান তারা। গাড়ি ফেরার পথে রেইছা বাজারে পৌঁছালে একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক গাড়ির দিকে তেড়ে আসে। প্রতিনিধি দলকে দ্রুত বান্দরবান ত্যাগ করতে হুমকি দেয় তারা। পরে ফিরে আসে নাগরিক প্রতিনিধি দল।
বান্দরবান থেকে ফিরে এসে চট্টগ্রামে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দেড় হাজার একর, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন দুই হাজার একর ও স্বঘোষিত সন্ত্রাসী লাদেন বাহিনী ৫০০ একর জুম্ম জনগোষ্ঠীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করেছে। আমরা সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য সরেজমিন দেখতে বান্দরবান গিয়েছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন আমাদের ঢুকতে দেয়নি। বাধা দিয়েছে। কেন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তারও কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বিষয়টি উদ্বেগজনক।’










এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন  বলেন, ‘কোনো প্রতিনিধি দল বান্দরবানে এসেছে এ ধরনের তথ্য আমাদের জানা নেই। সুতরাং বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বান্দরবানে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক আসছেন। আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া।’
রোববার বান্দরবান জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সার্কেল চিফের সঙ্গে নাগরিক প্রতিনিধি দলের আলোচনায় বসার কথা ছিল। সেখানে যেতে না পারার বিষয়টি নিয়ে রোববার বিকেল ৩টায় ঢাকায় রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ওই প্রতিনিধি দল।
mongsai79@gmail.com

Comments